জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন প্রবাসীরা

বাংলাদেশি নাগরিক যারা বিদেশে বসবাস করেন, তারা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। এ ব্যাপারে একটি নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। গত ৩০ নভেম্বর কমিশনের যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান স্বাক্ষরিত স্মারকপত্রে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে আসন্ন নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন প্রবাসীরা। অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন এক বার্তায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রেরিত বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওই স্মারকপত্রটি প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের এই স্মারকপত্রে বলা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে প্রবাসীরাও রয়েছেন। তাই প্রবাসী বাংলাদেশিদের আবেদনের ভিত্তিতে রিটার্নিং অফিসার প্রবাসীদের আছে ডাকযোগে পোস্টাল ব্যালট প্রেরণ করবেন। প্রবাসীরা সেই পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদান করে তা আবার রিটার্নিং অফিসারের কাছে ফেরত পাঠাবেন। একজন প্রবাসী বাংলাদেশের যে এলাকার ভোটার, তিনি সেই সেই এলাকার হয়েই ভোট প্রদানের সুযোগ পাবেন। এ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ পৃথক ও স্বতন্ত্র। সেই সঙ্গে পোস্টাল ব্যালট আদান-প্রদানের ডাক মাশুল খরচ প্রবাসী ভোটারকেই বহন করতে হবে। এর কারণ হিসেবে স্মারকপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যেহেতু আন্তর্জাতিক বিধানমতে ডাকমাশুল আদায় স্ব স্ব দেশের আওতাভুক্ত, তাই নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের পক্ষে বৈদেশিক মুদ্রায় বিভিন্ন দেশের ডাকমাশুল পরিশোধ করা সম্ভব নয়।’

প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগে নির্বাচন কমিশনের আদেশের কথা জানিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) ও চ্যান্সারি প্রধান ফরিদা ইয়াসমীন বলেন, ‘আমরা নির্দেশনা পেয়েছি সার্কুলার প্রকাশ করার। এর বাইরে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।’

দীর্ঘদিনের দাবিদাওয়ার পর প্রবাসীদের ভোট প্রদানের আবেদন নির্বাচন কমিশন আমলে নেওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে। প্রবাসীদের ভোট গ্রহণে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশের খবরে আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে। দেশের নির্বাচনে প্রবাসীদের অংশ নেওয়ার ইচ্ছার কথা সরকার পক্ষ আমলে নিয়েছে বলে আনন্দ প্রকাশ করেন অনেকেই। বিষয়টিকে সরকারের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগের একটি ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছেন প্রবাসীরা। তবে বিষয়টিকে সুখবরের পাশাপাশি নিরাশা হিসেবেও দেখছেন অনেকেই। তারা বলেন, ভোটাধিকার প্রয়োগের খবরটা আনন্দের, তবে এর যথোপযোগী কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এত কম সময়ের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট প্রদান একটি সময়সাপেক্ষ এবং প্রায় অবাস্তব।

সিডনিপ্রবাসী ফাখরুজ্জামান লেনিন এ বিষয়ে বলেন, আমরা আনন্দিত এটা জেনে যে, সরকার প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের ইচ্ছার কথা আমলে নিয়েছে। তবে একই সঙ্গে আমাদের আশার আলো জ্বলেও নিভে গেল এ জন্য যে, এই পদক্ষেপটা মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। আমরা জানি, প্রবাসীদের ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়াটি একটি জটিল। প্রবাসীরা শুধু দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মার্কাতেই ভোট দিয়ে দিল বিষয়টি এতটা সাধারণ নয়। তাই সরকারের একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করার প্রয়োজন ছিল।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের স্মারকপত্র
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের স্মারকপত্র

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেলবোর্ন প্রবাসী একজন সরকারের এ পদক্ষেপে খুশি হয়েছেন জানিয়ে বলেন, ‘তবে উদ্যোগটি বাস্তবসম্মত না হওয়ায় প্রবাসীদের জন্য এখনই ফলপ্রসূ হবে না। তিনি আরও বলেন, তবুও শুরুটা যেহেতু হয়েছে, আশা করছি ভবিষ্যতে সরকার আরও বাস্তবিক কোনো পরিকল্পনা করবেন আমাদের জন্য।’

বাংলাদেশের নির্বাচনে ভোট প্রদানের ইচ্ছার কথা বহু বছর ধরেই জানিয়ে আসছিলেন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিরা। এ নিয়ে নানা সময়ে বিভিন্ন উপায়ে নিজেদের দাবি সরকারে কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করে প্রবাসীরা। সরকারের বিভিন্ন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি অস্ট্রেলিয়া সফরে এলে তাঁদের কাছেও নিজেদের অধিকার আদায়ের কথা জানিয়েছেন প্রবাসীরা। সরকারও বিভিন্ন সময়ে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগ বাস্তবায়িত করার আশার বাণী শুনিয়ে আসছে বহু বছর ধরেই। এরই ধারাবাহিকতায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার কথা জানায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন।


আরও পড়ুন: