অস্ট্রেলিয়ায় নতুন এলে কী করতে হয়

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

বিশ্বের অভিবাসীদের গন্তব্যের অন্যতম শীর্ষ দেশ অস্ট্রেলিয়া। দেশটিতে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ প্রবাসী হয়ে বসবাস শুরু করেন। তবে নতুন দেশের রীতি-নীতি আর করণীয় নিয়ে প্রথম দিকে অজানা থাকে অনেক কিছুই। সময়ের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বাড়ে। তবে সাধারণ কিছু বিষয়ের ধারণা থাকলে সেই অজানা অনেকটা সহজ হয়। অস্ট্রেলিয়ায় আসা নতুন স্থায়ী-অস্থায়ী অভিবাসীদের জন্য তেমন কিছু তথ্য থাকছে এই ধারাবাহিক লেখার আজকের অংশে।

অস্ট্রেলিয়ার ভিসা যারা পেয়েছেন কিংবা কোনো ভিসায় আবেদন করেছেন, তারা ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য জেনে নিয়েছেন। প্রায় ৩০ লাখ বর্গমাইলের এই দেশটি গোটা ইউরোপের চেয়েও বড়। দেশটির অন্যতম শহর সিডনি ও মেলবোর্ন প্রতিবেশী দুটি রাজ্যের রাজধানী হওয়া সত্ত্বেও শহর দুটির দূরত্ব প্রায় বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার চেয়েও বেশি। অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করার শুরুতেই বেশ কিছু অতীব জরুরি করণীয় থাকে নতুন অভিবাসীদের। তেমন কয়েকটি বিষয়ের প্রাথমিক ধারণা থাকছে আজ।

অফলাইন ম্যাপ। সংগৃহীত
অফলাইন ম্যাপ। সংগৃহীত

অফলাইন ম্যাপ

যেকোনো নতুন জায়গায় যাওয়ার আগেই সেখানকার সাধারণ অবস্থান জানা থাকা ভালো। আর নতুন দেশ হলে তো বিষয়টি খুবই জরুরি। অস্ট্রেলিয়ায় আসার আগে বা পরপরই স্থানীয় এলাকার ম্যাপ আপনার স্মার্টফোনে নামিয়ে রাখুন। এ ক্ষেত্রে গুগলের অফলাইন ম্যাপের চেয়ে উত্তম আর কিছু নেই। অস্ট্রেলিয়ার যে রাজ্যে বসবাস করবেন সে রাজ্যসহ, যে শহরে বাস করবেন তারও একটা ম্যাপ ডাউনলোড করে রাখুন। অস্ট্রেলিয়ায় পথ চলতে আপনাকে বন্ধুর মতো সাহায্য করবে এই অফলাইন ম্যাপ।

ফোন ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক প্যাকেজ। সংগৃহীত
ফোন ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক প্যাকেজ। সংগৃহীত

ফোন ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক প্যাকেজ

অস্ট্রেলিয়ায় এসে প্রথমেই একটা সিম কার্ড নিয়ে নিন। সাধারণত বিমানবন্দরে নেমেই পাওয়া যাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সিম কার্ড ক্রয়ের স্টল। অস্ট্রেলিয়ায় অপটাস, ভোডাফোন, টেলস্ট্রা, লাইকা ও লিবারা ইত্যাদি বেশ কয়েকটি টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পছন্দের একটা কিনে ফেলুন। তবে সিমকার্ড যে প্রতিষ্ঠানেরই হোক না কেন, টকটাইম, এসএমএস ও ইন্টারনেট এই তিনের প্যাকেজ একসঙ্গে কিনে ব্যবহার করুন। একটু ঘেঁটেঘুঁটে সুবিধাগুলো জেনে নিন। অস্ট্রেলিয়ায় কলরেট কিংবা ইন্টারনেটের দাম মোটেও সস্তা নয়। আর দেশের বাইরে কল করলে দাম কত বিশেষভাবে জেনে নিন। কারণ পরে বড় আকারের বিল দিতে হতে পারে।

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। সংগৃহীত
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। সংগৃহীত

ব্যাংক অ্যাকাউন্ট

অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করতে হলে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা জরুরি। আপনি চাইলে ভিসা মঞ্জুর হওয়ার পর দেশে বসেই অনলাইনে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে নিতে পারেন। এ জন্য অস্ট্রেলিয়ার কোনো বাসার ঠিকানার প্রয়োজন নেই। অনলাইনে ভিসা সংক্রান্ত তথ্য দিয়ে আবেদন করে রাখা যাবে। এমনকি আপনি চাইলে ব্যাংক একটি ডেভিড কার্ড আপনাকে কুরিয়ার করে পাঠিয়ে দেবে। কাজটি অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছেও করা যাবে তবে করতেই হবে। ব্যাংকে গিয়ে পাসপোর্ট দিয়েই খোলা যাবে নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। অস্ট্রেলিয়ার প্রধান ব্যাংকগুলোর মধ্যে কমনওয়েলথ ব্যাংক, ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ব্যাংক, ওয়েস্টপ্যাক ও এএনজেড ব্যাংক ইত্যাদি অন্যতম।

ট্যাক্স ফাইল নম্বর। সংগৃহীত
ট্যাক্স ফাইল নম্বর। সংগৃহীত

ট্যাক্স ফাইল নম্বর

কর্মের জন্যই বেশির ভাগ অভিবাসী অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। তবে কারণ যা–ই হোক, অস্ট্রেলিয়ায় কাজের মজুরি পেতে হলে আপনার চাই অস্ট্রেলিয়ান ট্যাক্স ফাইল নম্বর (টিএফএন)। টিএফএন হলো অস্ট্রেলিয়ার কর বিভাগ প্রদত্ত আপনার করের হিসাব নম্বর। টিএফএনের মাধ্যমে আপনার আয় করা অর্থ থেকে সরকারের নির্ধারিত কর প্রদান আপনার হয়ে প্রদান করে দেবে আপনার প্রতিষ্ঠান। অস্ট্রেলিয়ার কর বিভাগের ওয়েবসাইটে <www.ato.gov.au> টিএফএন পাওয়ার পদ্ধতি দেওয়া রয়েছে।

যাতায়াতে ডিজিটাল কার্ড। সংগৃহীত
যাতায়াতে ডিজিটাল কার্ড। সংগৃহীত

যাতায়াতে ডিজিটাল কার্ড

অস্ট্রেলিয়ায় এসেই গাড়ি কেনা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই দেশটির অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও সময়ানুবর্তী গণপরিবহনই বেশির ভাগ নতুন অভিবাসীদের প্রধান যাতায়াত মাধ্যম। তবে এই বাস বা ট্রেনে চেকার এসে আপনার টিকিটও চেক করবে না বা ভাড়াও চাইবে না। ভাড়া আপনাকেই নিজ দায়িত্বে দিতে হবে। সেটা একটি ডিজিটাল পাস কার্ডের মাধ্যমে। মেলবোর্নে এই কার্ডকে মাইকি পাস বলে। সিডনিতে প্রচলিত রয়েছে ওপাল কার্ড। কুইন্সল্যান্ডের প্রায় সব শহরেই এই কার্ডের নাম গো কার্ড। অন্য আরও কার্ড রয়েছে সেটা নির্ভর করে আপনি অস্ট্রেলিয়ার কোথায় বাস করেন। অনেকটা ডেভিড কার্ড আকৃতির এই পাস কার্ডের বিষয়টা প্রায় ফ্লেক্সিলোডের কার্ডের মতো। প্রায় সব খুচরা দোকানেই পাওয়া যায় এই পাস কার্ড। আপনি গণপরিবহনে ওঠার সময় কার্ড ডিজিটাল মেশিনে ছুঁয়ে দিয়ে উঠবেন আবার নামার সময় একই কাজ করবেন। ব্যস, আপনার গন্তব্য অনুযায়ী ভাড়া আপনা থেকেই পরিশোধ হয়ে যাবে।

মেডিকেয়ার অথবা প্রাইভেট স্বাস্থ্য বিমা। সংগৃহীত
মেডিকেয়ার অথবা প্রাইভেট স্বাস্থ্য বিমা। সংগৃহীত

মেডিকেয়ার অথবা প্রাইভেট স্বাস্থ্য বিমা

অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশের যেকোনো ভিসায় দেশটিতে স্বাস্থ্য বিমা থাকা আবশ্যক। আর অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করেও এই স্বাস্থ্য বিমার কথা ভুলে গেলে বিপদ। যাঁরা স্থায়ী ভিসায় আসবেন তাঁরা অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস শুরুর এক দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশটির জনস্বাস্থ্য বিভাগে নিবন্ধন করবেন মেডিকেয়ারের জন্য। আবেদনের এক মাসের মধ্যেই মেডিকেয়ারের একটি কার্ড দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। প্রতিবার চিকিৎসা গ্রহণ ও ওষুধ কেনার সময় এই মেডিকেয়ার কার্ডটি ব্যবহার করতে হবে। মেডিকেয়ারের মাধ্যমে অনেক সময়ই বিনা মূল্যে বা কম মূল্যে চিকিৎসা গ্রহণ করা যায়। প্রতিটি শহরেরই মেডিকেয়ারের নিবন্ধনের অফিস রয়েছে। অন্য ভিসার ক্ষেত্রে প্রাইভেট স্বাস্থ্য বিমা নিবন্ধন করতে হবে।

সরকারি ওয়েবসাইট। সংগৃহীত
সরকারি ওয়েবসাইট। সংগৃহীত

সরকারি ওয়েবসাইট

অস্ট্রেলিয়ার সকল সরকারি সেবা এক জায়গায় পাওয়ার সরকারি ওয়েবসাইট হলো <my.gov.au>।এই ওয়েবসাইটটিতে নাম-ঠিকানা দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন। এই ওয়েবসাইটে আপনার অ্যাকাউন্টের সঙ্গে মেডিকেয়ার ও টিএফএনসহ প্রায় সকল সরকারি সেবা যুক্ত করা যাবে। এ ছাড়া, রাজ্যভিত্তিক বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও অ্যাপও রয়েছে। সেগুলোও ব্যবহার করতে পারেন।