জাপানের আশিকাগায় বিজয় উৎসব

চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা

জাপানে বসবাসরত বাংলাদেশিরা ছড়িয়ে আছেন দেশটির ৪৭টি প্রিফেকচারে। দেশটিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বেশি হয় রাজধানী টোকিওকে ঘিরেই। জাপানে যারা বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছেন তারাও চান স্থানীয় স্কুল-কলেজে অধ্যয়নরত তাদের সন্তানদের নিজ দেশের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে। দুর পরবাসে থেকেও তারাও চান শেকড়ের সঙ্গে নতুন প্রজন্মের নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করতে।

সেই লক্ষ্যে টোকিওর পার্শ্ববর্তী গুন্মা, তোচিগি ও সাইতামা অঞ্চলের প্রবাসী কিছু ভাইবোনের উদ্যোগে গতকাল রোববার (১৬ ডিসেম্বর) আশিকাগায় আয়োজন করা হয় বিজয় উৎসবের। প্রবাসে থেকে পরিবারসহ বাংলাদেশের বিজয় দিবস উদ্‌যাপন করাটা ছিল ভীষণ উপভোগ্য ও অনেকের জন্যই প্রথম অভিজ্ঞতা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনুষ্ঠানের প্রতিটি ইভেন্ট ছিল চিত্তাকর্ষক ও শিক্ষণীয়।

আঁকা ছবি হাতে শিশুরা
আঁকা ছবি হাতে শিশুরা

ছোট বন্ধু হৃত্বিকার কোরআন তিলাওয়াত দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন মিন্টু বড়ুয়া ও আসমাউল হুসনা। এরপর বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ও সংগীতশিল্পী সোহেল জায়েদি, টোকিও বৈশাখী মেলার অন্যতম আয়োজক ও সংগঠক মো. জসিম, টোকিওর বাংলা সংস্কৃতি অঙ্গনে সক্রিয় মুখ মুনশি সুলতানা ওরফে মিসেস রেনু এবং লেখক ও সাংবাদিক প্রবীর বিকাশ সরকার। প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, জাইকার বাংলা ভাষা শিক্ষক, স্বরলিপি কালচারাল একাডেমি জাপানের উপদেষ্টা আজাদ মুনশি।

তাদের বক্তব্যের পর মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা দেওয়া হয়। দুজন মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা জানানোর পর ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয় তাদের সন্তান মালিহা পারভীন ও ফারহানা আফরোজকে। পর্বটি পরিচালনায় ছিলেন আয়েশা সিদ্দিকা।

সংগীত পর্বে প্রথমে দেশের গান ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’ নিয়ে মঞ্চে আসেন কণ্ঠশিল্পী রাবিতা সুলতানা। এরপর পরিবেশিত হয় জয় বাংলা বাংলার জয় ও প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ দেশাত্মবোধক গান। দেশাত্মবোধক এই গান দুটি একই মঞ্চে পরিবেশন সম্ভবত এই প্রথম।

অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য
অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য

আয়োজনে ছিল বাচ্চাদের চিত্রাঙ্কন ও বর্ণ লেখা প্রতিযোগিতা। যেখানে প্রতিটি শিশু-কিশোর নিজের পছন্দের ছবি আঁকার পাশাপাশি বাধ্যতামূলক তিনটি বাংলা বর্ণ ও বাংলাদেশের পতাকা অঙ্কন করেছে। প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন সাবরিনা ভাবি, ইমু ভাবি ও সাথী ভাবি। বিজয়ী ছয়জনের হাতে পুরস্কার বিতরণ করেন শিল্পী শাম্মী বাবলি। এ ছাড়া, আয়োজনে ছিল সম্ভাবনাময় চিত্রশিল্পী সাবরিনা ভাবির চিত্র প্রদর্শনী। তার চিত্রকর্মে মুগ্ধতা প্রকাশ করেন প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিরা।

মধ্যাহ্নভোজনে ছিল বাঙালি মজাদার খাবার—সাদা ভাত, হরেক রকম ভর্তা, বিফ, চিকেন, সবজি ও কাবাব। খাবারের পর শিশুকিশোরদের সাধারণ জ্ঞান প্রতিযোগিতায় জাপানি ভাষায় অভ্যস্ত শিশুদের বাংলা বর্ণমালা, বাংলায় আত্মপরিচয় ও বাংলা কবিতা, ছড়া ও গান পরিবেশনায় ফুটে উঠেছে দেশাত্মবোধ। এ পর্ব পরিচালনা করেন রোশান আফরোজ। শিশুদের ইভেন্ট শেষে ছিল মজার ও শিক্ষণীয় প্রশ্নোত্তরে কুইজ পর্ব।

অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য
অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য

শেষার্ধে ছিল কবিতা আবৃত্তি ও সংগীতানুষ্ঠান। বলে নেওয়া দরকার অনুষ্ঠানের কনসার্ট লেভেল সাউন্ড সিস্টেম ও কারাওকে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য আয়োজকেরা যার কাছে ঋণী তিনি হচ্ছেন সবার প্রিয় সংগীতশিল্পী ও সংগীতে অনুপ্রেরণাদানকারী জায়েদি সোহেল ভাই।

এ পর্বে নানা ধরনের গান পরিবেশিত হয় সন্ধ্যা পর্যন্ত। মাঝে নাট্যকার সালাহউদ্দিন জাহিদ রচিত নাটিকা ‘টক শো’ মঞ্চস্থ হয়। বক্তব্য নির্ভর কমেডি এই নাটিকাটির শেষাংশে থাকে প্রবাসীদের জন্য চমকপ্রদ মেসেজ—ব্যয়বহুল জাপানে অনেক অপ্রয়োজনীয় বা শৌখিন ব্যয় একটু কমিয়ে জমা করলে মাস শেষে যে অর্থ সঞ্চয় হবে, সেই অর্থ জাপানের হিসেবে খুব বড় কিছু না হলেও, তা একত্রিত করে আমরা বাংলাদেশের অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে পারি। নাটিকায় অভিনয় করছেন মনসুর আহমেদ, মো. শাহাদাৎ, গোলাম মোস্তফা ও মো. সোহানুর রহমান।

বক্তব্য দিচ্ছেন অতিথিরা
বক্তব্য দিচ্ছেন অতিথিরা

অনুষ্ঠান চলার ফাঁকে পরিবেশন করা হয় ভাবিদের তৈরিকৃত হরেক রকম মুখরোচক পিঠা ও নাশতা। আরও ছিল ভাবিদের বালিশ খেলা প্রতিযোগিতা।

সদ্যপ্রয়াত বাংলা সংগীতের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চুর স্মৃতির উদ্দেশ্যে ট্রিবিউট সং চলো বদলে যাই সবাই একসঙ্গে গেয়ে শেষ হয় এই বিজয় উৎসব।