জাপান সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে

বৈঠক শেষে মো. শহীদুল হক কাজুইউকি ইয়ামাজাকিকে শুভেচ্ছা স্মারক উপহার দেন
বৈঠক শেষে মো. শহীদুল হক কাজুইউকি ইয়ামাজাকিকে শুভেচ্ছা স্মারক উপহার দেন

২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে জাপান সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। গত সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে জাপানের রাজধানী টোকিওতে দুই দেশের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) সভায় এই আশ্বাস দেন দেশটির সিনিয়র পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী কাজুইউকি ইয়ামাজাকি।

সভায় দশ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শহীদুল হক। বাংলাদেশ দলে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমাসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ইআরডি, পরিবেশ অধিদপ্তর, হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও দূতাবাসের কর্মকর্তারা ছিলেন।

সভায় দ্বিপক্ষীয় কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশের উন্নয়নে জাপানের সার্বক্ষণিক সহযোগিতার জন্য পররাষ্ট্রসচিব জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আরও বলেন, যৌথ উন্নয়ন ও সহযোগিতা উদ্যোগ দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বকে আরও গভীর করেছে। বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করতে ও সহযোগিতার নতুন কৌশল খুঁজে বের করতে দুই দেশ একমত পোষণ করে। এ সময় দুই পক্ষের প্রতিনিধিদলের নেতা দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ও দুই দেশের জনগণের শান্তি ও নিরাপত্তায় আরও নিবিড়ভাবে কাজ করার আশা প্রকাশ করেন।

মো. শহীদুল হক আশা প্রকাশ করেন, বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-বি) উদ্যোগ বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করার পাশাপাশি আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশের অংশগ্রহণমূলক ও জনগণকেন্দ্রিক ব্লু-ইকোনমি পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে গভীর সমুদ্রে মৎস্য ও সম্পদ আহরণে তিনি জাপানের সহযোগিতা কামনা করেন।

মো. শহীদুল হকের সঙ্গে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
মো. শহীদুল হকের সঙ্গে দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশে জাপানি ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউট স্থাপনে জাপানকে সহযোগিতা করতে ও দেশটির অনুমোদিত ইমিগ্রেশন আইনের আওতায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন কাজে দক্ষ ও অদক্ষ বাংলাদেশি জনসম্পদকে বিবেচনার অনুরোধ করেন।

কাজুইয়োকি ইয়ামাজাকি মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করেন। তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে এবং তাদের নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়ায় সকল ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

এ ছাড়া, ওই দিন সকালে মো. শহীদুল হকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন জাপান-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ লীগের মহাসচিব এবং জাপানের ভূমি, অবকাঠামো, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ইচিরো সুকুদা ও সহকারী প্রধান কেবিনেট সচিব নবুকাতসু কানেহারা।

দুপুরে মো. শহীদুল হক টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন ও দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

জাপানে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালন
দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য

জাপানে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস উদ্‌যাপন করেছে টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাস। রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা প্রবাসী বাংলাদেশিসহ সকল অভিবাসীকে দেশের উন্নয়নে ও সুনাম বৃদ্ধিতে আরও বেশি দেশপ্রেম, নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

এ উপলক্ষে আজ (১৯ ডিসেম্বর) বুধবার দূতাবাসের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রাবাব ফাতিমা তাঁর স্বাগত বক্তব্যে প্রবাসী অভিবাসীদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করায় ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, অভিবাসী দিবসের এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘অভিবাসী অধিকার-মর্যাদা ও ন্যায় বিচার’ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও সময়োপযোগী হয়েছে।

অভিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন রাবাব ফাতিমা
অভিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন রাবাব ফাতিমা

দিবসটির তাৎপর্য ও গুরুত্ব তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত আগত অতিথিদের কাছে একটি বিশদ উপস্থাপনা করেন। তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে এবং অভিবাসীদের কল্যাণে সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ ধরেন। এ ছাড়া, জাপানে বাংলাদেশি প্রবাসীদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এবং জাপান সরকার ঘোষিত নতুন অভিবাসন আইনের নানা দিক নিয়ে আলোকপাত করেন তিনি।

পরে উপস্থিত অভিবাসীদের সঙ্গে মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় জাপানে কীভাবে বাংলাদেশি অভিবাসীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায়, অভিবাসীদের সমস্যা দূর করার উপায় এবং কীভাবে দেশে বৈধ পথে ও সহজে আরও বেশি রেমিট্যান্স পাঠানো যায় ইত্যাদি বিষয় উঠে আসে। অভিবাসীরা জাপানে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের আসার পথ সুগম করা এবং পড়া শেষে কাজ করার বিষয়ে দূতাবাসের সহযোগিতা কামনা করেন। জবাবে রাষ্ট্রদূত সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং অনেক বছর ধরে অবস্থান করা অভিবাসীদেরও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা ও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি

অভিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিতি
অভিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিতি