লন্ডনে পেনসিল ইউকে বিজয় মেলা

পেন্সিল ইউকে বিজয় মেলার একটি দৃশ্য
পেন্সিল ইউকে বিজয় মেলার একটি দৃশ্য

লন্ডনের ব্রাডি আর্ট সেন্টারে হয়ে গেল পেনসিল ইউকে বিজয় মেলা। ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা ছেলেমেয়েদের বিজয় দিবসের মাহাত্ম্য বোঝানো ও দেশীয় সভ্যতার পরিচয় করানোই ছিল এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য। গত রোববার (১৬ ডিসেম্বর) এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। একদল পেন্সিলরের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টার ফসল এই পেন্সিল বিজয় মেলা সফলতার সঙ্গে তার লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

পেন্সিল ইউকে বিজয় মেলার একটি দৃশ্য
পেন্সিল ইউকে বিজয় মেলার একটি দৃশ্য

পেনসিল ২০১৬ সালে জন্ম নেওয়া একটি শিল্প–সাহিত্যভিত্তিক অনলাইন গ্রুপ, যা এখন আর শুধু অনলাইন সীমায় আটকে নেই। ১ লাখ ২২ হাজার সদস্যের গ্রুপটি ইতিমধ্যে অনেকগুলো মাইলস্টোন অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিদের একত্র করে একের পর এক সফল মিলনমেলার আয়োজন করেছে সংগঠনটি । এর মধ্যে সর্বশেষ আয়োজনটি ছিল লন্ডনে বিজয় মেলার উৎসব।

পেন্সিল ইউকে বিজয় মেলার একটি দৃশ্য
পেন্সিল ইউকে বিজয় মেলার একটি দৃশ্য

বাংলাদেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ওমানসহ আরও বেশ কিছু দেশে পেনসিল তার ছাপ রাখা শুরু করলেও এদের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে যুক্তরাজ্য (ইউকে)। কেননা দেশের পর ইউকেতে পেনসিলরদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। দেশপাগল ও শিল্পানুরাগী অনেক মানুষ এবার লন্ডনে বিজয় মেলার মতো একটি আয়োজনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাজ্যে থাকা বাঙালিরা তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দূর–দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন। সবার লক্ষ্য একটি, সেটি হলো একটি সুষ্ঠু, সুপরিকল্পিত ও সফল মিলনমেলার অংশ হওয়া, সবাই মিলিত হয়ে হৃদয়ে থাকা বাংলাদেশকে স্মরণ করা। এর আগেও লন্ডনের বাইরের অনেক দূরের কিছু শহর থেকে বাঙালিরা পেনসিলের আয়োজিত উৎসবে যোগ দিয়েছেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবার ইংল্যান্ডের বাইরের স্কটল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ড থেকেও পেনসিলররা এই বিজয় দিবসের উৎসব আলোকিত করতে ছুটে এসেছেন।

পেন্সিল ইউকে বিজয় মেলার একটি দৃশ্য
পেন্সিল ইউকে বিজয় মেলার একটি দৃশ্য

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় শিশু কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। বিজয় দিবসকে থিম হিসেবে রেখে তারা তাদের কল্পনার রং দিয়ে তুলিতে আঁচড় কাটে। তাদের একাগ্রতা ও বিজয় দিবসকে বোঝানোর এই প্রয়াস সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীর হাতে পেনসিলের ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দেশাত্মবোধক গান, নাচ ও কবিতা আবৃত্তিতে ঝলমলে হয়ে ওঠে স্যাঁতসেঁতে বৃষ্টিস্নাত দিনটি। সেই সঙ্গে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া এই বিজয়ের কথা স্মরণ করে বুকের ভেতরটা কেমন এক অব্যক্ত বেদনায় হাহাকার করে ওঠে যেন সবার। তবে সেই দুঃখবোধের মধ্যেও সবার চোখেমুখে এক পরিতৃপ্তি খেলা করতে থাকে যখন এই নতুন প্রজন্ম যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, যারা ৭১-এর বহু পরে জন্মেছে এবং তাও বিদেশের মাটিতে, তারা যখন নিজেদের কণ্ঠে অদ্ভুত এক দরদ মাখিয়ে বাংলাদেশের গান গেয়ে ওঠে, স্বাধীনতার গানের তালে নৃত্য পরিবেশন করে।

পেন্সিল ইউকে বিজয় মেলার একটি দৃশ্য
পেন্সিল ইউকে বিজয় মেলার একটি দৃশ্য

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আরেকটি বড় আকর্ষণ ছিল শিশুদের যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতা। দেশীয় সাজে সজ্জিত হয়ে তারা মঞ্চ আলোকিত করে এবং উৎসবের আনন্দ দ্বিগুণ করে তোলে। শিশুকিশোরদের কলকাকলির সঙ্গে আয়োজনে ভিন্ন মাত্রা যোগ করতে ছিল বেশ কয়েকটি দেশীয় স্টল। স্টলগুলো মূলত দেশীয় পোশাক, হস্তশিল্প, পেনসিল প্রকাশনীর বই ও নানান মুখরোচক খাবার দাবারের। সেই সঙ্গে বাড়তি আকর্ষণ ছিল একটি টং-এর চায়ের স্টল।

পেন্সিল ইউকে বিজয় মেলার একটি দৃশ্য
পেন্সিল ইউকে বিজয় মেলার একটি দৃশ্য

পুরো দিনব্যাপী এই বিজয় মেলা আয়োজনে পেনসিলররাও তাঁদের পুরো পরিবার মেতে উঠেছিলেন এক অনন্য আনন্দে। দেশ থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও ১৬ ডিসেম্বরকে ভালোবাসার সঙ্গে, গর্বের সঙ্গে স্মরণ করার এই আন্তরিক প্রয়াস যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাঙালিদের পেনসিলের সঙ্গে মিশে ভবিষ্যতে দেশ, দেশের স্বকীয়তাকে বিদেশে তুলে ধরার এক দারুণ অনুপ্রেরণা হয়ে কাজ করবে।

পেন্সিল ইউকে বিজয় মেলার একটি দৃশ্য
পেন্সিল ইউকে বিজয় মেলার একটি দৃশ্য