রিয়াদে বিজয় ও অভিবাসী দিবস পালন

বিজয় দিবসে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়
বিজয় দিবসে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়

সৌদি আরবের রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মহান বিজয় ও অভিবাসী দিবস উদ্‌যাপিত হয়েছে। নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিবস দুটি আলাদাভাবে উদ্‌যাপন করা হয়।

বিজয় দিবস

১৬ ডিসেম্বর সকালে রিয়াদের ডিপ্লোম্যাটিক কোয়ার্টারে বাংলাদেশ দূতাবাসের নবনির্মিত চ্যান্সারি ভবনে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের কার্যক্রম শুরু করেন। এ সময় রিয়াদের নানা পেশা ও শ্রেণির প্রবাসী বাংলাদেশি ও দূতাবাসের কর্মকর্তা, কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

বিজয় দিবসের আলোচনায় বক্তব্য দিচ্ছেন গোলাম মসীহ
বিজয় দিবসের আলোচনায় বক্তব্য দিচ্ছেন গোলাম মসীহ

আলোচনা অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেন, দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমাদের মহান স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। তিনি নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান জানান।

গোলাম মসীহ প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে বলেন, প্রবাসীদের যেকোনো প্রয়োজনে দূতাবাস পাশে রয়েছে। প্রবাসীদের সন্তানদের শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সৌদি আরবে বসবাসরত বাংলাদেশ কমিউনিটির স্কুলের জন্য খুব শিগগিরই নিজস্ব জায়গা ক্রয় করে ভবন তৈরির কাজ শুরু করা হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ অবস্থায় রয়েছে, আগামী দিনে এ সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় উপস্থিতি
বিজয় দিবসের আলোচনা সভায় উপস্থিতি

মিশন উপপ্রধান ড. নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। বর্তমান সরকারের সময়ে দেশের উন্নয়ন ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ভূমিকা সারা পৃথিবীতে প্রশংসিত হচ্ছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ, মেট্রো রেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মহাকাশে স্যাটেলাইট নিক্ষেপ আজ বাংলাদেশের সক্ষমতাকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।

এ ছাড়া, দূতাবাসের মিনিস্টার আনিসুল হক ও প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।

এর আগে আলোচনার শুরুতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত সকল শহীদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

অভিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে অতিথিরা
অভিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে অতিথিরা

অভিবাসী দিবস

রিয়াদে আল ইয়ামামা কোম্পানির শ্রমিক ক্যাম্পে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস পালিত হয়েছে। ১৮ ডিসেম্বর দূতাবাসের শ্রম উইংয়ের উদ্যোগে আল ইয়ামামা কোম্পানিতে কর্মরত কয়েক শ বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান ও খেলাধুলার আয়োজন করা হয়।

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ বলেন, সরকার নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বদ্ধপরিকর। সৌদি আরবে অভিবাসন ব্যয় কমানোর লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার। তিনি বলেন, সৌদি আরবে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শ্রমিক প্রেরণের জন্য বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। সৌদি আরবে বসবাসরত শ্রমিকদের খুব শিগগিরই বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করা হবে। তিনি অভিবাসী বাংলাদেশিদের জীবন বিমার মাধ্যমে বিমা সুবিধা ও পেনশন স্কিম চালু করার লক্ষ্যে দূতাবাস কাজ করছে বলে জানান। রাষ্ট্রদূত বলেন, সৌদি আরবে বাংলাদেশের একটি ব্যাংক যেন কার্যক্রম শুরু করতে পারে সে লক্ষ্যে দূতাবাস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিতি
অনুষ্ঠানে উপস্থিতি

গোলাম মসীহ অভিবাসীদের জন্য নেওয়া দূতাবাসের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, দূতাবাস অভিবাসীদের সকল সেবা দ্রুত ও সহজে প্রদান করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে। দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে অভিবাসীদের সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে প্রবাসী সেবাকেন্দ্র চালু করা হয়েছে। অচিরেই দেশটির সকল শহরে প্রবাসী সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান। এ ছাড়া, সৌদি আরবের বিভিন্ন প্রান্তে অভিবাসী বাংলাদেশিদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে নিয়মিত কনস্যুলার টিম ও প্রেরণ করা হচ্ছে বলে রাষ্ট্রদূত জানান।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন দূতাবাসের শ্রম উইংয়ের প্রথম সচিব আসাদুজ্জামান। এ ছাড়া আল ইয়ামামা কোম্পানির প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. নাসের ও ফাহিম বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে দূতাবাসের প্রথম সচিব মো. সফিকুল ইসলাম ও দ্বিতীয় সচিব মো. ফখরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

পরে বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়ে প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন গোলাম মসীহ। বিজ্ঞপ্তি