জাপানের কানসাইয়ে প্রথমবারের মতো বিজয় দিবস

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

ডিসেম্বর মাস আমাদের বাংলাদেশিদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি মাস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অত্যাচারী পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর ঘাতক আলবদর-রাজাকারদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আমাদের বহু আকাঙ্ক্ষিত সেই বিজয় অর্জিত হয়। যার মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে আমরা একটি স্বতন্ত্র পরিচয় লাভ করি।

এই যুগপৎ বেদনাবিধুর ও গৌরবের দিনটি তাই বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বেই বাংলাদেশিদের উদ্যোগে জাঁকজমকভাবে উদ্‌যাপিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের প্রতি ভালোবাসা ও প্রবাসের ভিন্ন সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি নতুন প্রজন্মকে নিজ শেকড়, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে কিছুটা হলেও একাত্ম করার প্রয়াসে জাপানের কানসাইয়ে প্রথমবারের মতো উদ্‌যাপন করা হয়েছে মহান বিজয় দিবস। বাংলাদেশিদের সংগঠন কানসাই বাংলাদেশ সোসাইটির (কেবিএস) উদ্যোগে গত ১৬ ডিসেম্বর রোববার বিজয় দিবস উদ্‌যাপন করা হয়।

প্রতীকী স্মৃতিসৌধের সামনে ফুল হাতে দুই শিশু
প্রতীকী স্মৃতিসৌধের সামনে ফুল হাতে দুই শিশু

ওসাকার ইকুনো কিউমিন অডিটোরিয়ামে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বিজয় দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন কানসাই বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ জাহিদুর রায়হান। এরপর কোরআন তিলাওয়াত ও গীতা পাঠ শেষে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি সম্মান জানাতে একটি প্রতীকী স্মৃতিসৌধে সবাই একে একে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। প্রতীকী এই স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন সোসাইটির প্রচার সম্পাদক ডা. সালমান মাহমুদ সিদ্দিকী রাফসান।

অনুষ্ঠানে জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠা বাংলাদেশি শিশু-কিশোরেরা বাংলা গান, ছড়া, কবিতা পরিবেশনার মাধ্যমে নিজ মাতৃভাষাকে জানার আনন্দে যেমন উদ্বেলিত ছিল, তেমনি তাদের পরিবেশনা উপস্থিত অতিথিদের মুগ্ধও করে। এই আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক ছিল সোসাইটির সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা মেহরুবা মোনার শ্রুতিমধুর উপস্থাপনায় প্রবাসীদের অংশগ্রহণে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে ওসাকাপ্রবাসী তানিয়া তাবাসসুম নিসা ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’ গানটি গেয়ে ও নির্মলেন্দু গুণের ‘স্বাধীনতা শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ কবিতা আবৃত্তি করে সবাইকে মোহিত করে।

এরপর একে একে কিয়োটোর মাহ্দী মুন্নার গাওয়া জেমস ও শিরোনামহীনের ‘বাংলাদেশ’ গান দুটি, ওসাকার খন্দকার রুমির গাওয়া ‘এক নদী রক্ত পেরিয়ে’, ওসাকার অনীক ভট্টাচার্যের ‘আজও বাতাসে লাশের গন্ধ পাই’ কবিতা আবৃত্তি ও সব শেষে কোবেপ্রবাসী ডা. রাফসানের গাওয়া আজম খানের ‘বাংলাদেশ’ গান, সব মিলিয়ে দেশাত্মবোধের ছোঁয়ায় পুরো অনুষ্ঠানটিতে এক অনন্য মাত্রা যোগ করে।

অনুষ্ঠানে সমবেত বাংলাদেশিরা
অনুষ্ঠানে সমবেত বাংলাদেশিরা

এ ছাড়া, অনুষ্ঠানের মাঝখানে আগত দর্শকদের জন্য আকর্ষণীয় পুরস্কারসহ র‍্যাফেল ড্রর আয়োজন প্রায় শতাধিক বাংলাদেশির এই মিলনমেলাকে করে তোলে আরও প্রাণবন্ত। সবশেষে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ নৈশভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে।

পুরো অনুষ্ঠানটির সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন সোসাইটির সাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার রুমি ও অর্থবিষয়ক সম্পাদক রফিক আজিজ। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সোসাইটির উপদেষ্টা সিরাজুল ইসলাম ও সহসভাপতি রাসেল রেহমান চৌধুরীসহ আরও অনেকে।

উল্লেখ্য, কানসাই বাংলাদেশ সোসাইটি জাপানের কানসাই অঞ্চলে বসবাসরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের সমন্বয়ে গঠিত একটি অরাজনৈতিক সামাজিক সংগঠন। এ সংগঠন নিয়মিত বাংলাদেশের বিভিন্ন উৎসব ও অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে।

ডা. সালমান মাহমুদ সিদ্দিকী রাফসান: পিএইচডি শিক্ষার্থী, কোবে বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান।