অস্ট্রেলিয়ায় জাল হচ্ছে বাংলাদেশি ভিসা

অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের নামে ইস্যুকৃত জাল ভিসা
অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের নামে ইস্যুকৃত জাল ভিসা

অস্ট্রেলিয়ায় জাল করা হচ্ছে বাংলাদেশের ভিসা। এ বিষয়টি জানাজানি হয়েছে বাংলাদেশের ভুয়া ভিসাধারীরা অস্ট্রেলিয়া থেকে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসার পর। তাদের আটক করে ইমিগ্রেশন পুলিশ। তারা সকলেই অস্ট্রেলিয়ার আশ্রয়প্রার্থী রোহিঙ্গা শরণার্থী। ভুয়া ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে প্রবেশের সময় বিমানবন্দরেই ধরা পড়েন তারা। আটকের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের অস্ট্রেলিয়ায় ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

গত ২০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে আবারও ধরা পড়েন পাঁচজন বাংলাদেশের ভুয়া ভিসাধারী। অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন এই প্রতিবেদকের কাছে বিষয়টির সত্যটা নিশ্চিত করেছে। সব মিলে গত দুই সপ্তাহে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ভুয়া ভিসাধারী প্রায় ২১ জনের আটক হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের চিঠি
বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের চিঠি

জানা গেছে, ভুয়া ভিসাধারীরা ভ্রমণের জন্য অস্ট্রেলিয়ার কনভেনশন ট্রাভেল ডকুমেন্ট (সিটিডি) ব্যবহার করেছিলেন। সিটিডি পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া শরণার্থীদের বিশেষ ধরনের পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্র। সিটিডিতে বাংলাদেশের ভুয়া স্ট্যাম্প ও হাতে লেখা ভিসা ব্যবহার করেছিলেন তারা। ভিসাগুলোতে ব্যবহৃত হাইকমিশনের স্ট্যাম্প ও কমিশনের দ্বিতীয় সচিব শামীমা পারভিনের স্বাক্ষরটি নকল করা হয়েছিল। ভুয়া ভিসার মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া থেকে বের হওয়ার সময় কোনো বাধার সম্মুখীন হননি রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। কারণ ভুয়া ভিসাগুলো মেশিন রিডেবল না হওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিসার সত্যতা খতিয়ে দেখার সুযোগ থাকে না। যদিও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই মেশিন রিডেবল ভিসা চালু করেছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। তবে ভুয়া ভিসা সম্পর্কে এখনো অস্ট্রেলিয়ার সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ সুফিউর রহমান। ভিসা জালিয়াতি চক্রকে চিহ্নিত করার পরপরই তাদের জানানো হবে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও হাইকমিশন ইতিমধ্যেই তদন্তের কাজ শুরু করেছে।

অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম এসবিএস বাংলায় এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে আজ। প্রতিবেদনটিতে জাল ভিসায় বাংলাদেশে আটক মোহাম্মদ সালাম এবং প্রতারিত হাশিম ও হোসাইনের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়। এরা সকলেই জাল ভিসায় প্রতারিত। সালাম জানান, সরাসরি হাইকমিশনের বদলে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভ্রমণের ভিসা নেন। তবে ভিসাগুলো যে নকল এ বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরেই কর্তৃপক্ষ জানায় তার ভিসা ভুয়া। এরপর তাঁকে অস্ট্রেলিয়ায় ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত আরও বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশ হাইকমিশনে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন তাঁদের বাংলাদেশি ভিসাগুলোও নকল। তারাও ভিসা নকল হওয়ার বিষয়টি জানতেন না। হাইকমিশন সূত্রে জানা যায়, হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর বর্তমানে শুধুমাত্র মেশিন রিডেবল ভিসাধারীকেই বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে।