আমিও ভালো আছি

অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী
অলংকরণ: সব্যসাচী মিস্ত্রী

এখানে অনেক বরফ পড়েছে, যেন সাদা চাদরের ভেতর ছোট্ট খরগোশের লুটোপুটি খেলা

আমি বসে থাকি একাকী নির্জনে হাতে এক কাপ ধোঁয়া ওঠা চা
চোখ বুজলেই দেখি উঠোনে দাঁড়িয়ে আছেন আব্বা
মুখে সেই অমলিন হাসি, চোখের তাড়ায় স্নেহের ফুলঝুরি ছিটকে পড়ে, দূরে, বহু দূরে অসহায়।
আমার মা পানবাটা হাতে অলস দুপুরে জানালার শিক গলে কীভাবে উদাস চোখে দু-চোখ মেলে তাকিয়ে থাকেন
আর কী ভাবেন তা শুধু মা-ই জানেন
বাড়ির প্রিয় কুকুর যার নাম ভুলু-সেও মাথা গুঁজে শুয়ে বিশাল দীর্ঘশ্বাসে কেঁপে কেঁপে ওঠে।
আমার লাগানো শিউলি ফুলের গাছে হলুদ, সাদায় কী এক মাতাল করা ঘ্রাণ যেন উষ্ণ হাওয়ায় বয়ে নিয়ে
আসে সাত সমুদ্দুর পেরিয়ে, আমার এই বরফ শীতল ছোট্ট শহরে।
আমি যেন এক হলুদ পরি, লাল-হলুদ চেক শাড়িতে জামরুল ফুল খোঁপায় গুঁজে
ছুটে যাই বিলের পাড়ে নৌকার গলুইয়ে বসা বাঁশি বাজানো সেই তরুণের খোঁজে।
আর প্রিয় বান্ধবীর সঙ্গে রাত জেগে সেই বাঁশির সুরের মূর্ছনায় হারিয়ে যাওয়ার গল্পকথন
কল্পনায় অবগাহন করি।

লেখিকা
লেখিকা

শীতের সন্ধ্যায় মাটির চুলায় লাকড়ির আগুনে ভাপা পিঠার সুঘ্রাণ নিতে নিতে খড়কুটোর আগুন পোহানো
হাতে কাঠ কয়লার গন্ধ শ্বাস-প্রশ্বাসে মিলিয়ে যায়।
সবকিছু কী ভুলে গেছি?
নিয়ন বাতির আলোকিত ঝলমলে শহরে স্মৃতির পাহাড় হাতড়াই আর ডুবে যাই অসীম তলানিতে
সবকিছু কি ভুলে থাকা যায়? কোনো এক বরফ ঢাকা নির্জনে একাকী বসে
আলোড়িত হই, সেই ফেলে আসা জীবনের একঝাঁক ভালোবাসার সুতীব্র আহ্বানে।
আব্বা, মা, ভুলু, শিউলি ফুলেরা, সেই বাঁশিওয়ালা, প্রিয় বান্ধবীরা, শীতের বিকেলের ধোঁয়া ওঠা উঠোন
তোমরা সবাই ভালো থেকো।
আমিও ভালো আছি।
...
ভিকারুন নিসা: সাস্কাতুন, সাস্কাচেওয়ান, কানাডা।