গাইড ও কোচিং জেনারেশন

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

আমাদের পিছিয়ে থাকার সবচেয়ে বড় কারণ হয়তো বই বিমুখতা। বই পড়ার সূচকে আমাদের অবস্থান সারা বিশ্বের একদম তলানির দিকে। কিন্তু গাইড পড়ার দিকে সবার চাইতে এগিয়ে। প্লে গ্রুপে ভর্তি হবে তার জন্য গাইড। পরীক্ষায় পাস করতে হবে তার জন্য গাইড। ভর্তি পরীক্ষা তার জন্য গাইড। চাকরির পরীক্ষা তার জন্য গাইড। শুধু গাইড আর গাইড। আমরা বাচ্চাদের গাইড পড়তে দিই। গল্পের বই দেখলে কেড়ে নেই এমনভাবে যেন তারা অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছে! বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা টেক্সট বুক পর্যন্ত দেখে না, বাইরের বই তো দূরের কথা। নোট আর লেকচার পড়ে পড়ে পাস। বেশ চলছে...।

আরেক অসাধারণ কাজ করে যাচ্ছে কোচিং সেন্টারগুলো। প্রায় সবকিছুর জন্যই কোচিং আছে। এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যের পরিমাণ দেখলে চক্ষু চড়কগাছ। যেভাবে এগোচ্ছে দেশ, কিছুদিন পরে সৃষ্টিশীল মানুষ অথবা সৃজনশীলতা বলতে কিছুই থাকবে না! খালি থাকবে সৃজনশীল প্রশ্ন আর বস্তা বস্তা গাইড।

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

আপনি এমন আজব শিক্ষাব্যবস্থা আর মেধার অবমূল্যায়ন পৃথিবীর আর কোথাও দেখবেন না। আমরা শিশুদের মেধাকে বিকশিত হতে না দিয়ে গলা টিপে হত্যা করছি। তাদের যখন দেওয়ার কথা মুক্ত খোলা হাওয়া, তখন তাদের কাঁধের ওপরে তুলে দিচ্ছি বইয়ের বোঝা। সেই ভারে তো সে আর পারছে না মাথা তুলে দাঁড়াতে। তার মেরুদণ্ড আক্ষরিক অর্থেই বাঁকা করে দিচ্ছি।

এই জেনারেশনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কোনো কবি নেই, সাহিত্যিকে নেই, শিল্পী নেই, গায়ক নেই, নায়ক নেই, চলচ্চিত্রকার নেই, বিজ্ঞানী নেই। আছে কিছু করপোরেট গবেট আর গোলাম! সবাই এটাকে লক্ষ্য করে ছুটছে তো ছুটছেই!

এখনই সর্বোচ্চ সময় কিছু একটা করার জাগরণের। শিক্ষাব্যবস্থাকে আপাদমস্তক পরিবর্তনের! নতুবা আমরা জাতি হিসেবে আস্তাকুঁড়ে বিলীন হয়ে যাব। যে স্বপ্ন নিয়ে আমাদের পূর্বপুরুষেরা তাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলেন তা স্বপ্নই রয়ে যাবে। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরও আমাদের নিজেদের অস্তিত্ব হাতড়ে বেড়াতে হয়, এ দায় কার?

...

মোকাররম আলাভী: ইছাং, হুবেই, চীন। ইমেইল: <[email protected]>