মরক্কো সগীর
এক থাপ্পড়ে তোর বত্রিশ খান দাঁত ফালাই দিমু।
: উঁহু, সেটা বোধ হয় পারবেন না। পুরো বত্রিশটা কিন্তু আর নাই। চারটা আক্কেলদাঁত উঠেছিল ঠিকই। কিন্তু ঢোড়া সাপের মতো এদিক-ওদিক চলনে মহা ভেজাল লেগে গেল। শেষে এক কম্বিং অপারেশনে চারটাই টুপ করে তুলে ফেঁসেছেন ডেন্টিস্ট মহোদয়।
: তাতে কুনো সমিস্যা নাই।। আটাইশখান আছে না? ওইগুলানই উঠাইয়া দিমু।
: মাফ করবেন, তাও পারবেন না। আপনিই ঠিক; নিয়ম মতো আটাশটা থাকারই কথা। অথচ তা নাই। একটা কম আছে। খাট থেকে নামতে গিয়ে বেকায়দা পড়ে গিয়েছিলাম একদিন। একটা দাঁত পড়ে গিয়েছিল তখন। আচানক কথা কী জানেন, দুর্ঘটনায় মানুষের সামনের দাঁত পড়ে। অথচ আমার গেল ভেতরেরটা, মানে মাড়িরটা।
: ওই আক্কাস, এদিক আয় তো।
: জে বস। কী করতে হইব?
: ওরে কইষা থাপ্পড় লাগা একখান। হারামজাদা বেশি প্যাচাল পারতাছে। এমন জোরে লাগাবি য্যান মরক্কো সগীররে মইরা যাওনের সময়ও ভুইলা না যায়।
: জে আচ্ছা বস।
মুহিবের হাসি পায় একটু। এই লোকের নাম মরক্কো সগীর কেন? চোখে যে পরিমাণ সুরমা দিয়েছে, সুরমা সগীর বললেই বেশি মানাত। আজকালকার যুগে সুরমা দেওয়া মানুষ সচরাচর দেখা যায় না। বড়ই বিচিত্র! যা হোক, এই যুগে নাম রাখার ব্যাপারে বিরাট বিপ্লব ঘটে গেছে। কানা রতন, কুটি বাদল এসব এখন সেকেলে। এ যুগে হলো সুইডেন আসলাম, লাওস বাবু, মরক্কো সগীর। মুহিব মুখ তুলে আক্কাসের দিকেও তাকায়। ছোটখাটো গড়ন তার। আর তৎক্ষণাৎ চড়টা টের পায় মুহিব। ঠোঁটের কাছটা নোনতা লাগছে। কেটে গেছে বোধ হয়। রক্তের স্বাদতো নোনতা। একটা বাদে বাকি দাঁতগুলো অক্ষত আছে কীনা ঠিক বুঝতে পারছে না। মুহিবের হাত-পা চেয়ারের সঙ্গে শক্ত করে বাঁধা। নড়াচড়ার কোনো সুযোগই নেই।
: মরক্কো সগীর বস, একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম। ব্যথায় মুখ বিকৃত করে মুহিব বলে।
: ঠিক আছে কয়া ফেল। চড় দেওয়ার পর তাকে বেশ প্রসন্ন লাগছে।
: বাঙালির চড় মারার সুনাম ততটা নাই কিন্তু। চড় দিতে পারত পাঞ্জাবিরা। টিক্কা খান একবার আমার খালুশ্বশুরকে এমন চড় মারল যে তিনি চেয়ার থেকে ছিটকে চলে গেলেন।
: টিক্কায় হেরে চড় লাগাইছিল ক্যান?
: খালুজান ছিলেন মণিপুর স্কুলের টিচার। টিক্কা খান একদিন তার স্কুলে গেছে। খালু তাকে সোজা জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনারা শেখ সাহেবরে জেলে দিছেন কেন?’
: তহনই টিক্কায় চড় দিল? কথাটা বলে খ্যাঁক খ্যাঁক করে হেসে ওঠে সগীর। কেমন যেন হায়েনার মতো শোনায়। গা শিউরে ওঠে মুহিবের।
: ঠিক বলেছেন, বস। চড়ের চোটে খালুজান চেয়ার থেকে উল্টে পড়ে গেলেন।
: তোর চড়টা মনে লয় হালকা হয়া গেছে। চেয়ার থিকা পড়স নাই। ওই আক্কাস, আরেক খান লাগাত।
: জে বস, এহনই লাগাইতাছি। আবার হাত তোলে আক্কাস।
: বস, বস, আমি চেয়ার থেকে পড়ব কীভাবে? বেঁধে রেখেছেন না? চড়টা কিন্তু শক্তই ছিল। তড়িঘড়ি করে বলে মুহিব।
: ও, তাওতো কথা। এই আক্কাইসা থাম।
: আক্কাস ভাই, আপনার বাড়ি কী ঝালকাঠি? রাজাপুর উপজেলায়? কোনোমতে হাসি ধরে রেখে বলে মুহিব।
: বস, হেয়তো ঠিক কইছে। এই মনু জানল কেমনে কন দি?
: জানলাম মানে, আপনের চড় দেখে বুঝতে পেরেছি। বাঙালির চড়ের ক্ষেত্রে চ্যাম্পিয়ন ছিলেন শেরে বাংলা। তাকে বাংলার বাঘ তো আর খামাখা বলে না। আপনি কি উনার আত্মীয় আক্কাস ভাই?
: বস, এই ব্যাডা দেহি জাদুটোনা জানে। জিন-পরি পালে নাকি? ফজলু নানার কথা বেবাক কইয়া দিল।
: রহমত এদিকে আয়তো।
: জে বস। এই যে, কী করণ লাগব কন?
মুহিব রহমতের দিকে তাকায়। বিরাট তাগড়া শরীর, গ্রিজলি ভালুকের মতো। এ রকম একজনকে তুই-তোকারী করা বিরাট ক্ষমতার ব্যাপার। অথচ মরক্কো সগীর সমানে সকলকে তুই-তোকারী করে যাচ্ছে। এই লোকের ডিকশনারিতে তুই ছাড়া আপনি-তুমির কালি উঠে গেছে বোধ হয়।
: সগীর বস, রহমত ভাইকে ডাকলেন কেন? সেও কি একটা চড় দেবে?
: ধুরও যা! অ্যায় কয় কী। খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসেন সগীর আবার। রহমত চড়-থাপ্পড়ের বান্দা না। এত ছোড-খাড কাইজ-কাইম ওরে দেই না।
: তো সে কী করবে। আমার বাঁধন খুলে দেবে?
: বান্দন খুইলা দেবে! আবার খ্যাঁক খ্যাঁক হাসি। দেখ না হেয় কী করে।
: ঠিক আছে সগীর বস। আমার ভীষণ ভয় লাগছে।
: রহমত, চাক্কু রেডি আছে তোর?
: জে বস।
চকচকে একটা ছুড়ি রহমতের হাতে। ভোজবাজির মতো কোত্থেকে পেল কে জানে।
: বাম হাত দিয়া জিহ্বাটা ধরবি। হেরপর ঘ্যাচ কইরা পুরাডা কাইটা দিবি। হারামজাদার তড়পানি থামব তাইলে। বেশি দিগদারি করতাছে।
: জে আচ্ছা বস। এই কাটলাম বইলা।
: বস জিহ্বা কাটলেতো আর কথা বলতে পারব না। তাই একটা কথা জিজ্ঞেস করে নেই যদি সুযোগ দেন।
: কী কথা কইবি ক?
: আপনাকে লোকে মরক্কো সগীর বলে কেন?
বিকট শব্দে হেসে ওঠে সগীর। মানুষের হাসি জিনিসটা হচ্ছে শিল্পের মতন। যেখানে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই দিতে হয়। অথচ এই লোক চার হাজার স্কয়ার ফুটের হাসির অ্যাপার্টমেন্ট খুলে দিয়েছে ছোট্ট করিডরে। এরে মিষ্টি হাসির মোনালিসা আঁকতে দিলে কী করত ভেবে শিহরিত মুহিব। এই ব্যাটা নিশ্চয় জানে না চায়ে পরিমাণের চেয়ে বেশি চিনি দিলে খাওয়া যায় না। অথচ লোকটা এমন জোরে হাসল যে মহৎ শিল্প লাটে উঠে মৃৎশিল্প হয়ে গেল। অজানা ভয়ে কুঁকড়ে যায় মুহিব।
: বিদেশ যাইবার লাগছিলাম। হাসতে হাসতেই বলে সগীর। আফ্রিকা হয়া স্পেন যামু। মরক্কোর ওই পাড়েই স্পেন না? কিন্তু ধরা পইরা গেলাম মরক্কো ছাইড়া সাগরের মইধ্যে। দ্যাশে পাডাই দিল হেরা। হেই থিকা আমার নামও হইল মরক্কো সগীর।
আবার খ্যাঁক খ্যাঁক হাসি, আবার সেই হায়েনা। এই ব্যাটা যে আফ্রিকা ঘুরে এসেছে এতে কোনো সন্দেহ নাই মুহিবের। সঙ্গে অ্যানিমেল সাফারিতে বসে মনের সুখে হায়েনাচর্চা করে এসেছে। হায়েনার হাসি অনুসরণ করে মহা এক্সপার্ট বনে গেছে একটা। অবশ্য, অনুসরণ মানুষের প্রকৃতিদত্ত অভ্যাস। প্রথম দিককার মানুষ হাবিল কাবিলও তাই দেখিয়েছেন। কাকের কবর দেওয়া অনুসরণ করে কাবিলের কার্যক্রম তারই জলন্ত প্রমাণ। একবার চার্লি চ্যাপলিন লুক এলাইক হয়েছিল। আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে, চার্লি চ্যাপলিন ফুটিয়ে তোলার প্রতিযোগিতায় স্বয়ং চার্লিই তৃতীয় হয়েছিলেন। বড়ই আচানক ব্যাপার!
সে যাই হোক, অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে সগীরের সঙ্গে সঙ্গে অন্যরাও হাসছে। তারাও হাসছে অবিকল হায়েনাদের মতো। ওরাতো আর মরক্কো যায়নি। হাসি তাহলে বড়ই সংক্রামক ব্যাধি। অ্যামপ্লিফাই করে ছড়িয়ে দেয় আশপাশে। নিজের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতা ঠিকঠাক রেখেই সংক্রামিত হয় অন্যের মধ্যে।
: সগীর বস, আপনার সাথে ওরাও কি মরক্কো গিয়েছিল?’
: আরে না, ওরা যাইব ক্যান? চুপ, এহন কোনো কথা না। রহমত ওর জিহ্বা কাইটা দে তো। অনেকক্ষণ ধইরা ভেজাল করতাছে।
: বস জিহ্বা কাটলেতো বিরাট অসুবিধা হয়ে যাবে। আমি আর কথা বলতে পারব না। কোন সিনেমায় যেন দেখেছিলাম বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব আনোয়ার হোসেনের জিহ্বা কেটে দেওয়া হয়েছে। উনি কথা বলতে পারছেন না। শুধু কুই কুই করছেন।
: তোরেওতো তাই করমু এহন। তুইও কুকুরের লাহান কু কু করবি।
: তাহলে তো আপনার বিরাট লস হয়ে যাবে, বস।
: আমার লস লইয়া তোরে ভাববার লাগব না। কই রহমত, কাম শুরু কর।
রহমত হামলে পড়ে প্রায়। সুরমা দেওয়া চোখে চকচক করে তাকিয়ে আছে মরক্কো সগীর। মুখের পাশ দিয়ে লালা ঝরছে তার। এই সময়টায় তার বেশ উত্তেজনা হয়। পাশবিক যেকোনো কাজেই তার বিরাট উত্তেজনা। মহা আনন্দে হাত-পা কাঁপে থরথর করে। কথা বন্ধ হয়ে যায়। ঘন ঘন নিশ্বাস পড়তে থাকে। কপালের কাছটা ঘামে। জুলফি বেয়ে গড়িয়ে পড়ে ফোটায় ফোটায় ঘাম। মুখের লালার ব্যাপারটা আসে একেবারে শেষ সময়ে, অতি মোক্ষম মুহূর্তে।
: সগীল বস শেষ কথাটা বলে নেই। এরপর না হয় জিহ্বা কাটুন।
: আচ্ছা কইয়া ফ্যাল তাড়াতাড়ি।
: আমার কথা বন্ধ হয়ে গেলে আপনিতো জানতেই পারবেন না কেন ধরে আনলেন আমাকে। আপনি কত কষ্ট করে প্রশ্ন করবেন। আর আমি শুধু কুই কুই করব। এটা কি ঠিক হবে? বেয়াদবি হয়ে যাবে না?
: এই রহমত খাড়া। তুই ওইহানে ঘোরাঘুরি করতাছিলি ক্যান?
স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে মুহিব। একটু সময় পাওয়া গেল তাহলে। রহমত লোকটার চোখে কোনো দয়া-মায়ার চিহ্ন দেখেনি মুহিব। বোধহীন জড় পদার্থ। কিংবা ঠিক রোবটের মতো। প্রোগ্রাম করে ছেড়ে দিতে হয় শুধু। নিখুঁতভাবে কাজটা করে দেবে। কী করছে সেটা কোনো বিষয় না এদের কাছে। জিহ্বাটা কেটেই ফেলেছিল প্রায়। মুখের মধ্যে জিহ্বাটাকে একটু নেড়েচেড়ে নেয় মুহিব। অক্ষত আছে বলে একটু স্বস্তি বোধ করে।
: কথা কইস না ক্যান?
: বস আপনার প্রশ্ন বুঝিনি। ঘোরাঘুরি করতেছিলাম, কোথায়?
আক্কাসের দিকে তাকায় সগীর। কারণ, আক্কাস আর আরেকজন মিলে ধরে নিয়ে এসেছে মুহিবকে। উদাস মনে হাঁটতে ছিল মুহিব। হঠাৎ কোন গর্ত থেকে এই দুজনের আগমন।
: বস, এই ব্যাডা তহুরার ঘরের আশপাশে ঘুর ঘুর করতাছিল।
: তহুরার ঘরের কাছে তোর কী?
: তহুরা কে বস?
: এই আক্কাস, ওরে চড় লাগাত।
বলতে যতক্ষণ চড়টা তার চেয়ে তাড়াতাড়ি আসে। এবার অবশ্য আগেরটার চেয়ে একটু কম হয় তীব্রতা। ভূমিকম্পের প্রথম ধাপের পরবর্তী ধাপের অবস্থা।
: এহন ক, তহুরার ওইহানে কী?
: বস বিশ্বাস করেন। তহুরা কে আমি চিনি না।
: তহুরারে চিনস না, তয় ওইহানে গেছিলি ক্যা?
: এমনি বস। আমার স্ত্রী রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেছে গতকালকে। পই পই করে বলে দিয়েছে আর আসবে না। মনটা তাই ভীষণ খারাপ বস। কমলাপুর স্টেশন ধরে হাঁটতেছিলাম। হাঁটতে হাঁটতে কখন কোথায় গেছি বলতে পারব না বস।
: স্টেশনে হাঁটতে আইসা তহুরার ওইখানে যাবি ক্যা। অয় মিছা কথা কইতে আছে। ওর জিহ্বা কাইটা দেওন লাগব। ওই রহমত কাম শুরু কর।
: বস বস, সত্যি বলতেছি। তহুরা কে আমি জানি না। মনটা খুবই বিক্ষিপ্ত ছিল। বোঝেনইতো মেয়েলোকের ব্যাপার। কাঁদ কাঁদ স্বরে বলে মুহিব।
দুনিয়াতে কোনো পুরুষই স্ত্রীর দেওয়া অপমান সইতে পারে না। মুহিব নিশ্চিত তার এই দুর্দশা দেখে ওনার মন গলবেই। পুরুষ বলে কথা।
: তুই এমনি এমনিই ওইহানে গেছিলি?
: অতি সত্যি কথা বস। মিথ্যা বললে জিব কেটে নেবেন। তবে আমি ঠিক বুঝলাম না, ওখানে গেলে আপনার সমস্যা কী?
: হেইডা তুই বুঝবি না।
: ঠিক বলেছেন বস। আমার বুদ্ধি কম। তাই সব সময় কম বুঝি। আপনার ক্ল্যাসিক মারেফত বোঝাতো বিরাট কঠিন বিষয়।
: হাছা কইছোস। আমার বুদ্ধি গাছির ছ্যানের ধারের মতো।
: সগীর বস, আমার মনে হয় আপনার বুদ্ধি মহাসাগরের মতো বিশাল।
: তাতো হইবই। বুদ্ধি আছে দেইখাইতো এত বড় ব্যবসা খুলবার পারছি।
: শুনে ভালো লাগল বস। তাইলে আমি ওইখানে যেতে পারব আবার, তাই না?
: এক্কেরেই না। কুনোসময় ওইহানে যাবি না। ওইডা আমার গোপন জায়গা।
: ও আচ্ছা।
: তুই কেমনে বুঝবি রে! আমার এই অফিসডা দেখতাছোস না। এইডা হইল গিয়া শোয়ের মতন। আমার আসল মালতো সব এই তহুরার ঘরে।
: মাল মানে কি বস? চাল-ডাল জাতীয় কিছু?
: বলদাডায় কয় কী দ্যাখ? খ্যাঁক খ্যাঁক শোনা যায় আবার। আরে বেকুব, চাইল-ডাইল দিয়া আমি কী করুম। আমার বিজনেস হইল মালের।
: ও বুঝছি বস। চাল-ডাল মাল না। মাল হলো অন্য জিনিস।
: এক্কেরে রাইট। মাল হইল গিয়া ফুট্টুস। আঙুল দিয়ে গুলি করার মতো দেখায় সগীর। আমার পিস্তল আর কাটা আছে। সব বিদেশি মাল। দেশি অস্ত্র আমি বেচি না।
: আপনি অস্ত্র বেচেন! বলেন কী বস! আপনিতো কামেল লোক।
: খালি অস্ত্র না। আমি মাদকও বেচি। আমার ওইহানে হিরোইন থিকা গাঁজা সব আছে। খালি ইয়াবা রাহি না। ওইবার ওপর পুলিশের নজর বেশি।
: সব ওই তহুরার ঘরে? আল্লাহ বাঁচিয়েছে। কসম খোদার বস, আর কোনো দিন ওইদিকে যাব না।
: আর কোনো দিন গেলেও লাভ হইব না। তোরে এত কিছু কইয়া ফালাইছি। এহন কি আর এমনি এমনি ছাইড়া দেওন যায়। তয় জিহ্বা কাইটা ছাইড়া দেওন যায়। তর বউয়ের লাইগা কষ্ট দেইখা মায়া পড়ছে। তাই মাইরা ফালাইলাম না।
: আপনার অনেক দয়া বস। সব মাল তহুরার ওইখানে। আর আপনি থাকেন এইখানে। তাহলে ওই মাল পাহারা দেব কে?
: পাগলে কয় কি। ওইহানে আমার লোক আছে না। কেউ গেলে ঝাঁজরা কইরা দিব ওরা।
: পুলিশ গেলেও?
: পুলিশ যাইব ক্যা? পুলিশ কী জানে নাহি?
: যদি কোনোভাবে পুলিশ জেনে যায়?
: হের লেইগাইতো তোর জিহ্বা কাইটা দিমু। কাউরে কইতে পারবি না। নে রহমত কাম শুরু কর। ম্যালা কথা হইছে। এত কথার টাইম নাই আমার।
ততক্ষণে বিদ্যুৎ খেলে গেছে মুহিবের শরীরে। প্রশিক্ষণ পাওয়া গোয়েন্দা সে। দারুণ দক্ষতায় কথা বলতে বলতে হাতের বাঁধন খুলে ফেলেছিল সে। অপেক্ষায় ছিল মোক্ষম সময়ের। ঝট করে শরীর বাঁকিয়ে রকেটের গতিতে রহমতের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে সে। এক মোচড়ে চাকুটা হাতে নিয়ে হামলে পরে সগীরের ওপর। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই চাকুটা সগীরের গলায় ধরে সে।
: কেউ সামনে আসবে না। তাহলে তোমাদের বসের গলা ধর থেকে আলাদা করে দেব। আচমকা এমন ঘটনায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে তারা। তারপরও রহমত এগিয়ে আসার চেষ্টা করে।
: উঁহু, একটুও নড়বে না রহমত। তাহলে দেখ কী করি। ছুরিটা সগীরের গলায় হালকা ছোঁয়ায় সে। ধারালো ছুরি, রক্তের রেখা দেখা যায় সেখানে। ব্যথায় কুঁচকে উঠে সগীর।
: রহমত আগাইস না। মুহিবের দিকে ভয়ংকর চোখে তাকায় সে। তোরে জ্যান্ত পুইতা ফালামু আমি। তুই জানস না কী করতাছোস।
: সে পরে দেখা যাবে বস। টেবিল থেকে মোবাইলটা উঠিয়ে নেয় মুহিব। ওকে ধরে এনে পকেট সার্চ করে শুধু মোবাইল আর ওয়ালেটটা পেয়েছিল ওরা। সেগুলো টেবিলের ওপরই রেখেছে সগীর। মোবাইলের একটা বাটনে চাপ দেয় মুহিব। কয়েক সেকেন্ডমাত্র লাগে। দশ-বারোজন পুলিশের ইউনিফর্ম পরা মানুষ ঢুকে সেখানে। ওরা আশপাশেই ওত পেতে ছিল। সংকেত পাওয়া মাত্রই চলে এসেছে।
: আসাদ, সব কটাকে অ্যারেস্ট করো। রফিক তুমি সাতজনকে নিয়ে এখনই কোণার সেই জায়গাটাতে যাও। বড় ঘরটাতে ঢুকবে প্রথমে। সেখানে অবৈধ অনেক মালামাল আছে। সাবধান! গোলাগুলি হতে পারে।
: ইয়েস স্যার। স্যালুট দিয়ে বেরিয়ে যায় সাব ইন্সপেক্টর রফিক।
: আ-আমনে পুলিশের লোক। মরক্কো সগীরের মুখ দিয়ে এই প্রথম আপনি বের হয়েছে।
: ইয়েস মি. সগীর। আমি এএসপি মুহিব সাগর। অনেকগুলো গোপন অপারেশনের পর আজকে হাতেনাতে ধরেছি আপনাকে। কোনো কথা থাকলে আদালতে বলবেন। আর একটা তথ্য, আপনার সমস্ত কথা আমরা রেকর্ড করেছি। তাই সব সাক্ষ্য প্রমাণ আমাদের হাতেই থাকল।
নিস্তেজ হয়ে গেছে সগীর। সাগর নয় শান্ত পুকুরের জলের মতো নিশ্চুপ। শুধু কাঁপছে ভয়ে। কী হবে সে চিন্তা করে শুধুই কাঁপছে সে।
...
আবু সাইদ লিপু: ক্যালগেরি, কানাডা। ইমেইল: <abu_sayed_33@hotmail. com>