মালয়েশিয়ার পাহাং বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশিদের মিলনমেলা

সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনা
সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনা

বাঙালি জাতির ইতিহাসে গৌরবোজ্জ্বল এক অধ্যায় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ। ১৯৭১ সালে বর্বর ও অত্যাচারী পাকিস্তানি হানাদার সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর ঘাতক আলবদর–রাজাকারদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সফল পরিসমাপ্তি ঘটে ১৬ ডিসেম্বর। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের বহু আকাঙ্ক্ষিত বিজয় অর্জিত হয়। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ১৬ ডিসেম্বর তাই সমগ্র বাঙালি জাতির জীবনে যুগপৎ বেদনাবিধুর ও গৌরবের দিন।

বিশেষ এই দিনটি গভীরভাবে স্মরণ করার জন্য প্রতিবছরের মতো এবারেও মালয়েশিয়ার পাহাং বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ কমিউনিটি দুই দিনব্যাপী এক অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার শেষের ব্যস্ততার কারণে এবারের বিজয় দিবসের মূল অনুষ্ঠানটি ১৬ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ ডিসেম্বর আয়োজন করা হয়। ২৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল মাঠে বিজয় দিবস প্রীতি ফুটবল খেলার মাধ্যমে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষক ও ছাত্রদের সমন্বয়ে গঠিত সবুজ দল ও লাল দলের মধ্যে অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক ফুটবল খেলা হয়। উপস্থিত বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যেও তা দারুণ আলোড়ন সৃষ্টি করে। খেলায় লাল দল ৩-১ গোলে বিজয়ী হয়। ফুটবল খেলাটি সামগ্রিকভাবে পরিচালনা করেন অধ্যাপক দেলোয়ার ভাই ও ড. কাফি ভাই।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী কমিউনিটির সদস্যবৃন্দ

নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশকে পরিচিত করার জন্য ২৫ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের আসতাকা মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় বাচ্চাদের চিত্রাঙ্কন উৎসবের। ছোট ছোট বাচ্চারা রংতুলিতে তাদের কল্পনার বাংলাদেশকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তোলে। বাচ্চাদের আঁকা ছবিগুলো পরে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয় যা উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করে।

এই আয়োজনের অন্যতম আকর্ষণীয় দিক ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি শিক্ষক–শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিজয় আমার অহংকার। অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন থেকে তিলাওয়াত করেন জাহান আলী। এরপর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ব্যক্তিজীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিষয়ে বক্তব্য দেন দেলোয়ার ভাই। সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত গাওয়ার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এতে জায়েদ ও আইরিন ভাবির শ্রুতিমধুর উপস্থাপনা, ছোট ছোট বাচ্চাদের সমবেত কণ্ঠে গাওয়া ‘সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তে তুমি’ ও ছোট্টমণি ফাইয়াজের আবৃতি ‘রৌদ্র লেখে জয়’ অনুষ্ঠানটিকে প্রাণবন্ত করে তোলে। এরপর একে একে ছোঁয়ার গাওয়া ‘সুন্দর সুবর্ণ’, নওরীনের ‘সেই রেল লাইনের ধারে’ সামিউলের ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে’, ড. সামিউর ভাইয়ের ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি’ গান এবং অভি ভাবি ও লাভলি ভাবির আবৃতি, সব মিলিয়ে দেশাত্মবোধের ছোঁয়ায় পুরো অনুষ্ঠানটি এক অনন্য মাত্রা যোগ করে।

ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণকারী সবুজ দল ও লাল দলের খেলোয়াড়বৃন্দ
ফুটবল খেলায় অংশগ্রহণকারী সবুজ দল ও লাল দলের খেলোয়াড়বৃন্দ

অনুষ্ঠান শেষে ফুটবল খেলার বিজয়ী ও বিজিত দল এবং চিত্রাঙ্কন উৎসবে অংশগ্রহণকারী বাচ্চাদের পুরস্কার বিতরণ করেন অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।

নিজের আঁকা ছবি হাতে বাচ্চারা
নিজের আঁকা ছবি হাতে বাচ্চারা

সবশেষে বিশেষ নৈশভোজ ও কেক কাটার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি ঘটে। দেলোয়ার ভাই, ড. কাফি ভাই, ড. সামিউর ভাই, বশির ভাই, কামরুল, জাহান ও সামিউলসহ সকল শিক্ষার্থীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে অনুষ্ঠানটি সফলভাবে সম্পন্ন হয়। প্রবাস জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝেও দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় সকলে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করে আরও একবার দেশের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করেন। আমরা যেখানেই থাকি না কেন আমাদের হৃদয়ে থাকে বাংলাদেশ।

বাচ্চাদের সমবেত কণ্ঠে দেশের গান পরিবেশনা
বাচ্চাদের সমবেত কণ্ঠে দেশের গান পরিবেশনা

এ কে এম আসিফ ইকবাল (পার্থ): সহকারী অধ্যাপক, পাহাং বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া। ইমেইল: <[email protected]>