কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ

জাল ভিসা
জাল ভিসা

অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের ভিসা জাল হওয়ার ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। দেশটি থেকে জাল ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদের পর এ তথ্য সামনে এসেছে। এই জাল ভ্রমণ ভিসা ইস্যু করার অভিযোগ উঠেছে ক্যানবেরার বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রথম সচিব নাজমা আক্তারের বিরুদ্ধে। ঢাকা বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ নাজমা আক্তারের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দাপ্তরিকভাবে জানিয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক বিচার-বিশ্লেষণের পর তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে হাইকমিশন সূত্রে জানা গেছে।

ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে বাংলাদেশের জাল ভিসাধারী ছয়জন মিয়ানমারের নাগরিককে প্রথম আটক করা হয় সদ্য বিদায়ী বছরের ২০ ডিসেম্বর। তখন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ পুলিশের ইমিগ্রেশন বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপারকে দেওয়া এক চিঠিতে (স্মারক নম্বর ৮৪১৭ /ইমিগ্রেশন) জানানো হয়, অস্ট্রেলিয়া থেকে ছয়জন মিয়ানমারের নাগরিক দেশটির ট্রাভেল ডকুমেন্টে বাংলাদেশের ভিসা নিয়ে আগমনী টার্মিনালে আসে। তাদের ভ্রমণ দলিল সন্দেহজনক মনে হওয়ায় ট্রাভেল ডকুমেন্টে থাকা বাংলাদেশের ভিসা স্ক্যান করে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনে পাঠানো হয়। বাংলাদেশ হাইকমিশন ইমেইলের মাধ্যমে ভিসাগুলো সঠিক নয় বলে জানায়।

অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন কর্তৃক ইস্যুকৃত মেশিন রিডেবল ভিসা
অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশন কর্তৃক ইস্যুকৃত মেশিন রিডেবল ভিসা

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘যাত্রীদের বাংলাদেশি ভিসা সংগ্রহের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায় অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত মিয়ানমারের নাগরিক সাইফুল মারফত জানতে পেরে তারা ক্যানবেরা হাইকমিশনে কর্মরত সহকারী সেক্রেটারি নাজমা আক্তারের নিকট পোস্ট অফিসের মাধ্যমে ট্রাভেল ডকুমেন্ট এবং ১৫০ ডলার পরিশোধ করে ভিসা সংগ্রহ করেছেন।’

ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের জাল ভিসাধারী প্রায় ২১ জনকে আটকের ঘটনা ঘটে। জাল ভিসাধারীরা সবাই অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত রোহিঙ্গা শরণার্থী। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কে বা কারা জাল ভিসা ইস্যু করছে এ নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করে। অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ সুফিউর রহমান ওই সময় এই প্রতিবেদকের কাছে ঘটনার সত্যটা নিশ্চিত করেন। এ ছাড়া, ধারণকৃত এক অডিওতে তিনি বলেন, ‘এএফপি (অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ) হাইকমিশনের কাছে ভিসাগুলো জাল কিনা তা জানতে চেয়েছে। নির্বাচন পরবর্তী যে ব্যস্ততা, এটা একটু কমে গেলে এ নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বাংলাদেশে আটক ও পরে অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে এসেছেন, এমন একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাল ভিসাধারী রোহিঙ্গা মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘বিমানবন্দরে যখন জাল ভিসার অভিযোগে আটকা পড়ি, তখনই আমার ভিসা জাল এ বিষয়টি জানতে পারি। বিমানবন্দর থেকেই অস্ট্রেলিয়ায় ফেরত আসার পর জাল ভিসাটি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার পাশাপাশি এও জানতে পারি, আমাদের জাল ভিসা দেওয়ার বিষয়টি পরিচালনা করেছেন নাজমা আক্তার।’ ঢাকা বিমানবন্দর থেকে ফেরত আসা রোহিঙ্গারা অস্ট্রেলিয়ায় পুলিশের কাছে প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ জানিয়েছেন বলেও জানান তাঁরা।

ক্যানবেরার বাংলাদেশ হাইকমিশন
ক্যানবেরার বাংলাদেশ হাইকমিশন

নাজমা আক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৪ সাল থেকে তিন শ থেকে এক হাজার অস্ট্রেলীয় ডলারের বিনিময়ে তিনি জাল ভিসা দিয়ে আসছেন। ভিসাগুলোয় হাইকমিশনের দ্বিতীয় সচিব শামীমা পারভীনের নকল স্বাক্ষর ব্যবহারেরও অভিযোগ রয়েছে।

নাজমা আক্তার এক অডিও কথোপকথন জানিয়েছেন, ‘আমাকে নিয়ে যতই নেতিবাচক কথা বলা হোক, আমি যদি খারাপ কাজ করেও থাকি তবে শেষমেশ দোষ হবে হাইকমিশনের।’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে নাজমা আক্তার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'আমি সরকারের একটি সংবেদনশীল অংশে দায়িত্বরত। সরকারের অনুমতি ছাড়া জনসম্মুখে কিছুই বলতে পারি না। তবে অনুমতি পেলে অনেক কিছুই বলব।’

জানা গেছে, অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখছে দুই দেশেরই কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ হাইকমিশনের সূত্রে আরও জানা গেছে, সরকারের সিদ্ধান্তে নাজমা আক্তারকে বাংলাদেশে চলে যেতে হতে পারে।