জেদ্দায় বাংলাদেশ স্কুলের সমস্যা নিয়ে আলোচনা

সভায় অতিথিরা
সভায় অতিথিরা

সৌদি আরবের জেদ্দায় বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির নানা সমস্যা ও এই সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত শুক্রবার (১১ জানুয়ারি) স্কুল প্রাঙ্গণে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে জেদ্দায় এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কার্যক্রম শুরু করে। দুই বছর আগেও এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল আড়াই হাজারের বেশি। কিন্তু দেশটির অর্থনৈতিক মন্দার কারণে প্রবাসী অনেকে চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে গেছেন। অনেকে পরিবার দেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ফলে বর্তমানে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সংখ্যা নেমে এসেছে ৭৫০ জনে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব ব্যয়ভার বহন করা হয় শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি দিয়ে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় টিউশন ফির অর্থে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালনা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া, রয়েছে স্থায়ী জায়গার সমস্যা।

সভায় উপস্থিতি
সভায় উপস্থিতি

সাধারণ সভায় একাধিক অভিভাবক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির এমপিওভুক্তির জোর দাবি জানান। অভিভাবকদের মধ্যে বক্তব্য দেন মামুনুর রহমান, প্রকৌশলী নুরুল আমিন, নুরুল ইসলাম ও মোহাম্মদ শাহজাহান প্রমুখ।

মামুনুর রহমান তার বক্তব্য বলেন, পড়ালেখার অসুবিধা হলে তার সন্তানদের দেশে পাঠিয়ে দিতে হবে। নুরুল আমিন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহযোগিতা প্রয়োজন। নুরুল ইসলাম বলেন, সরকার সহযোগিতার হাত বাড়ালে আমাদের এই প্রতিষ্ঠানটিকে ফুলে ফলে আরও সুশোভিত করতে পারবে। স্থায়ী নিজস্ব জায়গার ব্যবস্থা করা সম্ভব হলে সমস্যা অনেক কমে যাবে। মোহাম্মদ শাহজাহান শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশসহ সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার ব্যাপারে অধিকতর যত্নবান হওয়ার প্রতি জোর দেন। তিনি দেশ থেকে অভিজ্ঞ নতুন শিক্ষক আনার ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিটির প্রতি আহ্বান জানান। তারা সবাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির এমপিওভুক্তের দাবি জানান।

বক্তব্য দিচ্ছেন একজন অভিভাবক
বক্তব্য দিচ্ছেন একজন অভিভাবক

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদ চেয়ারম্যান খন্দকার আবুল কালাম আজাদ তার বক্তব্যে স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে আর্থিক ঝুঁকির বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠান সৌদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আদলে গড়া নয়। ভাড়া করা আবাসিক ভবনে স্কুল পরিচালিত হয়ে আসছে। কিন্তু এখন আর কোনোভাবেই আবাসিক ভবনে স্কুল পরিচালনা করা সম্ভব নয়। এ দেশের স্কুল কোড অনুযায়ী নিজস্ব জায়গায় ভবন নির্মাণ করে স্কুলের কার্যক্রম চালাতে হবে। পরিচালনা পরিষদের সদস্যরা জায়গা দেখছেন। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা না থাকা। তাই এখনই কোনো জমি ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে না। আরও অনেক সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধানের প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে।

জেদ্দায় নিয়োজিত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল এফ এম বোরহান উদ্দিন তার বক্তব্যে জমি ক্রয় ও নিজস্ব জায়গায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য কনস্যুলেটের পক্ষে যা করণীয় তা করার আশ্বাস দেন।

বক্তব্য দিচ্ছেন একজন অভিভাবক
বক্তব্য দিচ্ছেন একজন অভিভাবক

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হামদুর রহমান তার বক্তব্যে পড়ালেখার গুণগত মানের শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিযোগিতামূলক ও স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগসহ শিক্ষার মান উন্নয়নে অভিভাবকদের পরামর্শ কামনা করেন।

বাৎসরিক সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন খন্দকার আবুল কালাম আজাদ। প্রধান অতিথি ছিলেন এফ এম বোরহান উদ্দিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কনস্যুলেটের শ্রম কাউন্সেলর আমিনুল ইসলাম, কাউন্সেলর আলতাফ হোসেন, কাউন্সেলর মুজিবুর রহমান, প্রথম সচিব কে এম সালাহউদ্দিন, কার্যালয় প্রধান মোস্তফা জামিল খান, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের গভর্নিং বোর্ডের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, বাংলা মাধ্যম স্কুলের গভর্নিং বোর্ড সদস্য আবদুল মান্নান, গোলাম মোরশেদ ও এম এম সেলিম প্রমুখ।