ওন্টারিওর লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সঙ্গে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেলের সাক্ষাৎ

এলিজাবেথ ডাউডসওয়েলের সঙ্গে নাঈম উদ্দিন আহমেদ
এলিজাবেথ ডাউডসওয়েলের সঙ্গে নাঈম উদ্দিন আহমেদ

কানাডার টরন্টোয় নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল নাঈম উদ্দিন আহমেদ ওন্টারিওর লেফটেন্যান্ট গভর্নর এলিজাবেথ ডাউডসওয়েলের সঙ্গে তাঁর কুইন পার্কের কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেছেন। গত বুধবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে তিনি তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

সাক্ষাতে আলোচনাকালে নাঈম উদ্দিন আহমেদ উল্লেখ করেন, বর্তমান সরকার কানাডার সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে। এ প্রসঙ্গে তিনি অবহিত করেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর আমন্ত্রণে ২০১৬ ও ২০১৮ সালে কানাডা সফর করেন।

এলিজাবেথ ডাউডসওয়েল টরন্টো শহরে বাংলাদেশের নতুন কনস্যুলেট সম্পর্কে জানতে চাইলে নাঈম উদ্দিন আহমেদ অবহিত করেন, এই কনস্যুলেট স্থাপনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের একটি প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়েছে। বাংলাদেশ কনস্যুলেট ওন্টারিওসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের কল্যাণ ও কনস্যুলার সেবার পাশাপাশি বাংলাদেশি ও কানাডার নাগরিকদের মধ্যে যোগাযোগ সৃষ্টি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে কাজ করে যাবে।

এলিজাবেথ ডাউডসওয়েল মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দান ও মানবিক সাহায্য প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। নাঈম উদ্দিন আহমেদ রোহিঙ্গা সংকটে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কানাডা সরকারের অবস্থান ও সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

আলোচনার একপর্যায়ে কনসাল জেনারেল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, গত দশ বছরে মাথাপিছু আয় ৫৯৮ থেকে ১৭৫১ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। দেশের জনগণের গড় আয়ু ৬৬.৫ বছর থেকে ৭২.৭ বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, জিডিপির আকার অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪৩তম অর্থনীতির দেশ। ২০১৩ সালে যা ছিল ৫৮তম। মাত্র পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৫টি দেশের অর্থনীতিকে অতিক্রম করেছে।

এলিজাবেথ ডাউডসওয়েলের সঙ্গে সস্ত্রীক নাঈম উদ্দিন আহমেদ
এলিজাবেথ ডাউডসওয়েলের সঙ্গে সস্ত্রীক নাঈম উদ্দিন আহমেদ

লেফটেন্যান্ট গভর্নর অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে বাংলাদেশের সাফল্য সম্পর্কে শোনেন এবং এই সাফল্যের মূল কারণ জানতে চান। জবাবে কনসাল জেনারেল জানান, এমন সাফল্যের একমাত্র কারণ হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসাধারণ নেতৃত্ব। কনসাল জেনারেল আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম-আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার প্রচেষ্টা বাংলাদেশের মানুষকে উজ্জীবিত ও একতাবদ্ধ করেছে।

কনসাল জেনারেল জানান, বঙ্গবন্ধুর একজন স্বঘোষিত খুনি নুর চৌধুরী বৃহত্তর টরন্টোতে বসবাস করছেন। নুর চৌধুরী ও তার দোসররা ইতিহাসের নিকৃষ্টতম মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে। তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের জনগণ চায় জাতির পিতার হত্যাকারী নুর চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে তার প্রাপ্য শাস্তি প্রদান করা হোক। কনসাল জেনারেল লেফটেন্যান্ট গভর্নর এলিজাবেথ ডাউডসওয়েলের মাধ্যমে নুর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে কানাডা সরকারের সহযোগিতার আহ্বান জানান।

এ ছাড়া, বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ও লেফটেন্যান্ট গভর্নর বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা, কানাডায় অর্থনীতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অবদান, কানাডায় আরও বেশি বাংলাদেশি ছাত্রদের পড়াশোনার সুযোগ সৃষ্টি ও অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

সবশেষে কনসাল জেনারেল নাঈম উদ্দিন আহমেদ লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা বই দুটি উপহার দেন। কানাডার টরন্টো শহরে বাংলাদেশে কনস্যুলেট শুরুর পর এটাই লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সঙ্গে কোনো বাংলাদেশের কনসাল জেনারেলের প্রথম সাক্ষাৎ। এ সময় কনসাল জেনারেলের স্ত্রী ডালিয়া পারভিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, সাংবিধানিক রাজতন্ত্র অনুযায়ী ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ কানাডার রাষ্ট্রপ্রধান। লেফটেন্যান্ট গভর্নর প্রদেশে রানির প্রতিনিধিত্ব করেন। সাংবিধানিকভাবে লেফটেন্যান্ট গভর্নর প্রদেশের প্রধান ও প্রিমিয়ার প্রাদেশিক সরকার প্রধান হিসেবে কাজ করেন। বিজ্ঞপ্তি