কফি শুধুই কফি

লেখিকা
লেখিকা

কাজে দুই কাপ কফি খাওয়াই লাগে আমার। সকালে পুরোপুরি জেগে ওঠার জন্য আর দুপুরে লাঞ্চের পর জেগে থাকার জন্য। পঞ্চাশ বছরের পুরোনো যে হাসপাতালে কাজ করি, তার প্রবেশপথে একটা কফি কার্ট আছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা। যত মজার কফি সব পাওয়া যায়।

এই কফি কার্ট আমার মতো কিছু কফিপ্রেমীর চালিকা শক্তি। রবার্ট কাজ করত বেশ কয়েক বছর এই কফি কার্টে। এত মিষ্টি তার ব্যবহার। সবার কফিতে হার্ট একে দেওয়া ছিল তার প্যাশন। হঠাৎ একদিন শুনি, কাজ শেষে বাসার যাওয়ার সময় তাঁর হার্ট বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনেক মাস তাঁকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। কাজে আসেনি অনেক দিন। মাঝে মাঝে শুনি রবার্ট সবকিছু ভুলে যায়, চিনতে পারে না কাউকে। হঠাৎ সেদিন শীতের সকালে দেখি রবার্ট। আমাকে দেখেই ফোকলা মুখে তাঁর সে কী হাসি। আমার ক্যারামেল লটে সঙ্গে সঙ্গে রেডি। বলল, ডক নাতিদের কাছে চলে যাচ্ছি সাউথ ক্যারোলিনা। তোমাদের কথা মনে পড়বে খুব। চিরদিন হাসিখুশি থেকো এই ওল্ড ফ্রেন্ডের মতো।

এর মাঝে বছরখানেক আগে নতুন হাসপাতাল চালু হলো। কর্তৃপক্ষ সেখানে কোনো কফি কার্ট অ্যালাউ করবে না। ক্যাফেটেরিয়ার পচা কফি খেয়ে থাকতে হবে। আমরা নাকি ইঁদুরকে উৎসাহিত করছি কফি চেয়ে। আমি, কার্ডিও সার্জন, একজন ওরথো পিয়ে, আরও কয়েকজন মেডিসিনের ডাক্তার যে যার ভাষায় লাফিয়ে উঠলাম, ‘কইলেই হইল! আমরা রাতে কাজ করি না? অখাদ্য কফি খেয়ে কাজ করব মানে?’

তারপর সবাই মিলে সাইন জোগাড়ে নেমে পড়লাম। কয়দিন পর সার্জন এসে বললেন, ‘I got my hands slapped, আমি স্টার বাকস হয়ে আসব, কিন্তু কফির জন্য ঝাড়ি খেতে পারব না।’ বদ ছেলেগুলো স্টারবাকস হয়ে কাজে আসতে লাগল আর বদ মেয়েগুলো কফি মেশিন কিনে ফেলল। আর আমি শুরু করলাম পিটিশন।

জয়েন্ট কমিশন হাসপাতাল পরিদর্শন করতে এল কয়েক দিন পর। বন্ধুবৎসল স্পাইন সার্জন বাইরে থেকে কড়া বিশাল কফির কাপ নার্সদের স্টেশনে রেখে সবেমাত্র রোগী দেখতে গেছেন। একজন নার্স সরিয়ে রাখলেন কফির কাপ। সার্জন ফিরে এসে দেখেন তাঁর কফির কাপ নাই। তাঁর ঝাঁকড়া চুলের রাগী নাচ আগে কখনো দেখিনি। চার্জ নার্স যত বোঝাতে চেষ্টা করেন, তিনি তত রাগেন। ‘তোমরা কি এটাকে স্টারবাকসের চার টাকার কফি পেয়েছ? হুম আট ঘণ্টা ধরে সার্জারি কী তোমরা করবা? আজকে কল করে দেখব, কে না করে কফি খেতে।’

মনে মনে ভাবলাম আমি আর কত বড় পাগল, এর চেয়েও বড় পাগল আছে। সার্জন সেদিন কাকে কাকে কল করেছিলেন জানি না। শুনেছি নতুন বছরে কফি কার্ট চালু হচ্ছে নতুন হাসপাতালে। গুড জব নার্সেস। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে...।
...

ফারহানা আহমেদ: চিকিৎসক।