ওমানে বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণে ফুটবল টুর্নামেন্ট

ট্রফি হাতে হামিরিয়া ফুটবল একাদশের অধিনায়ক
ট্রফি হাতে হামিরিয়া ফুটবল একাদশের অধিনায়ক

ওমানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অংশগ্রহণে বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাবের গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের এবারের আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে হামিরিয়া ফুটবল একাদশ। চতুর্থবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নের রেকর্ডও গড়েছে দলটি। গত শুক্রবার (১ ফেব্রুয়ারি) দেশটির রাজধানী মাস্কাটে অনুষ্ঠিত হয় এই টুর্নামেন্টের ফাইনাল।

বাংলাদেশের মতো ওমানেও ফুটবল জনপ্রিয় খেলা। উট দৌড় ও ডেজার্ট সাফারির মতো মরুর ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা ছাপিয়ে অনেক আগেই এ দেশে ফুটবলের প্রসার ঘটে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ওমান জাতীয় দলের অংশগ্রহণ যেমন নিয়মিত, তেমনি দেশটিতে প্রতিবছর জাতীয় লীগের উন্মাদনায় মেতে ওঠেন ওমানবাসী। পিছিয়ে নেই প্রবাসীরাও। কমবেশি সব দেশের প্রবাসীদের আছে ফুটবল ক্লাব। বাংলাদেশিদেরও আছে কয়েকটি ফুটবল ক্লাব। এ ছাড়া আছে এলাকাভিত্তিক দল। ওমানপ্রবাসী বাংলাদেশিদের অন্যতম বিনোদন মাধ্যম ফুটবল।

২০০৮ সালে বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাবের উদ্যোগে যাত্রা শুরু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের। মূলত কমিউনিটির এলাকাভিত্তিক দলগুলোই এতে অংশ নিয়ে থাকে। ১০ বছরের সাফল্যে এই টুর্নামেন্ট এখন প্রবাসী বাংলাদেশিদের জনপ্রিয় ইভেন্টে পরিণত হয়েছে।

গালফ এক্সচেঞ্জের টাইটেলে গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টের এবারের আসরের শুরু গত ২৮ ডিসেম্বর। অংশ নেয় ৮টি বাংলাদেশি দল। প্রাথমিক পর্ব থেকে শেষ পর্যন্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে হামিরিয়া একাদশ ও কুরুম রয়্যাল বেঙ্গল আয়ান্স উঠে আসে ফাইনালে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওয়াদি কবির এলাকার মাস্কাট ক্লাব মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ফাইনাল।

হামিরিয়া ফুটবল একাদশের খেলোয়াড়েরা
হামিরিয়া ফুটবল একাদশের খেলোয়াড়েরা

দুই দলই ছিল শক্তিশালী। তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জমে ওঠে ফাইনাল। নির্ধারিত সময়েও কোনো দলই পায়নি গোলের দেখা। গোলশূন্য ড্রর পর টাইব্রেকারে গড়ায় খেলা। টাইব্রেকারে নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন হামিরিয়ার গোলরক্ষক ও অধিনায়ক শিমুল দে মানিক। টাইব্রেকারে তিনি ঠেকিয়ে দেন বিপক্ষের চাটি গোল। তার এই নৈপুণ্যে ৩-১ গোলে জয় পায় হামিরিয়া। শিরোপা অক্ষুণ্ন রেখে হ্যাটট্রিকের রেকর্ডটাও গড়ে ফেলে তারা। মাঠভরা প্রবাসী বাংলাদেশিরা দারুণ উপভোগ করেন খেলা।

ব্যক্তিগত অর্জনেও পিছিয়ে নেই দলটি। দলের স্ট্রাইকার নুর উদ্দিন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় ও অধিনায়ক শিমুল দে মানিক সেরা গোলরক্ষকের পদক পেয়েছেন। রানার আপ কুরুম রয়্যাল বেঙ্গল আয়ান্সের অধিনায়ক মোহাম্মদ কাইয়ুম নির্বাচিত হন ফাইনালের ম্যান অব দ্য ম্যাচ। আর স্ট্রাইকার জাবেদ নির্বাচিত হন সর্বোচ্চ গোলদাতা।

খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণ করেন স্পনসর গালফ এক্সচেঞ্জের প্রধান নির্বাহী ইফতেখার উল হাসান চৌধুরী। সঙ্গে ছিলেন বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাবের সভাপতি সিরাজুল হক, সহসভাপতি রেজাউল করিম ও আজিজুল হক ও সাধারণ সম্পাদক এম এন আমিনসহ অন্য কর্মকর্তারা। ট্রফি ছাড়াও চ্যাম্পিয়ন দলকে ৬০০ ওমানি রিয়াল ও রানার আপ দলকে ৪০০ ওমানি রিয়াল প্রাইজমানি দেওয়া হয়।

কর্মকর্তাদের সঙ্গে খেলোয়াড়েরা
কর্মকর্তাদের সঙ্গে খেলোয়াড়েরা

দলের এমন পারফরম্যান্সে দারুণ খুশি হামিরিয়া ফুটবল একাদশের কর্মকর্তারা। সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মান্নান বলেন, খেলোয়াড়দের কেউ ভবিষ্যতে ওমান জাতীয় লীগের কোনো দলের হয়ে খেলার সুযোগ পাবে, দেশের সুনাম বাড়াবে এমন স্বপ্ন আমাদের। তাদের দক্ষতা দেখে আশা রাখি একদিন বাস্তব হবে এই স্বপ্ন।

উল্লেখ্য, মাস্কাটের হামিরিয়া এলাকার বসবাসরত বাংলাদেশি তরুণদের নিয়ে ২০০৫ সালে যাত্রা শুরু হামিরিয়া ফুটবল একাদশের। ২০০৮ সালে সোশ্যাল ক্লাবের গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের প্রথম আসরে রানারআপ হয় তারা। ২০১০ সালে চ্যাম্পিয়ন ও ২০১২ সালে রানারআপ হয়। ২০১৬ থেকে এ পর্যন্ত টানা তিনবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।