মেঘ পাহাড়ের দেশে

পাইরেটস অব ক্যারিবিয়ানের আদলে অভিনয় করা অভিনেত্রীর সঙ্গে লেখিকা
পাইরেটস অব ক্যারিবিয়ানের আদলে অভিনয় করা অভিনেত্রীর সঙ্গে লেখিকা

বাচ্চারা বড় হয়ে যাচ্ছে হু হু করে। সব সময় মনে হয়, সময় পেলেই একসঙ্গে কিছু আনন্দের সময় কাটাই। গত বছর জুনে গরম পড়ল সানডিয়াগো শহরে। বন্ধু মিগেলকে মেসেজ পাঠালাম, অল্প কয়েক দিনের জন্য কোথায় যাওয়া যায় বল তো? বলল, পোর্তো ভিয়ারতা চলে যাও। বাচ্চাদের অনেক কিছু করার আছে। চার দিনের জন্য চলে গেলাম মেঘ পাহাড় আর সাগরের শহর পোর্তো ভিয়ারতাতে। শহরটা মেক্সিকোতে। সানডিয়াগো শহর থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টার দূরত্ব।

বিকেলে পৌঁছে গেলাম। ট্যাক্সি খুব সস্তা। শহরটা ছোট। গাড়ি রেন্ট না করলেও চলে। হোটেলগুলো সব সমুদ্রের পাশে। ট্যুরিস্ট সিটি বলে পার্কিং খুব সমস্যা। হোটেল থেকে নেমেই সমুদ্র। পানি গরম বলে রাত-দিন যেকোনো সময় নামা যায়।

রাতে ড্রাইভ করে করে গেলাম মেরিনা পোর্তোভিয়ারতাতে ডিনারে। রাত দশটা বাজে, কিন্তু জমজমাট সবগুলো দোকান। স্টুডেন্ট লাইফে রাত জেগে বই পড়া আর সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠা ছিল প্যাশন। আমরা দেখতে অনেকটা মেক্সিকানদের মতো। ওরা সবাই কথা বলল লোকাল ভাষায় আর আমার সঙ্গে থাকা দুই হাইস্কুলপড়ুয়া স্প্যানিশ শেখা পুত্র-কন্যা দোভাষীর কাজ করে গেল। রেস্টুরেন্টে ওরা অনুমতি চাইল আমাদের পরিবারের ফটো তুলতে। তুলে ওদের লোকাল পত্রিকাকে দেবে। না করে দিলাম। কোন এক শঙ্কায় জানি না। মিউজিকের সঙ্গে সঙ্গে খাবার আর নন অ্যালকোহলিক পিনাকোলডা আর বাচ্চাদের ম্যাঙ্গো আর পাইন আপেল জুস দিয়ে গেল। খাবার আর ড্রিংকস সানডিয়াগোর লোকাল মেক্সিকান রেস্টুরেন্টগুলো থেকে আলাদা আর বেশ মজা।

পরদিন বোটে করে আরেকটা দ্বীপে রওনা হলাম। গরম ছিল দিনটা। পুরাটা পথ সবাই প্রাণ খুলে গাইল ক্যারিওকির সঙ্গে। ওরা সবাই এত ভালো গান গায়। মধ্যখানে থেমে স্নরকেলিং করল ট্যুরিস্টরা সাগরের মধ্যে। নেমে পড়ল কন্যা আর তার বাবাও। বড় নৌকা সাগরে রেখে ছোট নৌকায় পৌঁছে গেলাম দ্বীপে। বিচের পাশে খোলা রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ দিয়ে গেল। বেশির ভাগ পর্যটক কায়াক, প্যাডেল বোট, স্কি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল আর আমি বসে রইলাম ছায়ায়। হিউমিডিটি বেশি থাকাতে গরম বেশি। দিনটা বেশ সুন্দর ও ঘন নীল আকাশ। সিগাল উড়ে যাচ্ছে। ঘণ্টা দুই পরে বোটে চলে এলাম। ফেরার পথে কমপিটিটিভ ক্যারিওকেতে একজন টাকিলা জিতল। বয়স্ক কাপল নেচে জিতে নিল সবার মন। হোটেলে ফিরে শাওয়ার নিয়ে গেলাম সুশির খোঁজে ওই রিসোর্টেই। রেস্টুরেন্টের সামনে পুঁতি দিয়ে হাতে তৈরি গয়না কিনলাম।

পরদিন সকালে বুফে নাশতাতে সামান্য কিছু খেলাম। সারা দিন সাগরেরে মধ্যে থাকতে হবে শুনে সি সিকনেস নিয়ে অনেক শঙ্কা ছিল। এখানে আম আর পেঁপে অনেক বেশি পাওয়া যায়। পাইরেটস শিপ ট্যুর নিলাম। লম্বা লাইনে অপেক্ষা করতে করতে টিয়া নিয়ে এল ওরা। টিয়ার সঙ্গে ছিপ তুললাম। ভয়ে চিপসে যাওয়া টিয়ার সঙ্গে ছবি দেখে ওরা অনেক হাসল। কিন্তু টিয়াকে সত্যি এক লোকের চুল টানতে আমি দেখেছি। ওরা পুরাটা পথ পাইরেটস অব ক্যারিবিয়ানের আদলে অভিনয় করে মাতিয়ে রাখল। এক সঙ্গে ইংরেজি আর স্প্যানিশে অভিনয় করে গেল। অসাধারণ। শিপে লাঞ্চ-ডিনার দুটোই দিল। যা কোনো পাঁচতারা হোটেলের চেয়ে কম নয়।

ফিরতি পথে রাত হয়ে গেল। তীর দেখা যায় এমন দূরত্বে ওরা সব লাইট অফ করে দিল। দূরে শহরের সব আলো নিভে নিকষ কালো অন্ধকার। শুরু হয়ে গেল ফায়ার ওয়ার্কস। এক ঘণ্টা। মনে হচ্ছিল এই বুঝি আলোর ফুলকি ধরব হাতে। কাপলরা তাঁদের বিয়ে বার্ষিকী উদ্‌যাপন করতে এসেছেন। বাকি পথ সবাই পারফরমারদের সঙ্গে নেচে ফিরে এল।

পরদিন লোকাল মার্কেটে গেলাম। ওখানে দামাদামি করা যায় জিনিস কিনতে গেলে। কাঠের আর্ট কিনলাম দামাদামি করে। আমার বাবুদের কাছে এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। কন্যা তার বান্ধবীদের জন্য কিনল কি চেইন। ছোট্ট এক টুকরা সমুদ্র।

রাতে আলোকিত পথে সমুদ্রের পাড়ে অনেক হাঁটলাম। মনে মনে গাইলাম ‘তারা ভরা রাত, দৃষ্টির দিগন্তে তুমি, এমন রুপালি আলোয়...।’