তুর্কি সাংবাদিকদের স্মৃতিচারণায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ

মতবিনিময় সভা
মতবিনিময় সভা

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাস নিয়ে এক মতবিনিময় সভায় তুর্কি সাংবাদিকদের স্মৃতিচারণায় উঠে এসেছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। এ মতবিনিময়ে দেশটির বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা অংশগ্রহণ করেন। ইস্তাম্বুলের বাংলাদেশ কনস্যুলেটের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয় এই মতবিনিময় সভা। গত বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় বেলা ১১টায় মিশন প্রাঙ্গণে এ সভা আয়োজন করা হয়।

মতবিনিময়ে তুর্কি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট তুর্গে অলকাইটো, ভাইস জেনারেল সেক্রেটারি নিয়াজি দেলিয়ান্সি, ডেইলি হুরিয়েটের সাবেক প্রধান ও সাবেক সাংসদ ওকটাই একমি, সাংবাদিক-কলামিস্ট জাফর আতাই, দুনিয়া ও চ্যানেল ইকোনমির বোর্ড সদস্য আহমেত চস্কুনাইদেনসহ আরও কয়েকজন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব উপস্থিত ছিলেন।

সভার শুরুতে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ শোনানো হয়। ভাষণ প্রচারের পর ইস্তাম্বুলে নিয়োজিত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও জাতীয় জীবনে এই ভাষণের প্রভাব ব্যাখ্যা করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ওপর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বর্ণনা করেন। এরপর তিনি সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব ও প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন। এ প্রসঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অপরাপর রাষ্ট্রসহ তুর্কি জনগণ ও সরকারের সক্রিয় সহযোগিতার জন্য তিনি তুর্কি জনগণ ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

মতবিনিময়ে অংশ নিয়ে জাফর আতাই বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের ওপর তিনি নজর রাখতেন। আরও বলেন, ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনের সংবাদ কভার করার জন্য তিনি ওই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, যেখানে বঙ্গবন্ধুসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ অংশ নিয়েছিলেন।

মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারী গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা
মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারী গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা

নিয়াজি দেলিয়ান্সি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ তুর্কি সংবাদমাধ্যমে প্রতিদিন প্রকাশিত না হলেও, প্রতি সপ্তাহে দুই-তিন দিন প্রকাশিত হতো। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহসী নেতৃত্ব বিশ্ব গণমাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রচার করা হতো। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তুর্কি সাংবাদিকদের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে আসা আহমেত চস্কুনাইদেন বাংলাদেশের নারীর ক্ষমতায়নের ভূয়সী প্রশংসা করে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যকার বিদ্যমান কূটনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি দুই দেশের জনগণের মধ্যকার ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে। ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক আরও নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আমন্ত্রিত সাংবাদিকেরা রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সরকারের বিশেষত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব, সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ সময়োচিত ও বলিষ্ঠ বলে মন্তব্য করেন।

সভার শেষ পর্যায়ে কনসাল জেনারেল তুর্কি গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতির জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাঁদের তুর্কি জনগণের মাঝে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস উপস্থাপনের কার্যকর ভূমিকা রাখার জন্য অনুরোধ জানান। উপস্থিত গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বরা এ ব্যাপারে তাঁদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস ব্যক্ত করেন। সভা শেষে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়। বিজ্ঞপ্তি