হায় প্রযুক্তি!

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

একসময় পেজার ছিল হাসপাতালে কাজ করার সময় একমাত্র যোগাযোগমাধ্যম। এখন সবকিছু চলে এসেছে আইফোনে। সুবিধা অনেক। কিন্তু অসুবিধাও কম না। যেমন রোগী দেখার সময় অন্য ডাক্তারের ফোন এল। ধরতে তো হবেই। রোগী গাল ফুলিয়ে বসে রইলেন। তার সঙ্গে কথা বলার সময় ডাক্তার পারসোনাল কল নিচ্ছেন। কী বিপদ। অনেক কথা বলতে হয় এমনিতেই। তারপর ফোন কেন ধরতে হয়েছে বোঝাতে বোঝাতে আমার মতো বাচাল মানুষেরও হাঁপ ধরে যায়। যাঁরা কথা কম বলেন তাদের কী হয়! তারপর সিকিউর টেক্সটের টং জাতীয় মাথাধরা শব্দ তো আছেই। কেন যেন এই শব্দগুলো তখন বাজে না! যখন রোগী দশমবারের মতো বলতে থাকেন, ১৯৬০ সালে কী মধুর ঘটনা হয়েছিল তাঁর জীবনে এবং আমার সারা দিনের কাজের কথা চিন্তা করে চোখে পানি চলে আসার উপক্রম হয়। কী কঠিন রহস্য।

মাঝেমধ্যে আবার কাজের মধ্যে টং করে ফেসবুক মেসেঞ্জারে পোস্ট আসে—‘কী রে তোর খবর কী।’ তখন না পারি চেক করে বলতে, কাজে রে। না পারি দেখে চুপ থাকতে। কারণ ততক্ষণে টং টং চলছেই। রোগী কঠিন গলায় বলতে থাকেন, কাজের কিছু হলে কল করতে পার। শুকনা গলায় বলতে হয়, না, কাজের কিছু না।

লেখিকা
লেখিকা

নতুন কোথাও যেতে হলে জিপিএস ছাড়া গতি নেই আমার। ভাগ্য ভালো ম্যাপ দেখে গন্তব্যে পৌঁছানোর দিন শেষ। কাজের মিটিংগুলো সাধারণত ডাউন টাউনের দিকে হয়। একবার ফ্রি ওয়ে দিয়ে যাওয়ার সময় মনে হলো জিপিএস লাগবে না। একজিট দেখে রেখেছি। চলে যাব। সানডিয়াগো শহর মেক্সিকোর সীমান্তে। যাচ্ছি তো যাচ্ছি গানের তালে তালে। হঠাৎ দেখি লেখা এটা মেক্সিকো যাওয়ার আগে শেষ ইউএস এক্সিট। গাড়ি ঘোরাতে ঘোরাতে ভাবলাম, জীবনেও এ কাজ আর করব না। জিপিএসে ডিরেকশন দিয়ে ঘণ্টাখানেক দেরিতে মিটিংয়ে গেলাম। যাঁর পাশে বসে দুঃখের কাহিনি বলছি, হঠাৎ দেখি তিনি হেঁচকি তুলে হাসতে হাসতে হল থেকে বের হয়ে গেলেন।

এখন আবার ভয়েস কন্ট্রোলড স্মার্ট স্পিকার এসে গেছে অ্যালেক্সা। সেদিন বাসায় ঢুকে বাচ্চাকে বললাম, আই কান্ট হেল্প ফলিং ইন লাভ। বাচ্চা চিৎকার করে বলল, অ্যালেক্সা প্লে ফলিং ইন লাভ। সঙ্গে সঙ্গে এলভিসের ভরাট গলায় গান শুরু হয়ে গেল। তাকে বলা হলো না, মা তাকে কত ভালোবাসি। যত কঠিন বাংলা শব্দই বলি, তারা সঙ্গে সঙ্গে গুগল টান্সলেশন করে বলে, মা তুমি আরও বড় মূর্খ। কী বিপদ।

অনলাইনে জামা অর্ডার দিয়ে ধরা খাওয়া এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। নিজের সাইজের চেয়ে দুই সাইজ বড় জামা অর্ডার করলে আসে বাচ্চার সাইজে। প্রথম প্রথম বাচ্চাকে সাধাসাধি করলে হজম করে ফেলত। এখন পুতুলের মতো মাথা নেড়ে বলে, মা এটা তো আমার টেস্টের সঙ্গে যায় না। যারা জামাগুলো বানায়, তাদের হেডকোয়ার্টারে হাজির হয়ে ঝাড়ি দিয়ে আসতে হবে দেখছি। পৃথিবীতে মেহজাবিন ছাড়া আর কেউ রেডিমেড জামা কিনবে না?

এই কদিন অঝোর বৃষ্টি হয়েছে। কাজ থেকে বৃষ্টি দেখেছি আর গান শুনেছি ইউটিউবে ‘মেঘলা মেঘলা এই দিনে...’, যখন অফিসে কেউ ছিল না আর নোট টাইপ করছিলাম কম্পিউটারে। সারা জীবন কঠিন বকা খেয়েছি বাজে হাতের লেখার জন্য। জয়তু টেকনোলজি। কম্পিউটারে মুক্তার মতো লেখা আমার। বাসায় এসে ক্যারাওকিতে সব বৃষ্টির গান গাইলাম। কাজের স্ট্রেস ঝেড়ে ফেলে ঘুম আর কাজের জন্য রেডি আমি।