টোকিওতে সরস্বতীপূজা

পূজামণ্ডপে পুরোহিত
পূজামণ্ডপে পুরোহিত

উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে জাপানের রাজধানী টোকিওতে উদ্‌যাপিত হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রীশ্রী সরস্বতীপূজা। গতকাল রোববার (১০ ফেব্রুয়ারি) টোকিওর কিতা ওয়ার্ডের আকাবানে কিতা-কুমিন সেন্টারে অস্থায়ী মণ্ডপে এ পূজার আয়োজন করা হয়। জাপানপ্রবাসী বাংলাদেশি হিন্দুদের সংগঠন সর্বজনীন পূজা কমিটি দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে টোকিওতে এ পূজার আয়োজন করে আসছে। প্রচণ্ড ব্যস্ততা ও ব্যয়বহুল জাপানে স্থায়ী মন্দিরের অভাবে পূজা কমিটি প্রতিবছর সাধারণত পূজার সন্নিকটে কোনো এক রোববারে টোকিও শহরের পাবলিক কোনো হল ভাড়া করে পূজার আয়োজন করে থাকলেও এবার সরস্বতী পূজার দিন রোববারে হওয়ায় বাংলাদেশ ও জাপানে একই দিনে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সকালে পূজার মণ্ডপে এসে পূজার প্রস্তুতি শুরু করেন পূজার পুরোহিত অমিতাভ ভট্টাচার্য। এরপর একে একে পূজার মণ্ডপে আসতে শুরু করেন পূজারি ও অতিথিরা। প্রচণ্ড কনকনে শীতের মাঝেও দূর-দূরান্ত থেকে প্রায় তিন শ পূজারি জ্ঞান ও বিদ্যার দেবী সরস্বতী মায়ের বাণী অর্চনা ও অঞ্জলি দেওয়ার জন্য ছুটে আসেন। পূজার এ অনুষ্ঠানে রিশান দাস, ঋষিক সাহা, শৌণক বিশ্বাস, অদিত মিত্র, অরিত্র দেবনাথ, সৃদিকতা বাড়ৈ, শেতাক্ষী সমাদ্দারসহ আরও কয়েকজন ছোট শিশুর হাতেখড়ি দেওয়া হয়। আবহমান বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্যবাহী এ অনুষ্ঠানে হিন্দু ধর্মাবলম্বী ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মের প্রবাসী বাংলাদেশি ও কিছু জাপানিও উপস্থিত ছিলেন। এবারের পূজায় বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে দেবী সরস্বতীর চরণে বই দান করা হয়।

পূজার অঞ্জলি দেওয়ার জন্য সমবেত পূজারিরা
পূজার অঞ্জলি দেওয়ার জন্য সমবেত পূজারিরা

পূজার অঞ্জলি শেষে উপস্থিত ভক্তদের মাঝে পূজার প্রসাদ বিতরণ করা হয়। প্রতিবছর পূজা কমিটি পর্যাপ্ত পরিমাণ পূজার প্রসাদ তৈরি করে থাকে। অনেকে দূর-দূরান্ত থেকে আসেন পূজার এ প্রসাদের জন্য। এরপর শুরু হয় আলোচনা অনুষ্ঠান। আলোচনা পর্বে শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন পূজা কমিটির সভাপতি সুনীল রায়, সাধারণ সম্পাদক রতন বর্মণ ও সাংগঠনিক সম্পাদক ড. অতনু সাহা। তারপর পূজা কমিটির উপদেষ্টা সুখেন ব্রহ্ম সরস্বতী পূজার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন টোকিওর বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর মোহাম্মদ হাসান আরিফ। বিশেষ অতিথি ছিলেন দূতাবাসের প্রথম সচিব বেলাল হোসেন। প্রধান অতিথি পূজা কমিটিকে রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান ও প্রবাসে প্রতিবছর দুর্গাপূজা ও সরস্বতীপূজা আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এটা শুধু পূজা নয়, এটা হলো জাপানে বসবাসরত বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মিলনমেলা। পরিশেষে পূজা কমিটির উপদেষ্টা বিমান পোদ্দার পূজার অনুষ্ঠানে আসার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

পূজার অঞ্জলি দেওয়ার জন্য সমবেত পূজারিরা
পূজার অঞ্জলি দেওয়ার জন্য সমবেত পূজারিরা

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে স্থানীয় শিল্পীরা অংশগ্রহণ করেন। উত্তরণ বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা ছাড়াও ছোট ছোট প্রবাসী শিশুরাও অংশগ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে প্রতিবছরের মতো জাপানের স্বরলিপি কালচারাল একাডেমির স্কুল বিভাগের শিক্ষার্থী কাব্যজ্যোতি বিশ্বাস, কথাশ্রী বিশ্বাস, ভাগ্যশ্রী পাল, প্রগতি ঘোষ, সৃজিতা বিশ্বাস, সৃদিকতা বাড়ৈ, সম্প্রীতি ঘোষ ও শ্রেয়া পাল নাচ, গান ও প্রবন্ধ পাঠ করে দর্শক-শ্রোতাদের মন ভরিয়ে দেয়। এর বাইরে শেতাক্ষী সমাদ্দার সরস্বতীর মন্ত্র পাঠ করে। আংকা বণিক জাপানি গান ও তনুতা ঘোষ বাংলা গান গেয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মন ভরিয়ে দেয়। তারপর বড়দের অনুষ্ঠানে শান্তা দাস ও শতাব্দী বণিক ভক্তিমূলক গান পরিবেশন করেন। পরিশেষে উত্তরণ সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর রতন খন্দকার, শরাফুল ইসলাম, ববিতা পোদ্দার ও উৎপল দত্ত বাচ্চু ভক্তিমূলক গান ও কীর্তন দিয়ে দর্শক-শ্রোতাদের মাতিয়ে তোলেন। এরপর সন্ধ্যা-আরতি ও মিষ্টিমুখের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এবারের পূজার সব আয়োজন।

হাতেখড়ি নেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছোট শিশুরা
হাতেখড়ি নেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছোট শিশুরা

ব্যয়বহুল ও ব্যস্ততার এ শহরে প্রতিবছর সুন্দরভাবে পূজার অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার জন্য পূজার কর্মকর্তা ও একদল স্বেচ্ছাসেবক প্রচুর পরিশ্রম করে থাকেন। এবারের পূজা সার্থকভাবে সম্পন্ন করতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সহায়তা করেন তপন কুমার ঘোষ, কৌশিক রায়, লিটন কুমার বর্মণ, মানিক চন্দ্র সাহা, পার্থ প্রতিম ঘোষ, সঞ্জয় কুমার দেব, রাজিব রক্ষিত, অনিন্দ্য রায়, দেব বাগচী, উজ্জ্বল পাল, সজীব দাস, নন্দ কুমার মণ্ডল, অপু রায়, ড. প্রসেনজিৎ ঘোষ, ড. নন্দ দাস, বিপ্লব মল্লিক, বিশ্বজিৎ দত্ত বাপ্পা, উৎপল দত্ত বাচ্চু, বনানী পাল, ববিতা পোদ্দার, তনুশ্রী বিশ্বাস, পপি ঘোষ, কিশোর পাল ও অঞ্জন দাসসহ অন্যরা।

পূজার অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা
পূজার অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা