মিশিগানে সরস্বতীপূজা উদ্যাপন

পূজামণ্ডপে সমবেত পূজারিরা
পূজামণ্ডপে সমবেত পূজারিরা

উৎসাহ-উদ্দীপনা ও নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে মিশিগান অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত হিন্দুধর্মাবলম্বীরা বিদ্যা ও জ্ঞানের দেবী সরস্বতীর পূজা উদ্‌যাপন করেছেন। প্রতিবছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের বসন্ত পঞ্চমীর দিনে এই পূজা হয়। 

সরস্বতী বিদ্যাদেবী বলে এ পূজায় শিক্ষার্থীরাই বেশি অংশগ্রহণ করে থাকেন। ভোরে উঠে স্নান শেষে পূজা, অর্চনা, প্রার্থনা, অঞ্জলিসহ বিভিন্ন মাঙ্গলিক ক্রিয়া সম্পাদন করেন। অনেক শিশু এদিন হাতেখড়ি দিয়ে বিদ্যাচর্চা শুরু করে। কালের বিবর্তনের ধারায় এ পূজা এখন আর ব্যক্তি ও পরিবারের গণ্ডি ছাড়িয়ে সর্বজনীন এক উৎসবে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে প্রবাসের নগর ব্যস্ততায় এ পূজা সবার মিলিত হওয়ার এক সুবর্ণ সুযোগ। বছরের এই দিনটিতে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব একে অপরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকেন। পূজা একসময় পরিণত হয় মিলনমেলায়। বিশুদ্ধ পঞ্জিকামতে, ৯ ফেব্রুয়ারি ছিল তিথিমতো সরস্বতীপূজা। মিশিগানে কোথাও ৯ ফেব্রুয়ারি, কোথাও–বা সপ্তাহান্তে ১০ ফেব্রুয়ারি পূজা উদ্‌যাপন করা হয়। সরস্বতীপূজা উপলক্ষে মিশিগানের বিভিন্ন মন্দির ও সংগঠন ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

দুর্গামন্দিরে পূজা

প্রতিবারের মতো এবারও ডেট্রয়েট দুর্গামন্দিরে দুই দিনব্যাপী সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৯ ফেব্রুয়ারি শনিবার তিথিমতো পূজা হয়। এতে দেবীর আরাধনা, পূজা, অর্চনা, প্রার্থনা, যজ্ঞ, মাঙ্গলিক ক্রিয়াকর্ম, শিশুদের হাতেখড়ি ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়। বিকেলে ছিল নারীদের অংশগ্রহণে ধামাইল ও সন্ধ্যায় মায়ের আরতি। ১০ ফেব্রুয়ারি যথারীতি পূজা, অঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়। দুপুরে শিশু-কিশোরদের দুই গ্রুপে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সবাইকে পুরস্কৃত করা হয়। বিকেলে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বৈশালী দেব মৌয়ের কোরিওগ্রাফিতে ছিল শিশু-কিশোরদের নৃত্যানুষ্ঠান। এরপর স্থানীয় শিল্পীরা সংগীত পরিবেশন করেন। সবশেষে ছিল মায়ের আরতি। দুর্গামন্দিরের পরিচালনা পর্ষদের কর্মকর্তা প্রদীপ চৌধুরী জানান, এবার সরস্বতীপূজার সময় আবহাওয়া প্রতিকূল (প্রচণ্ড ঠান্ডা ও তুষারপাত) থাকলেও পূজার দুই দিনই মন্দিরে প্রচুর ভক্তের সমাগম হয়।

দুর্গামন্দিরে নৃত্য ও সংগীতে অংশগ্রহণকারী শিশু–কিশোরেরা
দুর্গামন্দিরে নৃত্য ও সংগীতে অংশগ্রহণকারী শিশু–কিশোরেরা

কালীবাড়ি

কালীবাড়িতে ৯ ফেব্রুয়ারি তিথিমতো পূজা, অঞ্জলি, হাতেখড়ি ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়। বিকেলে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে প্রথমে শিশু-কিশোরেরা গান, কবিতা আবৃতি, নৃত্য পরিবেশন করে। পরে স্থানীয় শিল্পীরা ভজন, রবীন্দ্রসংগীত ও লোকগীতি পরিবেশন করেন। এই মন্দিরের বিশেষ আকর্ষণ ছিল অতিথি শিল্পী অঙ্কন চৌধুরীর একক সংগীতসন্ধ্যা। সবশেষে ছিল দেবীর আরতি ও ধুনুচি নৃত্য। এই ধুনুচি নৃত্য ক্ষণিকের জন্য হলেও সবাইকে নিয়ে যায় কৈশোরের স্মৃতিবিজড়িত দেশের স্কুল বা পাড়ার পূজামণ্ডপে। একটু নস্টালজিয়ায় পেয়ে বসে সবাইকে, যারা বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজন ফেলে আজ প্রবাসী। পরদিন ১০ ফেব্রুয়ারি যথারীতি পূজা, অঞ্জলি ও প্রসাদ বিতরণ করা হয়।

বিচিত্রা

মিশিগানের বাঙালি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিচিত্রার এবারের সরস্বতীপূজা অনুষ্ঠিত হয় ৯ ফেব্রুয়ারি কেন্টন হিন্দু টেম্পলে। সকালে পূজা, পুষ্পাঞ্জলি ও দুপুরে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। বিকেলে শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যার পর নৈশভোজে সবাইকে আপ্যায়িত করা হয়। রাতে ভারতের রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী দেবাঙ্গনা সরকার সংগীত পরিবেশন করেন।

শিশুদের নৃত্যানুষ্ঠান
শিশুদের নৃত্যানুষ্ঠান

বিচিত্রা ইনক

বিচিত্রা ইনকের এবারের সরস্বতীপূজা অনুষ্ঠিত হয় ওয়েস্ট ব্লুমফিল্ড টাউন শিপের অরচিড লেক মিডল স্কুলে ৯ ফেব্রুয়ারি। যথারীতি তিথিমতো পূজা, অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ করা হয়, দুপুরে সবাইকে মধ্যাহ্নভোজে আপ্যায়িত করা হয়। এরপর ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিকেলে ছিল চলচিত্র প্রদর্শন। সন্ধ্যায় আড্ডা ও খেলাধুলা। এরপর নৈশভোজ।

বঙ্গীয় সাংস্কৃতিক সংঘ

পশ্চিম মিশিগানের বঙ্গীয় সাংস্কৃতিক সংঘ (ওয়েস্টার্ন মিশিগান বেঙ্গলি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন) ৯ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম মিশিগান হিন্দু টেম্পলে সরস্বতীপূজা উদ্‌যাপন করে। সকালে পূজা, পুষ্পাঞ্জলি, হাতেখড়ি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, দুপুরে প্রসাদ এবং বিকেলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এরপর ছিল সন্ধ্যারতি ও শান্তিজল।

এ ছাড়া মিশিগান সিম্ফনি ক্লাবের সদস্যরা সরস্বতীপূজা উপলক্ষে মিশিগানের বিভিন্ন মন্দির পরিদর্শন করেন এবং উপস্থিত দর্শক ও ভক্তদের সঙ্গে মতবিনিময় ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।