কানাডার সাস্কাতুনে সরস্বতী-বন্দনা
হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রীশ্রী সরস্বতীপূজা অত্যন্ত জাঁকজমক ও সুন্দর পরিবেশে কানাডার সাস্কাতুনে উদ্যাপিত হয়েছে। সাস্কাতুন সর্বজনীন পূজা পরিষদ (এসএসপিপি) ৯ ফেব্রুয়ারি শনিবার স্থানীয় শ্রীশ্রী লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরে আয়োজন করে সরস্বতীপূজার। সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয় দেবী অর্চনা। তারপর পূজা শেষে পুষ্পাঞ্জলি, শিশুদের হাতেখড়ি আর প্রসাদ বিতরণ। সকালের প্রথম পর্বে প্রচুরসংখ্যক ভক্তের উপস্থিতি সবাইকে ভুলিয়ে দেয় বাইরে তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে ৩৫।
প্রবাসে বেড়ে ওঠা একদল কিশোর-কিশোরীর দায়িত্বে অত্যন্ত সুচারুভাবে সফল পরিণতি পায় এবারের পূজা। আর এটাই এবারের পূজার অন্যতম লক্ষণীয় বিষয় ছিল। বাংলাদেশের সংস্কৃতিকে ধারণ আর বুকের ভেতর লালিত চেতনাকে নতুন প্রজন্মের কাছে সফলভাবে উপস্থাপিত করে চলতে শিখিয়েছেন যাঁরা, তারাই আজ দেখছেন পরবর্তী প্রজন্ম তাদের পতাকা উঁচু করে তুলে ধরছে। তাঁদের দেখানো পথেই হাঁটছে তাদের সন্তানেরা।
প্রবাস জীবনের পূজা মানেই নতুন প্রজন্ম পরিবারের সঙ্গে যাবে, পুষ্পাঞ্জলি দেবে, অডিয়েন্সের পেছনে বসে মোবাইল বা ট্যাব দেখবে আর প্রসাদ নিয়ে চলে আসবে, এই ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করতেই যেন এদের আবির্ভাব। পরিচিতজন আর অভিভাবকদের মাধ্যমে তারা এভাবেই প্রভাবিত হলো যে, এই প্রচণ্ড ঠান্ডার দেশে দিন-রাত পরিশ্রম করে নিজেরাই তৈরি করে ফেলল প্রতিমা। পুরোহিত বরণ, প্রসাদ রান্না, সাউন্ড সিস্টেম থেকে প্রসাদ বিতরণ, সর্বক্ষেত্রেই ছিল মুনশিয়ানার ছোঁয়া। এই সফল দলের সদস্যরা হলো প্রিতম সেন, সুরঞ্জিত শার্বন্য, দিশা রায়, সব্যসাচী চৌধুরী, অয়ন দেব রায়, দিবংকর চৌধুরী, প্রমি সেন, পারমিতা সেনগুপ্ত, অরিন্দম চক্রবর্তী, অভিজিৎ চক্রবর্তী, অর্পা চৌধুরী, জয় চক্রবর্তী, দীপিকা ঐশী ও সৌভিক উকিল।
প্রতিবছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় বিদ্যা ও জ্ঞানের দেবী সরস্বতী দেবীর পূজা। সমাজের অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করার জন্য দেবীর চরণে ‘সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমলোচনে, বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যংদেহী নমোস্তুতে’ মন্ত্র উচ্চারণ করে বিদ্যা ও জ্ঞান অর্জনের জন্য দেবীর চরণে সবাই পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে।
সন্ধ্যা ৬টায় আরতির মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠান শুরু হয়। স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় সংগীত আর নৃত্য উপস্থিত দর্শকদের আনন্দের খোরাক জুগিয়েছে এই শীতলতম সন্ধ্যায়। দর্শকদের করতালি আর উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে কখন যে ঘড়ির কাঁটা ১১টা ছুঁই ছুঁই করছে, টেরই পাওয়া যায়নি। সাস্কাতুন সর্বজনীন পূজা পরিষদের (এসএসপিপি) সভাপতি ড. চঞ্চল রায় ও সাধারণ সম্পাদক চিত্তরঞ্জন কর সকল দর্শক ও ভক্তকে সুন্দর একটা অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পাদন করার জন্য ধন্যবাদ দেওয়ার পাশাপাশি অনিচ্ছাকৃত ভুল ভ্রান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।