হ্যালিফ্যাক্স সৈকতে ভ্যালেন্টাইন কথোপকথন

প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

দীপ্ত তোমার সাথে, অকস্মাৎ সেদিন দেখা
কানাডার হ্যালিফ্যাক্সের হিরণ্ময় এক বিকেলে
লোয়ার ওয়াটার ফ্রন্টের বিস্তীর্ণ সাগরসৈকতে...
অতিক্রান্ত অদেখার দুই যুগের বাস্তবতার শৃঙ্খলে
এতটুকু ম্লান হয়নি তোমার তুলনাহীন দৃষ্টির উজ্জ্বলতা...
সম্মোহনী একরাশ হাসি দিয়ে বলেছিলে, ‘কেমন আছ নীলা’
হতচকিত আমি বিস্ময়কে আড়ালে সামলে বলি,
‘বেশ আছি, তবে হৃদয়ের ঝড় তোলা হাহাকারের মতো
তেমন খারাপ নই, তুমি এই সুদূরে হঠাৎ?’
উত্তর মিলেছিল, ‘এই এসেছিলাম বাণিজ্যের বাসনায়
অতল আটলান্টিকের নীলাভ ধূসরতায় জলধ্বনির উত্তাল তরঙ্গকে অনুভবের তাড়নায়,
তাই জলকন্যা নীলাকে পেলাম’
এড়িয়ে বলেছিলাম, ‘তোমার নাম দেশের খ্যাতিমান পত্রিকার শিরোনামে দেখি...’
‘নাম নাকি বদনাম?’ দীপ্তর উপহাসের প্রশ্ন...
তার উত্তর প্রায় উপেক্ষা করে বলেই চলি, ‘বর্তমানের এই সুবেশী তুমি পুঁজিবাদী করপোরেট সংস্কৃতির
খোলসে বলি হওয়া দেশের এক সফল বণিক তাই না?’
‘ওহ নীলা! তুমি এখনো কি তুমি সেই রকম আদর্শবোধে একরোখা’
‘আর তুমি এক আলোকিত ভঙ্গুর...’
‘আমার অথবা আমাদের কথা ভাবো কি নীলা?’
পদ্মাপাড়ের অস্তমিত সূর্যের আভায় সোঁদা মাটির ঘ্রাণ জড়ানো তোমার আধভেজা চুলে আমার বিলি কাটার প্রহরগুলি
কল্পনার জাল বোনার অবসরে এক কাশবনের শয্যায় সুবিস্তীর্ণ সুনীল আকাশের আহ্বানে
অশ্রান্ত আলিঙ্গনের অপেক্ষায় উন্মুখ দুজনে...
অথবা শরতের প্রায় মেঘহীন রাতের নক্ষত্রবীথির দিকে তাকিয়ে
ভালোবাসার রঙে বর্ণিল স্বপ্ন মন্ত্রে আকাশগঙ্গার পথ খোঁজা।
গোধূলির গোলাপি আভায় এক বিকেলে তোমার চিবুকে হীরক কণার মতো উজ্জ্বল এক বিন্দু ঘাম
আমার রুমালে ধরে রাখা,
চারপাশে উড়ে ঘুরে বেড়ানো দু-একটি ঘাসফড়িংয়ের ডানা ধরার আকাঙ্ক্ষায় নীলা, আমার নীলাঞ্জনার
উচ্ছল অবাধ্য ছেলেমানুষি...
আমি বাধার স্বরে বলি, ‘থাক স্মৃতির দরজায় অনর্থক করাঘাতে শূন্যতার দেয়াল গড়ে কী লাভ।’
চিরচেনা ছোঁয়ায় হঠাৎ উদ্ধত এক অধিকারের শক্তিতে আমার হাতটি আঁকড়ে ধরেছিল,
আমার নিত্য সদাইয়ের ঝোলায় উঁকি মারা একগুচ্ছ ড্যাফোডিল ফুল দেখে
দীপ্তর ঈর্ষাকাতর টিপ্পনী, ‘প্রিয় সঙ্গীর উপহার?’

লেখিকা
লেখিকা


দীর্ঘ অনভ্যাসের সংকোচে ওর স্পর্শ থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে
সামান্য ইতস্তত করে জানিয়েছিলাম, ‘প্রিয় ঘরের জন্য সামান্য পুষ্প বিলাসী আয়োজন
আজ ভালোবাসার দিবস..’
‘ঘর শুধু বর কই?’
খানিকটা হেসে বলেছিলাম, গড়িনি তো’ স্পর্শ সুখহীন সেই তোমাকে সাজিয়ে
অদৃশ্য মায়াবী ভালোবাসায় পূর্ণ আমার শান্তির নীড়।
দীপ্তর হতবিহ্বল, শূন্য দৃষ্টি ধীরে ধীরে নৈঃশব্দ্যের বলয় সৃষ্টি করেছিল,
এরপর ভেসে এসেছিল আকুতি, ফিরবে নীলা, আমার ক্ষতবিক্ষত স্বপ্নহীন হৃদয়ে কোনো একদিন?’
‘না দীপ্ত, ফিরে যাও বোধ বিসর্জিত সাজানো নির্বাসিত সাম্রাজ্যে
আর অধরা সুন্দরের অনির্বাণ স্মৃতির দীপ্তময় প্রেমের স্পন্দনধ্বনি নিয়ে
দূরত্বের বেড়াজালে এই অমৃত ভালোবাসার সুধা
চিরঞ্জীব থাকবে হৃদয় মাঝে।’
দীপ্ত জানায়, ‘আমি করপোরেটের খাঁচায় সম্ভবত অলীক সুখের পরিসীমা খুঁজি’
আর তোমার নীলা তাঁর যাপিত জীবন নিয়তির বহমান স্রোতে,
প্রেমের স্মৃতিমন্ত্র আর মানবাধিকারের সংগ্রামে জীবনজিজ্ঞাসার
ধ্রুবসত্যকে মিথ্যার দাসত্ব থেকে মুক্তির প্রত্যাশায়
এই পরবাসী নিবাসে বাঁচবে নির্ভীক সৈনিকের ব্রত নিয়ে
প্রায় তুষারাবৃত আটলান্টিক সাগর তীরের এই শীতল ভূখণ্ডে।
...

ফারজানা নাজ শম্পা: হ্যালিফ্যাক্স, কানাডা।