অনিন্দ্যসুন্দর সাপ্পোরো তুষার উৎসব

সাপ্পোরো শহরে সহপাঠীদের সঙ্গে লেখক
সাপ্পোরো শহরে সহপাঠীদের সঙ্গে লেখক

জাপানের উত্তরাঞ্চলীয় দ্বীপ হোক্কাইডোর প্রধান শহর সাপ্পোরো। পুরো শহরই এখন তুষারের চাদরে ঢাকা। প্রচণ্ড শীতে জনজীবন জবুথবু। তারপরও শহরে পর্যটকদের ভিড়ে পা ফেলার জো নেই। তুষারের নান্দনিক সৌন্দর্যের টানে লাখ লাখ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদচারণে শহরজুড়েই রয়েছে উৎসবের আমেজ। সাপ্পোরোর ঐতিহ্যবাহী বার্ষিক তুষার উৎসব পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ।

৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হয়ে গেল এবারের বার্ষিক সাপ্পেরো তুষার উৎসব। শহরের তিনটি ভেন্যুতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ওদোরি পার্ক। দেশি-বিদেশি ভাস্কররা তাঁদের নান্দনিক সব ভাস্কর্য নিয়ে এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তুষার ও বরফের তৈরি প্রায় দুই শ ভাস্কর্য এ উৎসবে প্রদর্শিত হয়। এর মধ্যে পাঁচটি বৃহদাকার ভাস্কর্যও স্থান পায়। যার উচ্চতা ছিল ১০ মিটারের বেশি। ভাস্কর্যগুলো শুধু মনোমুগ্ধকরই ছিল না; প্রত্যেকটি ভাস্কর্যেরই ছিল স্বতন্ত্র শৈল্পিক ও দার্শনিক অভিব্যক্তি।

সাপ্পোরো শহরে লেখক
সাপ্পোরো শহরে লেখক



এবারের ভাস্কর্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ ছিল ওদোরি পার্কে প্রদর্শিত ঐতিহাসিক ঘড়ি দালান এবং লাল ইটের স্থানীয় সরকার ভবনকে পাশ কাটিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটে চলা বৃহদাকারের কয়েকটি ঘোড়ার ভাস্কর্যটি। গত সেপ্টেম্বরে হোক্কাইডোতে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তূপ থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধারের অভিপ্রায়ে স্থানীয় জনসাধারণকে উজ্জীবিত করাই এই ভাস্কর্যের মূল উপজীব্য।

আট দিনব্যাপী চলা এই উৎসবে এ বছর রেকর্ডসংখ্যক ২৭ লাখ ৩০ হাজারের বেশি দর্শকের সমাগম ঘটে। সাপ্পোরো তুষার উৎসব জাপানের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক ও বাহক। এবারের উৎসবটি ছিল ৭০তম আয়োজন। অর্থাৎ অনেক আগে থেকেই জাপানিরা এ উৎসবের আয়োজন করে আসছে। আর পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ও শৈল্পিক উৎকর্ষসাধনের জন্য উৎসবে প্রতিবছরই যোগ হচ্ছে নান্দনিক সব সৃষ্টি ও নতুনত্ব। সাপ্পোরো তুষার উৎসব নিঃসন্দেহে প্রকৃতির প্রতি জাপানিদের অনুরাগ ও কৃতজ্ঞতাবোধ এবং তাঁদের সৃষ্টিশীল মননের মূর্ত প্রতীক।

...
মোল্লা মোহাম্মদ শাহীন: শিক্ষার্থী, কিউশু ইউনিভার্সিটি, জাপান। ই–মেইল: <[email protected]>