প্রবাসীর ভালোবাসা দিবস

ছবি: আবদুস সালাম
ছবি: আবদুস সালাম

পৃথিবীতে একমাত্র প্রবাসীরাই বুঝি সবচেয়ে হতভাগা, যাঁরা সব সময় আনন্দের মুহূর্ত থেকে বঞ্চিত হন। হোক ঈদ, পূজা, বৈশাখী উৎসব বা ভালোবাসা দিবস। সবকিছু থেকে বঞ্চিত হন। দেশে সবাই যখন আনন্দের বন্যায় ভাসেন, তখন প্রবাসীদের ব্যস্ত থাকতে হয় কাজ নিয়ে। জীবনের ঘানি টানতে হয় তখনো। এ রকমও দেখা যায়, কোনোমতে ঈদের নামাজ পড়ে আবার কাজে যেতে হয়। কিছু প্রবাসী হয়তো সময় করে বাড়িতে ভিডিও কল করে পরিবারের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সবার ভাগ্যে এই সুযোগ জোটে না।

দুই দিন আগে ছিল বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। প্রবাসীরা বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের প্রবাসীরা কতটা ভালোবাসতে পারছেন বা তাঁরা নিজেরাও কতটা ভালোবাসা পাচ্ছেন? বুকে শূন্যতা ও হাহাকার নিয়েই এদিন কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে হয়েছে তাঁদের। এমন সময়গুলোতে কষ্টে চোখে জল আসে, সেই জল কাউকে দেখানো যায় না। তবুও দেশে পরিবারের কাছে মৃদু হাসি মুখে নিয়ে বলতে হয়, ‘আমি ভালো আছি।’

অনেক প্রবাসী আছেন যাঁরা শুধু পরিবারের সুখের কথা চিন্তা করে প্রায় সারাটা জীবন প্রবাসেই কাটিয়ে দিয়েছেন। একপর্যায়ে বিয়ের বয়সও চলে যায়, তবু দেশে ফেরা হয় না। যখন শেষ বয়সে দেশে ফিরে বিয়ে করেন, তত দিনে দেখা যায় জীবন থেকে একে একে প্রায় সব বসন্ত চলে গেছে। তখন মনে আর বসন্ত জাগে না।

এমনই একজন সিলেটের হেলাল। ২৭ বছর ধরে সৌদি আরবে প্রবাস জীবন বয়ে চলেছেন তিনি। কয়েক বছর আগে দেশে গিয়ে বিয়ে করেছেন ঠিকই। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে থাকা বা সুখ ভাগাভাগির সুযোগ আর হয়ে উঠছে না। মাঝেমধ্যে ছুটিতে দেশে যান। দুই কন্যাসন্তানের জনকও হয়েছেন তিনি। কন্যাদের ভালোবাসা-আদর দিতে পারেন না। আবার কন্যারা বাবাকে আদর করলে কী রকম ভালো লাগে, সেটাও তিনি খুব একটা বোঝার সময় পান না। কবে দেশে স্থায়ীভাবে ফিরে যাবেন, তা তিনি নিজেও জানেন না। হেলাল বলেন, প্রবাসীরা হলো পরিবারের এমনই এক সদস্য, যাদের অনেক সময় পরিবার থেকেই দেশে যেতে নিষেধ করা হয়। পরিবার থেকে বলা হয়, ‘তুমি দেশে এলে আমরা না খেয়ে মরব। আরও কয়েকটা বছর বিদেশ থেকে আরও কিছু টাকা কামাই করে দেশে এসো।’

এভাবে যে কত প্রবাসীর জীবন থেকে কত বসন্ত চলে যায়, তার হিসাব কেউ রাখে না। পরিবারগুলো প্রবাসীদের টাকার মেশিন ভাবে। সব সময়, এমনকি ভালোবাসা দিবসেও ভালোবাসাহীনতায় ভোগেন তাঁরা।
...

লেখকের ই-মেইল: <send2 [email protected]>