একুশে ফেব্রুয়ারি

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ভাষার জন্য জীবন দেওয়া দেশের মানুষ আমি। ফেব্রুয়ারি এলেই মনটা কেমন উদাস হয়ে যায়। ছোটবেলায় আমাদের বাগানে প্রচুর ফুল ফুটত। সারা বছরে কখনো চুরি হতো না শুধু ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ছাড়া। আমরাও বিকেলেই তোড়া বানানোর জন্য ফুল আলাদা করে তুলে নিতাম। মানুষ ফুল তুলে নিত শ্রদ্ধা জানাতে সব বাগান থেকেই। প্রভাতফেরিতে খালি পায়ে যেতে পারিনি কখনো। কিন্তু পরে স্কুলে গিয়ে ফুলের তোড়া দিয়ে আসতাম। আর গাইতাম সবাই মিলে ‘আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি, ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু...।’

লেখিকা
লেখিকা

বিদেশে চলে এসে ভাষাটা আরও বেশি ভালোবাসি যেন। মাঝেমধ্যে একদল পাগল ছেলেমেয়ে একুশের বেদি বানিয়ে ফেলে। ছোটবেলার মতো টকটকে লাল ডালিয়া আর গোলাপ নিয়ে আমি ছুটে যাই মনে মনে। মায়ের এত সুন্দর ভাষাটার জন্য ওদের আত্মত্যাগ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে। মনটা ছুটে চলে যায় বইমেলায়। নেশা ছিল বই কেনা ও পড়ার। হ‌ুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করছি। বই পড়ে রাত-দিন পুরো দুনিয়া ঘুরে বেড়িয়েছি তাঁর সঙ্গে। কী প্রচণ্ড মেধাবী একজন মানুষ। অসময়ে চলে গেলেন বড়।

বাংলা স্কুল আছে এখানে। বছর কয়েক আগে বাংলাদেশিরা করেছেন। ছেলেমেয়েকে স্কুলে দিতে পারিনি। তারা শুধু বলে ‘তুমি শেখাও’। বাংলা স্কুলে একুশের স্মরণে ওরা খুব সুন্দর করে গাইল, ‘তীর হারা ওই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে...।’ বাংলা হাতের লেখাতে ওরা প্রথম আর দ্বিতীয় হয়েছিল। একটু বড় হওয়াতে এখন বাংলা গানে আগ্রহ কম তাদের। অভিমান ভরে শেখানো বন্ধ করেছি।

এখন ফেব্রুয়ারি মাস। সেদিন কাজ শেষ হয়ে গেল আগে আগে। বাচ্চাদের চমকে দেব বলে চুপি চুপি বাসায় ঢুকলাম। নিজেই চমকে গেলাম। বাচ্চারা পিয়ানো বাজিয়ে গাইছে, ‘আমি বাংলায় গান গাই, আমি বাংলার গান গাই...।’ অনলাইন থেকে শিখছে মার জন্য। জানলাম আমি চলে গেলেও এ ভাষা থেকে যাবে।

আর এখন ফোন থেকে বাংলায় লিখছি। মনের সব কথা। মায়ের ভাষায়।