ভাষা আন্দোলন বাঙালির চেতনাকে নাড়া দিয়েছিল

শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ
শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ

ভাষা আন্দোলন বাঙালির চিন্তাচেতনাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল। এই আন্দোলন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলে। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের আদর্শে ভারত ভাগ হয়েছিল। সেটিকে কাঁপিয়ে দিয়ে একটি প্রগতিশীল অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদের নতুন ধারা প্রবর্তন করে একুশে ফেব্রুয়ারি। একুশ আমাদের আলোকিত মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার শিক্ষা দেয়। একুশের ঐতিহাসিক মাহাত্ম্য ও চিরকালীন আবেদন ধারণ করে নতুন প্রজন্ম নিজেদের শুধু দেশেই নয়, সারা বিশ্বে একজন আলোকিত ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে।

পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আলোচনায় দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক আহসান এ কথা বলেন।

জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ
জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ

যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি ইসলামাবাদে বাংলাদেশ হাইকমিশন প্রাঙ্গণে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়েছে। সকালে চ্যান্সারি প্রাঙ্গণে হাইকমিশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ইসলামাবাদে বসবাসকারী বাংলাদেশি নাগরিকেরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন। পরে সবার উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন তারিক আহসান। দিবসটি উপলক্ষে চ্যান্সারি প্রাঙ্গণ বাংলা বর্ণমালা ও ভাষা দিবসের পোস্টারে সজ্জিত করা হয়।

ভাষাশহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য চ্যান্সারি প্রাঙ্গণে একটি অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। হাইকমিশনার তারিক আহসান মিশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। প্রবাসীরাও শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় সবাই ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি গাইতে থাকেন। এ ছাড়া চ্যান্সারি প্রাঙ্গণে শিশুদের বাংলা ভাষা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ১৪ জন শিশু প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে। হাইকমিশনার ও তাঁর সহধর্মিণী বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার ও সনদপত্র বিতরণ করেন।

বক্তব্য দিচ্ছেন তারিক আহসান
বক্তব্য দিচ্ছেন তারিক আহসান

সন্ধ্যায় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন উপলক্ষে এক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। সভায় ভাষা আন্দোলনে ছাত্র-তরুণ-যুবসহ সবার গৌরবোজ্জ্বল অবদানের কথা ও দিনটিকে ইউনেসকো কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দানের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হয়।

আলোচনায় তারিক আহসান ভাষাশহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অন্যদের অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। তিনি ঢাকার চকবাজারে সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ব্যাপক জানমালের ক্ষয়ক্ষতিতে গভীর শোক প্রকাশ করে নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি স্বজনহারাদের প্রতিও আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।

বাংলা ভাষা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা
বাংলা ভাষা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীরা

আলোচনা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতে হাইকমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অতিথিরা সমবেত কণ্ঠে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি পরিবেশন করেন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে একুশের কবিতা আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশিত হয়। এরপর ভাষাশহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাত করা হয়।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্য ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। বিজ্ঞপ্তি

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা