চীনের ওশান বিশ্ববিদ্যালয়ে মাতৃভাষা দিবস

ওশান বিশ্ববিদ্যালয়ে মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা
ওশান বিশ্ববিদ্যালয়ে মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা

মাতৃভাষা রক্ষার্থে বুকের তাজা রক্ত বিলিয়ে দেওয়ার একমাত্র ইতিহাস বাঙালির। সে ইতিহাসকে অমর করে রাখতে এবং বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে ভাষাজ্ঞান ও বৈচিত্র্যের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেসকো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে।

সেই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০০ সাল থেকে প্রতিবছর এই দিনটি যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। ইউনেসকো ঘোষিত এবারের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘উন্নয়ন, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও পুনর্মিলনে আদিবাসী ভাষা’।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সঠিক ইতিহাস ও গুরুত্বকে বিশ্বের নানা ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে উত্তর-পূর্ব চীনের চিংডাও শহরের ওশান ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ পালনের জন্য আয়োজন করেন এক অনুষ্ঠানের। এতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।

‘একুশের গান’ গাওয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। এরপর ভাষা দিবসের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

অনুষ্ঠানে মিসর, ইন্দোনেশিয়া, জিম্বাবুয়ে, ভারত, পাকিস্তান, চীন ও মঙ্গোলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। নিজ নিজ ভাষা পরিচিতি অংশে অংশগ্রহণকারী ছাত্রছাত্রীরা তাঁদের মাতৃভাষার ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরার পাশাপাশি ভাষার জন্য বাঙালির আত্মত্যাগের অসীম সাহসিকতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য দেন পিএইচডি গবেষক তরিকুল ইসলাম (সহকারী অধ্যাপক, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) ও মুহাম্মদ ফররুখ রহমান (শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)।

অনুষ্ঠানে শিশু-কিশোরদের জন্য কবিতা আবৃত্তি, গান ও নাচের আয়োজন করা হয়, যাতে তারা নিজ নিজ ভাষায় গান ও কবিতা পরিবেশন করে।

বাংলাদেশি শিক্ষার্থী মঞ্জুর হাসানের (পিএইচডি গবেষক) সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিএইচডি গবেষক মোহাম্মদ অহিদুল আলম, (সহকারী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)। আয়োজকদের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ অহিদুল আলম বলেন, চিংডাও বিশ্ববিদ্যালয়ে এটাই আমাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম আয়োজন। এখানে আসা বিভিন্ন ভাষাভাষীদের পক্ষ থেকে আমাদের এই আয়োজনে যথেষ্ট সাড়া পেয়েছি। তাই আমরা আশা করছি, আগামী দিনগুলোতেও আমাদের এই আয়োজনকে অব্যাহত রাখার মাধ্যমে এই দিবসের সঠিক ইতিহাস বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর কাছে তুলে ধরার প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।

মো. সাইফ উদ্দীন: এমএস, বেনথোস ইকোলজি ল্যাবরেটরি, ওশান বিশ্ববিদ্যালয়, চীন।