বাংলাদেশ-তুরস্কের দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রটোকল স্বাক্ষর

প্রটোকলে স্বাক্ষর করেন এম অহিদুজ্জামান ও মেহমেত কারাজা
প্রটোকলে স্বাক্ষর করেন এম অহিদুজ্জামান ও মেহমেত কারাজা

বাংলাদেশের নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং তুরস্কের ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা সহযোগিতা বিষয়ে একটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রটোকলে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে স্বাক্ষর করেন উপাচার্য ড. এম অহিদুজ্জামান এবং ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে রেক্টর (উপাচার্য) ড. মেহমেত কারাজা। গত বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ইস্তাম্বুলে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে নয়টায় এই প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। স্বাক্ষরকালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইস্তাম্বুলে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম, কনসাল ও দূতালয়প্রধান বিদোষ চন্দ্র বর্মণ, ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য ড. আলী ফুয়াত আইদিন ও আন্তর্জাতিক শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ইলমাজ আকাইয়া।

অনুষ্ঠানে ড. আলী ফুয়াত আইদিন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ১৭৭৩ সালে ইম্পিরিয়াল স্কুল অব নেভাল ইঞ্জিনিয়ারিং নামে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টির বর্তমানে রয়েছে পাঁচটি ক্যাম্পাস, ৯৯টি আন্ডার গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম ও ১৫৮টি গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মান আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। প্রসঙ্গক্রমে তিনি যোগ করেন, তুরস্কের দুজন প্রেসিডেন্ট ও চারজন প্রধানমন্ত্রী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। প্রটোকলের সুদূরপ্রসারী ও বহুমুখী প্রভাব তুলে ধরে আলী ফুয়াত আইদিন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষা সহযোগিতা বিষয়ে প্রটোকল স্বাক্ষরের মাধ্যমে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আনুষ্ঠানিক সহযোগিতামূলক সম্পর্কের শুভ সূচনা হলো। আগামী দিনগুলোতে নিবিড়ভাবে অংশীদারত্বের মাধ্যমে কাজ করার ফলে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিশেষত শিক্ষা ও বিজ্ঞান খাতে নতুন নতুন দিক উন্মোচিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

প্রটোকল স্বাক্ষর শেষে এম অহিদুজ্জামান, মেহমেত কারাজাসহ অন্যরা
প্রটোকল স্বাক্ষর শেষে এম অহিদুজ্জামান, মেহমেত কারাজাসহ অন্যরা

প্রটোকল স্বাক্ষরে সংশ্লিষ্ট সবার সক্রিয় ও আন্তরিক সহযোগিতার প্রশংসা করে ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রটোকল স্বাক্ষরের ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বিনিময় শুরুর মধ্য দিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি কার্যকর, ফলপ্রসূ ও টেকসই সম্পর্ক স্থাপিত হবে। এটি শিক্ষা, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী বিষয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্রে মাইলফলক হয়ে থাকবে। জনকূটনীতির প্রসারতা ও তার তাৎপর্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্রমবর্ধমান বিশ্বায়নের এ যুগে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগের পাশাপাশি শিক্ষা পরিমণ্ডলেও ক্রমাগতভাবে যোগাযোগ প্রসারিত হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ প্রটোকল স্বাক্ষরের ফলে আগামী দিনগুলোতে দুই দেশের জনগণের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে। সুসংহত ও শক্তিশালী হবে বাংলাদেশ ও তুরস্কের দ্বিপক্ষীয় বন্ধুত্বপূর্ণ ও ভ্রাতৃত্বমূলক সম্পর্ক।

ড. এম অহিদুজ্জামান নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো ও শিক্ষা কার্যক্রম বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, এটি একটি প্রতিশ্রুতিশীল বিশ্ববিদ্যালয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ ও অগ্রসরমাণ জনগোষ্ঠী গড়ার লক্ষ্যে ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি চারটি বিভাগ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে ২০০৬ সালে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদের অধীনে ২৮টি বিভাগ ও দুটি ইনস্টিটিউট রয়েছে। কালের পরিক্রমায় এক যুগের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেবর যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি বেড়েছে শিক্ষা ও গবেষণার মান। তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর বাঙালি জাতি গঠনে এবং উচ্চশিক্ষার প্রসারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষা দর্শন ও জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে উচ্চশিক্ষায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষা ও গবেষণার গুণগত মান বৃদ্ধি, বিজ্ঞানমনস্কতা অর্জন, প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন, মানবিক গুণাবলির উৎকর্ষ সাধন ইত্যাদির মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে কাজ করে যাচ্ছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাব্য সহযোগিতার ওপর আলোকপাত করে এম অহিদুজ্জামান বলেন, তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক মান অর্জনের লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রটোকল স্বাক্ষরের ফলে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রকল্পনির্ভর সহযোগিতা চালু হলে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তার বিরামহীন অভিযাত্রায় আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে।

প্রটোকল স্বাক্ষর শেষে স্মারকবিনিময়
প্রটোকল স্বাক্ষর শেষে স্মারকবিনিময়

তিনি বলেন, ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন বিষয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একমত হয়েছে। সমুদ্রবিজ্ঞান, সুনীল অর্থনীতি, পরিবেশবিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব তথা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ন্যানো প্রযুক্তি, রোবটিকসসহ আরও পারস্পরিক সহযোগিতার সম্ভাব্য খাত চিহ্নিতকরণ ও সন্ধানের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

স্বাক্ষর শেষে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব প্রযুক্তি গবেষণাগার, মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র ও টেকনো পার্ক পরিদর্শন করে। উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি বাংলাদেশ কনস্যুলেটের সক্রিয় যোগাযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ও তুরস্কের ইলদিজ টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে একটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে।