রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা কানাডার আসর

আসরে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা
আসরে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা

টরন্টোয় হয়ে গেল রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা কানাডার ‘খামখেয়ালি আসর’। এবার ছিল চতুর্থ আসর। সাংগীতিক চর্চার উৎকর্ষ সাধনে ব্রতী এই আসরের এবারের বিষয়বস্তু ছিল রবীন্দ্রনাথের গানে বাঁশির নানান ব্যঞ্জনা। রবীন্দ্রসংগীতে বিভিন্ন পর্যায়ের যেসব গানে বাঁশি, বেণু, বাঁশরি ইত্যাদি বাঁশি-সমার্থক শব্দ আছে, এমন নির্বাচিত গান পরিবেশন করেন শিল্পীরা সম্মেলক ও একক কণ্ঠে। এ আসর বসেছিল ৯ মার্চ সন্ধ্যায়।

আসরের শুরুতেই সম্মেলক কণ্ঠে পরিবেশিত হয় বসন্তের গান ‘আহা আজি এ বসন্তে’।

প্রথম পর্বে রবীন্দ্রনাথের গানে বাঁশির নানা মাত্রার দ্যোতনা ও ব্যঞ্জনার তাত্ত্বিক দিকের ওপর আলোকপাত করেন ফারহানা আজিম শিউলী। এতে স্থান পায় রবীন্দ্রনাথের একেবারে শুরুর দিকের রচিত গান থেকে একেবারে জীবনসায়াহ্নে রচিত বেশ কয়েকটি গানে বাঁশির নানা মাত্রায় প্রয়োগ। ‘গীতবিতান’–এর প্রেম, পূজা ও প্রকৃতি, বিচিত্র ইত্যাদি নানান পর্যায়ের এবং ‘ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলি’, নাটক, গীতিনাট্য, কাব্যনাট্য, নৃত্যনাট্য থেকে নির্বাচিত ২০টির মতো গানে কতভাবে, কত আঙ্গিকে রবীন্দ্রনাথ বাঁশিকে তুলে এনেছেন, সেসব আলোচিত হয়। এই বাঁশি কখনো ছুটে চলার সঞ্জীবনী। কখনো বেরিয়ে পড়ার ডাক। কখনো মুক্তির স্বরূপ। কখনো মুক্তিকে স্বাগত জানানোর বাহন। কখনো অন্তরের অব্যক্ত ভাষার মাধ্যম। কখনো বেদনার অনুষঙ্গ। কখনো শারদ–প্রকৃতির মাঙ্গলিকতা আহ্বানের সঙ্গী। কখনো বর্ষার বজ্রনিনাদের স্বর। কখনো দেহমনে কামনা প্রকাশের ভাষা। কখনো রাধাকৃষ্ণের প্রণয়লীলার অনুষঙ্গ। কখনো দিনাবসান-জীবনাবসানের প্রতীক। কখনো মনের মানুষের খোঁজে বিরামহীন সন্ধানের বাহন। কখনো ভ্রষ্টলগ্নের অনুষঙ্গ। কখনো অহৈতুকীর ভাষা। কখনো মনের প্রতিশব্দ। কতভাবে, কত রকম করে যে রবীন্দ্রনাথের গানে বাঁশি এসেছে, তার একটা দৃশ্যকল্প ধরবার প্রয়াস পেয়েছেন আলোচক তাঁর উপস্থাপনায়।

দ্বিতীয় পর্বে শিল্পীরা প্রত্যেকে দুটি করে একক সংগীত পরিবেশন করেন। গীত রবীন্দ্রসংগীতগুলো ছিল—‘জাগরণে যায় বিভাবরী’, ‘সকরুণ বেণু বাজায়ে কে যায়’, ‘এসো গো জ্বেলে দিয়ে যাও প্রদীপখানি’, ‘মন যে বলে চিনি চিনি’, ‘ধীরে ধীরে ধীরে বও ওগো উতল হাওয়া’, ‘তোমার নাম জানি নে সুর জানি’, ‘এখনো তারে চোখে দেখিনি’, ‘দূরদেশি সেই রাখাল ছেলে’, ‘প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে’, ‘জগতে আনন্দযজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ’, ‘আমি হৃদয়ের কথা বলিতে ব্যাকুল’ ও ‘আমার এ পথ তোমার পথের থেকে’।

আসরে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা ছিলেন চিত্রা সরকার, হাবিব উদ্দিন, নিঘাত মর্তুজা শর্মী, নবিউল হক বাবলু, শিখা আখতারী আহমাদ, ফারহানা আজিম শিউলী, মমতাজ বেগম ও শাহজাহান কামাল।

সব শেষে খসরু চৌধুরী আবৃত্তি করে শোনান দুটো কবিতা—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘প্রাণ’ ও শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ‘আনন্দ ভৈরবী।’

আমন্ত্রিত অতিথিরা নীরবতায় ও মনোযোগে শ্রবণ করেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা কানাডার খামখেয়ালি আসরের সব পরিবেশনা।