৩২ নম্বর ধানমন্ডি

ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে ফটকের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। ছবি: জাহিদুল করিম
ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে ফটকের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল। ছবি: জাহিদুল করিম

বাংলা একাডেমির মূল চত্বর। লেখাগুলো জ্বল জ্বল করছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর। বাড়ি ৬৭৭, সড়ক ৩২, ধানমন্ডি, ঢাকা ১২০৯।

কে যায়, কে রে, দাঁড়া! রাজু এখানে এসে থমকে দাঁড়ায়।

কার কণ্ঠ? উঁকি দিয়ে সে বঙ্গবন্ধুকে দেখতে পায়। প্রাণপ্রিয় তাঁর পাইপ হাতে ওপর থেকে নেমে আসছেন।

কী বই নিবি, নে! বিস্ময় ভরা চোখে তাকায় সে।

তোদের জন্যই এই আয়োজন। যেটা নিতে চাস নিতে পারবি। তার আগে তোর সঙ্গে একটু গল্প করি।

বঙ্গবন্ধু ওকে নিয়ে সামনের দিকে যান।

ওমা, ওখানে বসা তার মতো আরও এক দল কিশোর। ওরা স্কুলে পড়ে। আজ শুক্রবারে ওদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর বসার কথা।

তুষার কেমন আছে রে! বঙ্গবন্ধু জিজ্ঞেস করেন। কোন তুষার, রাজু মাথা চুলকায়। ও হ্যাঁ, হ্যাঁ, ওই যে কবিতা পড়েছিল। রাজু তাড়াতাড়িই বলে, সে এখন খুদে সংবাদপাঠক।

ও বড় মেধাবী রে, একটু যত্ন পেলে দেখিস কত দূর যায়! ঠিক তোর মতো। রাজু আরেকবার থ খেয়ে যায়।

আমার মতো।...মানে এই রাজুর মতো! ও কিছু না বললেও বঙ্গবন্ধুই বলতে থাকেন।...তোরা এই যে ছবি আঁকিস। …বাংলার সবুজ প্রকৃতি, মাঠঘাট, নদী পর্বত।...এগুলো মানে জননীকে, জন্মভূমিকে ভালোবাসা। টেনে টেনে বলেন বঙ্গবন্ধু।

আমি সাংবাদিক হতে চাই। একজন বলে ওদের মধ্য থেকে।

নিশ্চয়ই! দেশকে নিয়ে লিখবি, দেশের মানুষকে ভালোবাসবি। আমি বলছি, তাদের নিয়ে লিখলে তারা তোর হবে। দেশ তোর জন্য ভাববে।

রাজু ভাবে, ভবিষ্যতে সে কী হবে! বঙ্গবন্ধু এবার ওর দিকে নজর দিয়েই বলেন, আর অঙ্কটাও মনোযোগ দিয়ে অনুশীলন করবি। কেন জানিস, বঙ্গবন্ধু ব্যাখ্যা দেন, অঙ্ক করলে চিন্তাশক্তি বাড়ে।

রাজু কী হবে, এখনো সে ঠিক করতে পারেনি। মা কী যে বলেন, একেক সময় একেকটা। কোনো সময় ডাক্তার, কোনো সময় ইঞ্জিনিয়ার...তাহলে ও কী বলবে! বলে ফেলে, আমি যে ডাক্তার হব।

হ্যাঁ, তাইতো। মাকে সেবা করতে পারবি। বঙ্গবন্ধু ওর মাথায় হাত বোলান। সেও মনে করে, ঠিক পছন্দটা বলে দিয়েছে।

বঙ্গবন্ধু বলেন, তাহলে তোকে অনেক পড়তে হবে। রাজু কিছু বলে না। অনেক বই পড়ার ইচ্ছে তার। কিন্তু এখন পড়বে বঙ্গবন্ধুকে। তার চোখ সামনের বইগুলোর দিকে। একপর্যায়ে এগুলো সে নাড়াচাড়া করে। ‘১৫ই আগস্ট ১৯৭৫’, ‘ছেলেবেলায় শেখ মুজিব’, ‘শেখ রাসেল’, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি’।

বঙ্গবন্ধু বোঝেন, বলেন, হ্যাঁ এগুলো পড়তে পড়তে আরও বই পড়তে ইচ্ছে করবে।

রাজু এক গাদা বই তুলে নেয়।

বঙ্গবন্ধু ওপরে উঠে যান।

পাইপটি যথারীতি তাঁর হাতে।

তুমুল ভিড় স্টলটিতে। সবাই এইদিকে ঝুঁকে পড়েছে। এবার বুঝি বাবার হাত। তাঁর হাতকে রাজু আরও বেশি শক্ত করে ধরে রাখে।
...

নিমাই সরকার: আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত। ই-মেইল: <[email protected]>