মাতৃভূমির মায়ের আদর কই পাব বলো?

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই শিমুলবাগানের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এই শিমুলবাগানের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে

আমার ল্যাবমেটের সঙ্গে কয়েক দিন আগে কথা হচ্ছিল। তাঁর নাম প্যাসকেল। বেশ ভালো ছেলে। এসেছে বেলজিয়াম থেকে। বেলজিয়াম ইউরোপের একটি দেশ। ইউরোপের সভ্যতার বিকাশ হয়েছে সেই বহুকাল আগে। সেই এলাকার ছেলে প্যাসকেল। আমার চেয়ে ছোট। তবে আমার সঙ্গে ইতিমধ্যে তাঁর বেশ জমে উঠেছে। ভূখণ্ডের সীমানা আসলে মানুষের মনকে আটকাতে পারে না। মানুষের মনের আবেগের ধরন প্রায়ই একই।

প্যাসকেলের সঙ্গে কথা বলছিলাম আমেরিকা নিয়ে। প্যাসকেল আগেও আমেরিকায় এসেছে ছুটি কাটাতে। আমেরিকা নিয়ে ওর ধারণা সংগত কারণেই আমার চেয়ে অনেক বেশি। আমার ধারণা কেমন ছিল তা নিয়ে কথা হচ্ছিল।

আমেরিকায় আসার আগে আমার আসলে একটা ‘ওয়াউ’ ধারণা ছিল। আসার পর মনে হলো দিল্লিকা লাড্ডুর মতো অবস্থা। আমেরিকা নিশ্চয়ই বিশ্বসেরা সবকিছুতে। কিন্তু যে ওয়াউ ভাব নিয়ে এসেছিলাম, তা কয়েক দিন যেতে না যেতেই কেটে গেছে। আমার মতো প্যাসকেলের ধারণাও একই। কিন্তু তারপরও প্যাসকেল ইউরোপ ছেড়ে আমেরিকায় বসত গড়তে চায়।

জাপান আর আমেরিকার মধ্যে একটা বিরাট পার্থক্য হলো ডাইভার্সিটি। এখানে বহু ধরনের মানুষ। সবাই মোটামুটি ইমিগ্র্যান্ট। যার কারণে আমেরিকায় নিজেকে এলিয়েন লাগে না। তবে আমেরিকার কাগজে কিন্তু জাপানের মতো এলিয়েনই লেখা থাকে।

আমেরিকায় আফ্রিকানদের দেখলে অনেককে মাঝে মাঝে বাঙালি মনে হয়। ব্রিটিশ–ইউরোপিয়ানরা সাদা চামড়ার। ওদের ভাব আছে। তাই ওরা অফিসে আর আফ্রিকানরা অফিসের বাইরে। আমাদের এশিয়ানদের অবস্থা এই দুইয়ের মাঝে। তবে আমেরিকার বাইরের মানুষদের গবেষণাগারে বেশি দেখা যায়।

আমেরিকানরা রিসার্চ লাইনে খুব বেশি আসে না। কারণ, খাটুনি বেশি টাকার তুলনায়। সেদিন ল্যাবে এই নিয়ে কথা হচ্ছিল। আমাদের ল্যাবে অধ্যাপক ছাড়া বাকিরা বেশির ভাগ অন্য দেশ থেকে আসা। কারণ, বিদেশিদের কম মজুরিতে পাওয়া যায়।

যেটা বলছিলাম এখানে এসে আমার ওয়াউ ভাব চলে গেছে। তবে আমেরিকার মানুষ অনেক খোলামেলা জাপানিদের চেয়ে। ল্যাবে কাজ করলে দম বন্ধ হয়ে আসে না। বেশ খোলামেলা একটা পরিবেশ এখানে। এটা বেশ ভালো লেগেছে।

সবাই বলেন আমেরিকায় এলে প্রথম প্রথম সবার আমার মতো ইমেপ্রেশন হয়। তারপর আর যেতে চায় না। তবে আমার কাছে নিজের দেশের চেয়ে ভালো অন্য কিছু নেই। যতই সমস্যা থাকুক নিজের দেশই সোনার দেশ। পর যতই আপন হোক মায়ের সমান হতে পারে না। মাতৃভূমির মায়ের আদর কে দেবে বলো?
...

ড. মো. ফজলুল করিম: পোস্টডক স্কলার, পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়, পেনসিলভানিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।