ব্রাজিলের সঙ্গে বাংলাদেশের সেতুবন্ধ রচনা

অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোরেরা
অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোরেরা

গত বছরের মতো এবারও ব্রাজিলের রাজধানী ব্রাসিলিয়ায় একগুচ্ছ অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে উদ্‌যাপন করা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস। এবারের সপ্তাহব্যাপী আয়োজনের মূল আকর্ষণ ছিল ২২ মার্চের সমাপনী অনুষ্ঠানে দেশটির ২০০ শিশু-কিশোরের অংশগ্রহণে আনন্দমুখর অনুষ্ঠান।

বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদ্‌যাপনের সূচনা হয় ১৫ মার্চ শুক্রবার সকালে ব্রাসিলিয়ার শিশুদের একটি বিশেষায়িত স্কুল Casa Azul-এর ২০০ ছাত্রছাত্রীর অংশগ্রহণে ‘বঙ্গবন্ধু অ্যান্ড বিউটিফুল বাংলাদেশ’ শীর্ষক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে।

অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোরেরা
অংশগ্রহণকারী শিশু-কিশোরেরা

১৭ মার্চ রোববার দূতাবাস কার্যালয়ে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তাঁর ৯৯তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসের আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানমালা শুরু হয়। ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠের পর বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্য এবং বাংলাদেশের অব্যাহত সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠের পর দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমান স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় বঙ্গবন্ধুর অসীম অবদানের কথা স্মরণ করে বিশেষ বক্তব্য প্রদান করেন।

২২ মার্চ শুক্রবার সকালে Casa Azul স্কুল প্রাঙ্গণে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালার চূড়ান্তপর্ব অনুষ্ঠিত হয়। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে সূচিত হওয়া এ অনুষ্ঠানের শুরুতে স্কুলের সভাপতি মিস ডেইজি ও রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমান বক্তব্য দেন।

ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের কেক কাটা হয়
ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের কেক কাটা হয়

মো. জুলফিকার রহমান ব্রাজিলিয়ান-পর্তুগিজ ভাষায় তাঁর বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর বাল্যকালের প্রতিবাদী কাজকর্মের শিশুতোষ বর্ণনা করে স্থানীয় শিশুদের মুগ্ধ করেন। শেখ মুজিব বা সেই খোকা কীভাবে একসময় বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠলেন, আপামর বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা হয়ে কীভাবে বাংলাভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে নেতৃত্ব দিলেন—সেসব বলেন গল্পবলার মতো ভঙ্গিমায়।

স্কুলের সভাপতি ডেইজি তাঁর বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদ্‌যাপন করার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানান। তিনি দুই দেশের জনগণের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরও উন্নয়নে এই শিশুরা সেতুবন্ধ হয়ে কাজ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

বক্তব্য দিচ্ছেন মো. জুলফিকার রহমান
বক্তব্য দিচ্ছেন মো. জুলফিকার রহমান

এরপর স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুরুতে স্কুলের শিশু–কিশোরেরা বাংলাদেশের চিরায়ত পোশাক পরিধান করে ফ্যাশন শো আয়োজন করে। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের অবিস্মরণীয় সংগীত ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল রক্ত লালে’র সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা উপস্থিত সুধীদের বিমোহিত করে। অনুষ্ঠানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ছিল স্কুলের শিশু–কিশোরদের পরিবেশনায় আয়োজিত বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মনোজ্ঞ পরিবেশনা যেন ব্রাসিলিয়ার বুকে এক টুকরো বাংলাদেশকে তুলে ধরে।

স্কুলের সভাপতিকে স্মারক উপহার দিচ্ছেন মো. জুলফিকার রহমান
স্কুলের সভাপতিকে স্মারক উপহার দিচ্ছেন মো. জুলফিকার রহমান

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় অংশে বঙ্গবন্ধুর জীবনী নিয়ে নির্মিত ‘ফরএভার বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ ছাড়া ১৫ মার্চে অনুষ্ঠিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী ২০০ প্রতিযোগীর প্রত্যেককে বিশেষ স্মারক প্রদান করা হয়। এরপর রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমান ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের কেক কাটেন।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

দেশাত্মবোধে উজ্জীবিত হয়ে বিপুল উৎসাহ–উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এ অনুষ্ঠানমালা আয়োজনের মাধ্যমে ব্রাসিলিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস ব্রাজিলের নতুন প্রজন্মের কাছে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে, যা আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে। বিজ্ঞপ্তি

স্কুলের শিক্ষার্থীদের আঁকা কয়েকটি ছবি
স্কুলের শিক্ষার্থীদের আঁকা কয়েকটি ছবি