টোকিওতে বাঙালিদের সাকুরা উৎসব
কনকনে ঠান্ডা বরফ–জমাট শীতল দিনগুলোর শেষে হালকা উষ্ণতার ছোঁয়া নিয়ে আসে বসন্ত। জাপানের কানতো অঞ্চলও শীতের ম্যাড়মেড়ে দিন পেরিয়ে সবে বসন্তের উষ্ণতা পেতে শুরু করেছে। গাছে গাছে ফুটতে শুরু করেছে সাকুরা। এখন থেকে কয়েক দিন জাপানিদের মধ্যে ধুম পড়ে যাবে এই সাকুরা ফুল দেখতে। রাস্তাঘাট সব সয়লাব হয়ে যাবে গোলাপি রঙের ফুলের পাপড়িতে।
এই নিরুপম সৌন্দর্যের সঙ্গে অনেকটা নির্ভার সময় কাটানোর অনুভূতিকে সঙ্গে নিয়ে টোকিওর কিতা-কুতে অবস্থিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্মানে দেওয়া চা-চক্রের স্মৃতিবিজড়িত আসকাইয়ামা উদ্যানে হয়ে গেল প্রবাসী বাংলাদেশিদের সপ্তম সাকুরা উৎসব। ১৯১৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম জাপান সফরের সময় কিতা-কুর এই পার্কটিতে আয়োজন করা হয়েছিল এক চা-চক্রের। ৪০ জনেরও বেশি বিশিষ্ট ব্যক্তি সেখানে সে সময় উপস্থিত ছিলেন। তখন থেকেই পার্কটি বাঙালি ও জাপানিদের মধ্যকার বন্ধুত্বের সাক্ষী বহন করে চলেছে।
পরিষ্কার রৌদ্র ঝলমলে একটি মনকাড়া দিনে (২৪ মার্চ রোববার) কানতো অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে প্রবাসীরা উৎসবে ছুটে যান। অনেক দিন পর আবার এত বিপুলসংখ্যক প্রবাসীর একসঙ্গে দেখার সুযোগ মিলেছিল সবার। সবাই মেতে ওঠেন মজাদার আড্ডায়। শিশুরাও কেউই আনন্দ থেকে বঞ্চিত ছিল না।
দুপুরে সাকুরাগাছের নিচে বসে সবাই মিলে দেশীয় ধাঁচের সুস্বাদু গরুর মাংস ভুনা, ভাজি, ডাল, ভাত দিয়ে ভূরিভোজ করেন। খাওয়াদাওয়া শেষে সবাই মিলে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্বরলিপি কালচারাল গ্রুপের নিজস্ব পরিবেশনা ছাড়াও ছিল প্রবাসের শিশু-কিশোরদের গাওয়া গান। সাধারণ প্রবাসীরাও উদ্যানের মনোরম হাওয়ায় গলা ছাড়েন।
বিকেলে আবার ছিল মজাদার দেশীয় নাশতার আয়োজন। নাশতার পর ছিল বিঙ্গো খেলা। আকর্ষণীয় বিঙ্গো খেলাটি পরিচালনা করেন সুখেন ব্রহ্ম ও মিজানুর রহমান। সবাই মিলে বেজায় উপভোগ করেন এ পর্বটি।
জাপানে প্রবাসীদের এ ধরনের আয়োজন যে কতটা হৃদ্যতাপূর্ণ, তা বোঝার একটি উপায় হলো সবাই নিজেদের মধ্যকার সব ভেদাভেদ ভুলে যখন এক কাতারে দেশি ভাই বা ভাবি হিসেবে পরস্পরকে বরণ করে নেন। এমনই একটি মুহূর্ত ধরা পড়ে ক্যামেরায়। আওয়ামী লীগের জাপান শাখার সভাপতি সালেহ মো. আরিফ ও বিএনপির জাপান শাখার সাধারণ সম্পাদক মীর রেজাউল করিম ক্যামেরার সামনে একসঙ্গে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে পড়েন। দলীয় কর্মীরাও এতে যোগ দেন।
ধীরে ধীরে সন্ধ্যা নেমে এলে ঠান্ডা হাওয়া বইতে থাকে। দূর-দূরান্ত থেকে আসা প্রবাসীরা ঘরমুখী হতে শুরু করেন। প্রবাসী সংগঠন কন্যা জায়া জননীর পক্ষ থেকে এ আয়োজনের সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন লিপিকা চৌধুরী ও জালাল জাবেদ দম্পতি। তাঁদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফসল ছিল সাকুরা উৎসবটি। তাঁদের সুনিপুণ দক্ষতায় প্রবাসীরা হাসিমুখে একটি চমৎকার দিনের স্মৃতি নিয়ে বাড়ি ফেরেন।
লিপিকা চৌধুরী জানান, দুই বছর ধরে উত্তরণ শিল্পীগোষ্ঠীও তাদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছে। অনুষ্ঠানটিকে সফল করে তুলতে যাঁরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন, তিনি তাঁদের প্রতি ও উপস্থিত প্রবাসীদের প্রতি ধন্যবাদ জানান।