র্যাফেল ড্রর অর্থ উইনিপেগের স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণ প্রকল্পে দান
ম্যানিটোবায় বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব
বাঙালির জীবনে পিঠা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। খাদ্যরসিক বাঙালি প্রাচীনকাল থেকে প্রধান খাবারের পাশাপাশি অনেক মুখরোচক খাবার তৈরি করে এসেছে। এর মধ্যে পিঠা অন্যতম। এ বছর কানাডা কেঁপেছিল প্রচণ্ড শীতে। কয়েক দিন আগেও তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি ছুঁয়েছিল। সেই শীতের তীব্রতা এখন কম। অধিকাংশ শহরে তাপমাত্রা এখন প্লাস ৫ থেকে ৬ ডিগ্রির মধ্যে আছে। প্রকৃতিতে এখন বসন্ত। চলছে শীত আর বসন্তের ভালোবাসা।
এই শীত–বসন্তের ভালোবাসার মধ্যে গতকাল ৩১ মার্চ কানাডার ম্যানিটোবা প্রদেশের রাজধানী উইনিপেগে প্রতিবছরের মতো হয়ে গেল জমজমাট পিঠা উৎসব ২০১৯। সাপ্তাহিক ছুটির দিন হওয়ায় কয়েক শ বাংলাদেশি এই পিঠা উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারে এই অনুষ্ঠান দুপুর ১২টায় শুরু হয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলে। অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল কানাডা-বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন (সিবিএ) ম্যানিটোবা। পিঠা উৎসবের পাশাপাশি চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বাংলাদেশের বিভিন্ন জনপ্রিয় গান পরিবেশন করেন কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশি শিল্পীরা।
দুপুর ১২টার আগে থেকেই কমিউনিটি সেন্টারের দুই পাশে ১১ জন শৌখিন পিঠা বিক্রেতা তাঁদের পিঠার পসরা নিয়ে বসেন। সব মিলিয়ে ২৫ থেকে ৩০ ধরনের পিঠা নিয়ে বসেছিলেন তাঁরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ভাপা, চিতাই, পাটিসাপটা, ছাঁচ, পুলি, দুধরাজ, মোয়া, কালাইপুরি, রসগজাসহ বেশ কয়েক ধরনের পিঠা। পিঠার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বাহারি মিষ্টি, রসমালাই, দই, বিরিয়ানি, চিকেন ইত্যাদি বিক্রি হয়। পিঠার দাম ছিল ১ ডলার থেকে শুরু করে ৪ ডলার পর্যন্ত।
মা–বাবার হাত ধরে অনেক শিশু–কিশোর এই পিঠা উৎসবে আসে। মাহমুদুন নবী সোহলে জানালেন, তিনি এসেছেন তাঁর সন্তানদের বাংলাদেশের পিঠার সঙ্গে পরিচিত করতে। এই দেশে জন্ম হওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সন্তানেরা যেন তাদের ঐতিহ্যকে ভুলে না যায়, সে কারণে তাঁর আসা।
একজন শৌখিন পিঠা বিক্রেতা জানালেন, তিনি প্রতিবছর বাংলাদেশের নাটোর থেকে খেজুরের গুড় আনান এই পিঠা উৎসবে পিঠা বিক্রির জন্য। তিনি আরও জানান, কোনো লাভের আশায় তিনি এখানে পিঠা বিক্রি করেন না। কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের আসল পিঠার স্বাদ দিতে তিনি পিঠা নিয়ে আসেন।
উৎসবের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠন কানাডা-বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন (সিবিএ) ম্যানিটোবার প্রেসিডেন্ট নাসরিন মাসুদ। তিনি কানাডায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখার আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সিবিএর সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল শিবলী।
অনুষ্ঠান শেষ হয় র্যাফেল ড্রর মাধ্যমে। এটি স্পনসর করেন রেজা কাদির। র্যাফেল ড্রর সংগৃহীত অর্থ উইনিপেগে নির্মাণপ্রক্রিয়ায় থাকা স্থায়ী শহীদ মিনার প্রকল্পে দান করা হয়।