রুয়ান্ডায় বাংলাদেশের চেতনা ধারণ

অনুষ্ঠানে কেক কেটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয়
অনুষ্ঠানে কেক কেটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা হয়

খুব ছোটবেলায় যখন স্কুলে পড়ি তখন স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবস খুব ঘটা করে পালিত হতো বা ব্যক্তিগতভাবে আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে তা পালন করতাম। সকালে ঘুম থেকে উঠেই সাধ্যমতো দিবসের সঙ্গে মিলিয়ে পোশাক পরে খেলার মাঠে চলে যাওয়া, বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করা ছিল তখনকার সময়ের এক অসাধারণ সব মুহূর্ত। শুরুতেই জাতীয় সংগীত গাওয়া তো এক অত্যাবশ্যকীয় বিষয়ই ছিল। এখনো আছে এবং যা অনাদিকাল পর্যন্ত তা চলতেই থাকবে।

তারপর অনেক দিন ঠিক সেভাবে এসব গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো পালন করা হয়ে ওঠেনি বা চাইলেও তা করা যায়নি। মূলত বাস্তবতার কারণেই তা অনেক সময় করা হয়ে ওঠেনি। যদিও মন পড়ে থাকে এসবের মধ্যেই। কাজ থাকা বা নানা কারণে হয়তো দল বেঁধে ঠিক আগের মতো এসব দিবস পালন করা হয় না। তবে অস্তিত্বজুড়ে বিদ্যমান থাকা দেশপ্রেম আর দেশের প্রতি অগাধ মমতার কারণে সারা দিনমান এরই মধ্যে যে বিচরণ থাকে তা বোধ হয় দেশের বাইরে থাকা কোনো নাগরিকই অস্বীকার করতে পারবেন না।

মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, জ ই মামুন ও মুন্নী সাহার সঙ্গে সপরিবারে লেখক
মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, জ ই মামুন ও মুন্নী সাহার সঙ্গে সপরিবারে লেখক

তবে সব বাধা ও প্রতিকূলতা পেরিয়ে এবার আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডায় আমাদের স্বাধীনতা দিবস এক দারুণ আবেগ আর আনন্দের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে। অবশ্য আবেগ আর আনন্দের উদযাপন হবেই না বা কেন। যেখানে দেশ থেকে আসা অনেক বিশিষ্ট নাগরিক আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে একে শতগুণে মহিমান্বিত করে গিয়েছেন। এক বিশেষ কারণে এলেও তাঁরা আমাদের সময় দিতে মোটেও কার্পণ্য করেননি, যা রুয়ান্ডার কিগালিতে বসবাসকারী আমাদের সবাইকে সত্যিকারভাবেই উজ্জীবিত করেছে।

আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশে রুয়ান্ডার অনারারি কনসাল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। যাঁর নেতৃত্ব ও সক্রিয় অংশগ্রহণ মূলত অংশগ্রহণকারী সবার মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছিল বলা যেতে পারে। এ ছাড়া ছিলেন বাংলাদেশ থেকে আগত একুশে টিভির সিইও মনজুরুল আহসান বুলবুল, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, এটিএন বাংলার জ ই মামুন ও মুন্নী সাহা এবং সংগীতশিল্পী চন্দন সিনহা। যিনি শ্রেষ্ঠ প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে ২০১৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত একই দলে থাকলেও ২৬ মার্চের আগেই চলে যাওয়ায় আমাদের আয়োজনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি।

মুন্নী সাহার সঙ্গে লেখকের স্ত্রী
মুন্নী সাহার সঙ্গে লেখকের স্ত্রী



যাহোক, আমরা যে কয়জন বাংলাদেশি রুয়ান্ডাতে আছি তাতে হয়তো এমন চমৎকার আয়োজন সম্ভব না–ও হতে পারত, যা তাঁদের উপস্থিতিতে সম্ভব করতে সক্ষম হয়েছি। অনেক দিন পর স্বাধীনতা দিবসে একটা বড় দলে জাতীয় সংগীত গেয়ে অনুষ্ঠান শুরু করতে পেরে ঠিক ছোটবেলার অনুভূতিই যে সবার মধ্যে জেগে উঠেছিল। তা খুব দৃঢ়ভাবেই বলতে পারি। আশা করছি আগামী দিনগুলোতে এখানকার স্থানীয় মানুষকে সম্পৃক্ত করে আরও বৃহৎ পরিসরে আমাদের জাতীয় দিবসগুলো পালন করা সম্ভব হবে। যাতে তাঁরা সহজেই বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশের ইতিহাস জানতে সক্ষম হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই তাঁদের বক্তব্যে স্বাধীনতার মূল চেতনা ধারণ ও দেশের স্বার্থের কথা বিবেচনা করে সব ক্ষেত্রে কাজ করে যাওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। এ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই যেন বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ নষ্ট না হয়, সে বিষয়টিকেও গুরুত্বদানের জন্য অনুরোধ করেন।

আশার কথা হলো, বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান (আশা ও ব্র্যাক) ইতিমধ্যেই কাজের ক্ষেত্র বা তাদের প্রাতিষ্ঠানিক মডেল রুয়ান্ডাতে সম্প্রসারণ করতে শুরু করেছে এবং ভবিষ্যতে নিশ্চিতভাবেই এর সংখ্যা বাড়বে বৈ কমবে না। প্রসঙ্গত, উল্লেখ করা প্রয়োজন, বিশ্বনন্দিত বাংলাদেশি ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান উদ্ভাবিত ‘আশা মডেল’ আশা ইন্টারন্যাশনালের ব্যানারে ২০১৬ সাল থেকে রুয়ান্ডায় কার্যক্রম শুরু করেছে এবং ইতিমধ্যেই স্থানীয় উপকারভোগী মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে।