কানাগাওয়ায় প্রবাসীদের বসন্ত সংক্রান্তি

কানাগাওয়ায় বসন্তসংক্রান্তিতে সমবেতরা
কানাগাওয়ায় বসন্তসংক্রান্তিতে সমবেতরা

জাপানে বসন্তকাল প্রায় শেষ হয়ে এল। বসন্তের শেষলগ্নে দেশটির কানাগাওয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশিরা মিলিত হয়েছিলেন নানা রঙের বসন্তসংক্রান্তি সমারোহে। সংক্রান্তি শব্দের আভিধানিক অর্থ সংক্রমণ, ব্যাপ্তি, সঞ্চার করা, গমন করা, মাসের শেষ দিন ইত্যাদি। ইংরেজি করলে যার মানে দাঁড়ায় ট্রানজিট, বসন্ত যখন শেষ হয়ে গ্রীষ্মের দোরগোড়ায় উপস্থিত হলো, যখন এ মৌসুম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে তখনকার এই পরিবর্তনের সময়টিকেই এখানে বলা হচ্ছে বসন্তসংক্রান্তি। আর এ সময়ে জাপানের গাছে গাছে ফুটতে থাকে হরেক রকমের ফুল। প্রবাসীরাও এ সময়ে যেন প্রকৃতির সঙ্গে এক হয়ে ছুটে চলে যান ফুল ধরা গাছের উদ্যানে। আবার কোথাও কোথাও মানুষ দেশের ছোঁয়া পেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন।

কানাগাওয়ায় বসন্তসংক্রান্তিতে সমবেতরা
কানাগাওয়ায় বসন্তসংক্রান্তিতে সমবেতরা

বসন্তসংক্রান্তির মিলনমেলাটি ছিল এমনই একটি অনুষ্ঠান। গত ৩১ মার্চ রোববার ইয়োকোহামার হোসোকাইয়া দাইইচি শুকাইজো হলে কানাগাওয়াপ্রবাসীরা সব এক হয়েছিলেন, একদিন দেশের মানুষের মেলায় জমে যেতে। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ৪০টিরও বেশি পদের খাবার সারিবদ্ধভাবে রাখা হয় টেবিলে। শুধু যে দেখেই জিভে জল আনা ছিল খাবারগুলো তা নয় তাদের রংবেরঙের পরিবেশনাও ছিল অতুলনীয়।

মূল অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশে সম্প্রতি অগ্নি–দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন কাজী আরিফ।

যেমন খুশি তেমন সাজো
যেমন খুশি তেমন সাজো

আমাদের স্বাধীনতার মাস মার্চ। আয়োজনের গোড়ায় সবাই সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। জাতীয় সংগীতের পর উপস্থিত প্রবাসী নারীরা মিলে ‘খোল দ্বার খোল’ গানটি পরিবেশন করেন। এরপর শুরু হয় ছোট ও বড়দের পরিবেশনা। শিশুদের প্রাণবন্ত নাচ-গান, যেমন খুশি তেমন সাজো, চকলেট দৌড়, মিউজিক্যাল চেয়ার এবং পাশাপাশি বড়দের গান সবাইকে মাতিয়ে রাখে।

অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য
অনুষ্ঠানের একটি দৃশ্য

নীলাঞ্জনা হকের অনুপম মঞ্চসজ্জা ছিল দেখার মতো। দীর্ঘক্ষণ ধরে সেখানে চলে ফটোসেশন। প্রবাসীরা মঞ্চকে পেছনে রেখে পারিবারিক ছবি তোলার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এ ছাড়া হলের বাইরে ছোট্ট একটি মাঠেও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে যোগ করা হয় নিজস্ব সাংস্কৃতিক ধারণা। সেটিও ছিল খুব আকর্ষণীয়। সেখানেও ছবি তোলার সুযোগ কাজে লাগাতে কেউই ভোলেননি। বসন্তের পুতুল তৈরি করেন নোমান মির্জা।

বসন্তসংক্রান্তিতে ঐতিহ্যবাহী নানা পদের খাবার
বসন্তসংক্রান্তিতে ঐতিহ্যবাহী নানা পদের খাবার

বিকেলের নাশতায় রসগোল্লা, কালোজাম, শিঙাড়া, পুরি, দই, পুডিং, সন্দেশ ও চটপটিসহ বহু স্বাদ আর ছিল পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী মুড়িভর্তা। বাঙালি নারীদের এত গুণ, সব যেন উজাড় করে ঢেলে দিয়েছেন। মনে হচ্ছিল ঠিক বাংলাদেশে বসে সবাই মিলে নিবিড় আনন্দের একটি সন্ধ্যায় এক হয়েছি।

বসন্তসংক্রান্তিতে ঐতিহ্যবাহী নানা পদের খাবার
বসন্তসংক্রান্তিতে ঐতিহ্যবাহী নানা পদের খাবার

বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে যবনিকা নামে এই অতি আনন্দের সম্মিলনের। অনুষ্ঠান আয়োজনে সামনে থেকে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন নদী সিনা। তাঁকে সহযোগিতা করেন নীলাঞ্জনা হক, জোসনা আক্তার, ইশরাত সোমা, মণিকা কাজল, ঝুমা হোসেন, ফারজানা আঁখি ও অন্য ভাবিরা।

বসন্তসংক্রান্তিতে ঐতিহ্যবাহী নানা পদের খাবার
বসন্তসংক্রান্তিতে ঐতিহ্যবাহী নানা পদের খাবার