মন ছুঁয়ে গেল সবার

সংগীত পরিবেশন করছেন রোজানা আজাদ ও শাফিনাজ আমিন মুক্তি
সংগীত পরিবেশন করছেন রোজানা আজাদ ও শাফিনাজ আমিন মুক্তি

অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় হয়ে গেল জলসার গানের আসরের ১৪তম পর্ব। ধ্রুপদ অস্ট্রেলিয়া ও প্রিয় অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতায় ক্যানবেরার ক্যাম্বা শহরতলির টেইলর প্রাইমারি স্কুল মিলনায়তনে এ গানের আসর সম্প্রতি আয়োজন করা হয়। জলসার পথচলার ১৪তম অনুষ্ঠানটি আমাদের গৌরবময় স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখেই আয়োজিত হয়।

এবার গান পরিবেশন করেছেন দুজন শিল্পী। রোজানা আজাদ ও শাফিনাজ আমিন মুক্তি। তাঁরা দুজনই উজ্জ্বল তাঁদের উত্তরাধিকারের গৌরব ও স্বকীয়তায়। বাংলাদেশের কিংবদন্তি সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমান হচ্ছেন রোজানার বাবা আর মুক্তির খালু। সুতরাং তাঁরা দুজন সম্পর্কে বোন। তাঁদের হার্দিক মিষ্টি সম্পর্ক গানের অনুষ্ঠানে যোগ করেছিল বাড়তি মাত্রা।

তবলা বাজিয়েছেন শিল্পী ড. রবীন গুডা। কি–বোর্ডে ছিলেন সায়ীদ আশিক। গিটারে দুজন—আশরাফুল আলম ও হাসান জায়ীদ।

সংগীত পরিবেশন করছেন রোজানা আজাদ ও শাফিনাজ আমিন মুক্তি
সংগীত পরিবেশন করছেন রোজানা আজাদ ও শাফিনাজ আমিন মুক্তি

জলসার সংগীতানুষ্ঠান সম্পর্কে আগেও লিখেছি। ক্যানবেরার তো বটেই, সিডনি, ব্রিসবেন, মেলবোর্ন শহরের বাঙালিরাও এ আয়োজন সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল।

সংগীত অনুরাগী শিল্পী রবীন গুডা ও ড. শম্পা বড়ুয়া দম্পতির প্রাণের প্রতিষ্ঠান ধ্রুপদ অস্ট্রেলিয়া। ক্যানবেরায় তাঁরা শুদ্ধ ও ঋদ্ধ সংগীতচর্চার পথিকৃৎ। তাঁদের আয়োজনের বিষয়বস্তু, শৃঙ্খলা অনুসরণ, পরিবেশনায় পেশাদারিসহ সার্বিক মান সব সময়ই যেন উচ্চ থাকে তা নিশ্চিত করা হয়। এ কারণে কমিউনিটির কাছে তাদের আয়োজনের প্রতি আস্থা বরাবরই অটুট। দীর্ঘ ২৫ বছরের প্রবাসজীবনের অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, বাংলাদেশের বাইরে এই মাত্রার আয়োজন খুব বেশি হয় না।

মুক্তি আগে কয়েকবার গান গেয়েছেন এই ক্যানবেরায়। তবে প্রতিবার গান গেয়ে তিনি শ্রোতাদের কাছে সংগীত মাধুরীকে অন্য একটা স্তরে নিয়ে যান। গানে বৈচিত্র্য ও পরিবেশনায় নতুনত্ব তাঁর লোকপ্রিয়তাকে ক্রমশ বাড়িয়ে তুলছে।

রোজানাকে ক্যানবেরায় এই প্রথম গান গাইতে দেখলাম। প্রথম গানের স্বর ক্ষেপণেই শ্রোতারা বুঝেছিলেন তাঁর কণ্ঠ লালিত্য। তাঁর কণ্ঠটি যেন তৈরি, শুধু গান বসিয়ে দিলেই হলো।

শ্রোতাদের একাংশ
শ্রোতাদের একাংশ

দুজনেই গাইলেন রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, লালনের গান, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে স্বর্ণযুগের কিছু গান ও দেশাত্মবোধক গান। তাঁরা একে একে গাইলেন ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’, ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে মোরে আরও আরও আরও দাও প্রাণ’, ‘শুধু তোমার বাণী নয় গো, হে বন্ধু, হে প্রিয়’, ‘আমার আপনার চেয়ে আপন যেজন খুঁজি তারে আমি আপনায়’, ‘সই ভালো করে বিনোদ বেণি বাঁধিয়া দে’, ‘আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে দেখতে আমি পাইনি’, ‘সব ক’টা জানালা খুলে দাও না’, ‘খোলা জানালা’, ‘তুমি কি কেবলই ছবি’, ‘ঠিকানা না রেখে ভালোই করেছ বন্ধু’, ‘ভালোবেসে যদি অপরাধ’, ‘তুমি হলে তুমি’, ‘না বলে এসেছি তা বলে ভেব না’, ‘প্রিয়তম কী লিখি তোমায়’সহ আরও বেশ কিছু গান।

আজাদ রহমান, সদ্যপ্রয়াত সংগীতশিল্পী শাহনাজ রহমতুল্লাহ ও গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল স্মরণে এই দুই শিল্পী কিছু অবিস্মরণীয় গান গেয়ে শোনান অপূর্ব মাধুরী মিশিয়ে। শ্রোতারা সত্যিই মুগ্ধ হন।

রোজানা তাঁর মায়ের (সেলিনা আজাদ) একটা অত্যন্ত জনপ্রিয় একটা গান (মনের রঙে রাঙাব, বনের ঘুম ভাঙব) গাইলেন খুবই দরদমাখা কণ্ঠে। আড়াই ঘণ্টার অনুষ্ঠান শ্রোতারা উপভোগ করেছেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো। তবলায় মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন রবিন গুডা ও বরাবরের মতোই গিটারে হাসান জায়ীদ।

(বাঁ থেকে) আশরাফুল আলম, হাসান জায়ীদ, শাফিনাজ আমিন মুক্তি, রোজানা আজাদ, সায়ীদ আশিক ও রবিন গুডা
(বাঁ থেকে) আশরাফুল আলম, হাসান জায়ীদ, শাফিনাজ আমিন মুক্তি, রোজানা আজাদ, সায়ীদ আশিক ও রবিন গুডা

স্বাভাবিকভাবেই অনুষ্ঠান শেষে শ্রোতারা অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন শিল্পীদের। অনুষ্ঠানে ছিলেন অস্ট্রেলিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার মোহাম্মদ সুফিউর রহমান।

বাংলা সংগীত ও সংস্কৃতিবঞ্চিত তৃষিত বাঙালির মন ধ্রুপদি সুর স্পর্শে যেন উদ্দীপ্ত হলো। সুদূর ক্যানবেরার এই বাঙালি কমিউনিটিতে স্বাধীনতার গৌরব যেন হৃদয়ে অনির্বাণ এক শিখা হয়ে জ্বলে উঠল।