মেরে ফেলো বাংলাদেশের মেয়েদের

নুসরাত জাহান
নুসরাত জাহান

আমার জন্ম আর বেড়ে ওঠা বাংলাদেশে। জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছি বাংলাদেশে। আর এখন আছি কানাডায় স্বামী ও বাচ্চাদের নিয়ে। যেখানে বেগম রোকেয়ার ‘সুলতানার স্বপ্ন’-এর মতো মেয়েরা চলাফেরা করছে অবাধে; নারী-পুরুষের সমান অধিকার এখানে শতভাগ না হলেও শতভাগের খুব কাছাকাছি রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে সংরক্ষিত হয়। আর বাংলাদেশ আমার জন্মভূমিতে নারী-পুরুষের সমান অধিকার কতখানি রক্ষা করা হয়? মেয়েদের সম্মান রক্ষার্থে কানাডায় আইন প্রয়োগ করা হয় অত্যন্ত কঠোর হাতে।

আমার মা, বোন, শাশুড়ি, ননদ, জা, খালা, চাচি, নানি, দাদি, বান্ধবী ও সহকর্মী—সবাই তো থাকে বাংলাদেশে। কানাডায় আমার মেয়েকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগামী জুন মাসে দিল্লিতে এক মাসের জন্য স্কলারশিপ দিয়ে পাঠাচ্ছে। মেয়ে বলছে, ওই সময় সে বাংলাদেশও ঘুরে আসবে। আমি বলেছি, ট্যুর বদলে ইউরোপে নাও অথবা বাতিল করে দাও। মেয়ে জিজ্ঞেস করল, কেন? লাস্ট সামারে আমি দুই মাসের রিসার্চের জন্য ইউরোপ গেলাম। তখন তো নিষেধ করোনি। আর এখন আমি বাংলাদেশ, আমার জন্মভূমিতে যেতে চাইছি, আর তুমি নিষেধ করছ? আমি বললাম, নিষেধ করছি, কারণ তুমি মেয়ে। তোমার জন্য বাংলাদেশ নিরাপদ নয়। নিজের মাতৃভূমি বাংলাদেশ সম্পর্কে এ কথা বলতে কতটা লজ্জা আর অসহায় লেগেছে, তা বলে বোঝাতে পারব না।

তথাকথিত হে পুরুষ, তোমরা নারীকে তুলনা করো পশুর সঙ্গে। পশু বাচ্চা জন্ম দেয় কিন্তু কোনো ডাক্তার লাগে না। তাহলে নারীর বাচ্চা হওয়ার সময় আবার ডাক্তার লাগবে কেন? নারীকে লেখাপড়া কেন শেখাবে? লেখাপড়া শিখলে সে তো ক্ষমতাধর হয়ে উঠবে। নুসরাতের মতো অধ্যক্ষের অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করবে। মৃত্যুশয্যায় থেকেও সে তার প্রতিবাদ করে গেছে।

লেখিকা
লেখিকা

এভাবে পুড়িয়ে মারার পরও ওই অধ্যক্ষের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে প্রকাশ্যে মিছিল হয় বাংলাদেশে! যারা মিছিল করে, তারা কারা? তাদের শক্তির উৎস কোথায়? রাষ্ট্রীয় বা সামাজিকভাবে তোমরা কি এই দায় কোনোভাবেই এড়াতে পার? মাদ্রাসার অধ্যক্ষ, যাঁর কাছে ছাত্রীরা জীবনাদর্শ শিখবে, তিনিই যদি হন এমন, তাহলে কোথায় যাবে মেয়েরা? কাজেই ভুলেও কখনো নারীকে লেখাপড়া শেখানোর চিন্তা কোরো না। নারীকে হতে হবে অবলা। কেন তারা প্রতিবাদ করতে আসে?

রাস্তাঘাট যেখানেই সুযোগ পাবে নারীর সম্মান আর শ্লীলতাহানি করবে, কারণ ওরা পুরুষ আর তোমরা নারী। তোমরা নারীরা শুধু নীরবে সহ্য করবে। তাই বলছি, মেরে ফেলো বাংলাদেশের সব মেয়েকে। তোমার মাকে, মেয়েকে, স্ত্রীকে, বোনকে, সহকর্মীকে, সহপাঠীকে। কোনো মেয়ে থাকবে না বাংলাদেশে। তোমাদের মা, কন্যা, বোন, স্ত্রী, প্রেমিকা, খালা, ফুপু, নানি, দাদি কেউ থাকবে না। ভবিষ্যৎ বংশবৃদ্ধি করবে তোমরা ক্লোনিংয়ের মাধ্যমে। তাই বাংলাদেশের সব পুরুষের কাছে নিবেদন, মেরে ফেলো সব মেয়েকে। ওরা মরে বাঁচুক আর তোমাদেরও বাঁচাক!

মাহমুদা নাসরিন: শিক্ষক ও সমাজকর্মী। টরন্টো, কানাডা