গ্রিসে উৎসাহ-উদ্দীপনায় বর্ষবরণ

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

প্রবাসী বাংলাদেশিদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে গ্রিসের রাজধানী এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের উদ্যোগে ১৪২৬ বাংলা নববর্ষের অনুষ্ঠান ব্যাপক আনন্দ ও উদ্দীপনার সঙ্গে উদ্‌যাপিত হয়েছে। গতকাল ১৪ এপ্রিল রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে দূতাবাস প্রাঙ্গণে বাংলা বর্ষবরণের লক্ষ্যে দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বাংলাদেশি খাবার উৎসবের সঙ্গে বৈশাখী মেলা আয়োজন করা হয়। এ ছাড়া দূতাবাস প্রাঙ্গণ বৈশাখী আলপনা, বৈশাখী থিমের অলংকরণ, নববর্ষের সাজসজ্জাসহ বাংলাদেশি ঐতিহ্যবাহী সাজে সজ্জিত করা হয়।

মঙ্গল শোভাযাত্রা
মঙ্গল শোভাযাত্রা

এ বছর গ্রিসে বাংলা বর্ষবরণের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ‘এক বাংলাদেশি এক গ্রিক’ কর্মসূচি। এই কর্মসূচির মাধ্যমে দূতাবাসের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের অনুরোধ করা হয় প্রত্যেকে যেন একজন করে গ্রিক বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। দেশটিতে বাংলা সংস্কৃতিকে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে দূতাবাসের এই আয়োজনে সাড়া দিয়ে প্রবাসীরা গ্রিকদের সঙ্গে নিয়ে আসেন। পয়লা বৈশাখের সকালে শত শত বাংলাদেশি ও গ্রিক নাগরিকদের এক মিলনমেলায় পরিণত হয় দূতাবাস প্রাঙ্গণ। এথেন্স ও নিকটবর্তী শহরগুলো থেকে আগত অনেক বাংলাদেশি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

মঙ্গল শোভাযাত্রা
মঙ্গল শোভাযাত্রা

দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন ও তাঁর সহধর্মিণী শায়লা পারভীন দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় গ্রিক নাগরিক ও বাংলাদেশিদের সঙ্গে নিয়ে বর্ষবরণ মেলার উদ্বোধন করেন। এরপর বাংলাদেশি নাগরিকেরা মিলিতভাবে ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটি পরিবেশন করেন। তাঁদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বৈশাখকে বরণ করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, তাঁর সহধর্মিণী, দূতাবাসের কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং দূতাবাস পরিবারের সদস্যরা। এ সময় বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

এরপর ‘বৈশাখী স্বাক্ষরলিপি’ উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রদূত। এই স্বাক্ষরলিপিতে বর্ষবরণ সম্পর্কে মনের ভাব প্রকাশ করেন গ্রিক ও বাংলাদেশি নাগরিকেরা। বৈশাখ উপলক্ষে দূতাবাসে নির্মাণ করা হয় ‘গ্রিস বাংলা বৈশাখী বায়োস্কোপ’ ও বাংলার ঐতিহ্যবাহী ‘পালকি’। নারী-পুরুষ, ছাত্র-ছাত্রীসহ সর্বস্তরের বাংলাদেশি ও দূতাবাসের সদস্যরা মেলায় অংশগ্রহণ করেন। এ সময় বাংলাদেশি নারী-পুরুষেরা লোকজ ও বৈশাখী পোশাকে সজ্জিত ছিলেন। তাঁদের সঙ্গে শিশুরাও ছিল। প্রবাসী বাংলাদেশিরা ১২টিঁ স্টলে বাংলাদেশি খাবার, তৈজসপত্র, শাড়ি, মনিহারি দ্রব্য, অলংকারসামগ্রী এবং আলপনাসহকারে বাংলাদেশকে ফুটিয়ে তোলেন। একটি কর্নারে বাংলাদেশি প্রথাগত চা-স্টলের আদলে ‘এথেন্স টি স্টল’ স্থাপন করা হয়।

মেলায় স্টল
মেলায় স্টল

বাংলা নববর্ষের শুভদিনে দূতাবাসের রসনা কূটনীতি নামক কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী তিনটি রেস্টুরেন্টকে বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার দেওয়া হয়। এবিসি রেস্টুরেন্ট, ঘরের স্বাদ ও রয়্যাল স্পাইস রেস্টুরেন্ট দূতাবাসের রসনা কূটনীতি কার্যক্রমে অংশ নিয়ে গ্রিসে বাংলাদেশি খাবার জনপ্রিয়করণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের বিশেষ ‘Pioneers in Culinary Diplomacy’ বা ‘রসনা কূটনীতির অগ্রপথিক’ শীর্ষক পুরস্কার তুলে দেন রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন।

মেলায় স্টল
মেলায় স্টল

রাষ্ট্রদূত বলেন, বর্ষবরণের এই শুভক্ষণে বাংলা সংস্কৃতি ও খাদ্য বিদেশে পরিচিত করানোর জন্য যাঁরা দূতাবাসের সঙ্গে কাজ করছেন, তাঁদের স্বীকৃতি দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। তিনি বলেন, আশা করি অন্যরাও এই কার্যক্রমে এগিয়ে আসবেন এবং বাংলাদেশ ও বাংলাদেশি খাবার ছড়িয়ে পড়বে গ্রিসে।

পুরস্কারপ্রাপ্ত তিন রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, রসনা কূটনীতির অংশ হতে পেরে আমরাও আনন্দিত। এই পুরস্কার আমাদের দেশের জন্য কাজ করতে আরও উদ্বুদ্ধ করবে।

বৈশাখী উৎসবের একটি দৃশ্য
বৈশাখী উৎসবের একটি দৃশ্য

এ ছাড়া ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে ডেটাবেইসে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দূতাবাস কর্তৃক নির্মিত নাটিকারও উদ্বোধন হয় এই আয়োজনে। রাষ্ট্রদূত জসীম উদ্দিনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং দূতাবাসের কাউন্সেলর ড. সৈয়দা ফারহানা নূর চৌধুরীর রচনা ও পরিচালনায় তৈরি এই নাটিকায় দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা অংশগ্রহণ করেন।

এরপর বৈশাখী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দূতাবাসের সদস্য, স্থানীয় দোয়েল সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পী ও শিশু-কিশোরেরা বৈশাখী ও লোকজ সংগীত, কবিতা, নৃত্য পরিবেশন করে। অনেক নারী-পুরুষের আগমনে কলকাকলিতে মুখরিত হয় দূতাবাস। সৃষ্টি হয় এক বর্ণিল মনোরম পরিবেশের। মেলায় আগমনকারীরা বিভিন্ন স্টলে বাংলাদেশি পণ্য দর্শন ও বাংলাদেশি খাবারও আস্বাদন করেন। বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি, গ্রামীণ বাংলার বৈশাখী আবহে স্টলসহ দূতাবাস প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে এক টুকরো বাংলাদেশ। এরপর আয়োজন করা হয় বৈশাখী মঙ্গল শোভাযাত্রা। বিপুল উৎসাহে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বাদ্যযন্ত্রসহকারে এ শোভাযাত্রায় অংশ নেন।

বাংলাদেশের ঢেঁকি
বাংলাদেশের ঢেঁকি

এ ছাড়া দূতাবাসে একটি র‍্যাফল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রদূত ও তাঁর সহধর্মিণী বিজয়ীদের মধ্যে আকর্ষণীয় পুরস্কার বিতরণ করেন। প্রবাসী বাংলাদেশি যাঁরা বৈশাখী মেলায় স্টল নির্মাণ করেছেন, তাঁদের বিশেষ পুরস্কার দেওয়া হয়। বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানসমূহ প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বয়ে আনে আনন্দ, বন্ধন, সৌহার্দ্য আর সম্প্রীতি। বিজ্ঞপ্তি