আবুধাবিতে কত্থক মহোৎসব: চলছে জোর প্রস্তুতি

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

একটি অনুষ্ঠান হবে। তার জন্য সে কী প্রস্তুতি। কত্থক মহোৎসব। পণ্ডিত বিরুজু মহারাজ আসবেন। তাঁকে ধরে গান নির্বাচনের বিষয়টি আরও বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখার ব্যাপার। আগেও রসমঞ্জরির আয়োজনে তিনি এসেছেন প্রকৃত অর্থেই নৃত্যজগতের মহারাজ তিনি। শতভাগ নিখুঁত না হলে কোনো কিছুতেই তাঁর পরিতৃপ্তি আসে না। আবুধাবিতে হবে এ মহোৎসব।

মহারাজের সঙ্গে আসবেন তাঁরই ছাত্রী, কলাশ্রম পরিচালক বিদুষী শাশ্বতী সেন। তিনি তো আরও এক ধাপ এগিয়ে। মহারাজ যেটা বয়স কিংবা উদারতায় ছেড়ে দিতে চান তিনি তা করেন না। রসমঞ্জরির পরিচালক কুন্দন মুখার্জির গুরু-ভগ্নি তিনি। এই পরিচালকও কোনো কিছু করতে গিয়ে ভগ্নির নামে আরেকবার ভাবেন। সে জন্য মায়েদেরও ভালোবাসার দিদি এই শিল্পী। সবার প্রচণ্ড রকম ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা বিদুষীর প্রতি।

একটি কর্মশালা হবে। মহারাজের তত্ত্বাবধানে তাঁর প্রিয় ছাত্রী পরিচালনা করবেন এ পর্ব। এর জন্য বড়দের কথা বাদ দিলেও ছোটরা বেশ ভয়ে পড়ে! অবশ্য এখন তারা সে সময় পেরিয়ে এসেছে। সোনামণিরা অতিরিক্ত ক্লাস করছে, সময়ও দিচ্ছে বেশি। বলা চলে, এর মধ্য দিয়ে তাদের টানাপোড়েন কমেছে। তাই তো অনুশীলন করার সময় পা ফেলতে কিংবা হাতের মুদ্রা দেখাতে গিয়ে তাদের মুখে আপনাতেই হাসির বন্যা বয়ে যায়।

একটি আয়োজন। আবুধাবির কেন্দ্রে সে কারণে কী যে তাড়াহুড়ো! পোশাক পরিকল্পনা নিয়ে কারও কারও ঘুম নেই। সেটা নিয়ে বসেন তাঁরা। একপর্যায়ে ডিজাইন তো হলো। কোন রঙের কম্বিনেশনে ফুটে উঠবে প্রত্যাশার সমান, তা নিয়ে চলে আলোচনা। কল্পিত লেহেঙ্গার ওপর রাতের আলো কতটা প্রভাব ফেলে এর ওপর ষোলো আনা মনোযোগ তাঁদের। মঞ্চে এর সঙ্গে মানানসই দোপাট্টা কতটুকু জ্বলে ওঠে, সেটার ওপর তাঁরা করেন চুলচেরা বিশ্লেষণ।

অনুরাধা দার্নি, আশা রাই, সুপ্রিয়া কিরণ রাই, স্নেহাল যোশী, রেশমা, ধীরা মুখার্জি, যে যাঁর জায়গা থেকে মতামত দিচ্ছেন। এর বাইরে দক্ষিণ ভারত থেকে অবদান রেখেছেন একজনের শ্রদ্ধেয় জননী। তিনি ওড়না কেনায় সময় দিয়েছেন। কী এক মাথাব্যথা! ওই দিনই আবার আকাশপথে পাঠাতে হবে এসব। সে জন্য নির্দিষ্ট সময়ে এগুলো যাচাই–বাছাই করে আবার চূড়ান্ত করতে হয় একজনকে। তিনি রসমঞ্জরির গুরু।

বিশেষ একটি সন্ধ্যা। অনেক অনেক অতিথি আসবেন। শিক্ষার্থীদের মা-বাবা থাকবেন সেখানে। তাঁরাও সম্মানের আসন পাবেন। থাকবেন অন্য সংস্কৃতিমোদীরা। শৃঙ্খলা নিয়ে ভাবতে হয় এ জন্য। হল ভাড়া, স্বেচ্ছাসেবক নিয়ে কথা ওঠে। বিজ্ঞাপন সংগ্রহ, টিকিট বিক্রির দায়িত্বও বণ্টন করা হয়। মঞ্চসজ্জা, শব্দনিয়ন্ত্রণ, এসবের কোনোটি বাদ যায় না।

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বাজেটটি হতে হবে সরল ও সুঠাম। করাও হয় তাই। দর্শক-শ্রোতাকে উপহার দিতে হবে সুন্দর একটি সন্ধ্যা।

কলকাতা থেকে অনুষ্ঠানের পাঁচ দিন আগেই আসবেন কণ্ঠ ও যন্ত্রশিল্পীরা।

ত্রিরত্ন তাঁরা। গৌরবের সে নাম—চন্দ্রচূড় ভট্টাচারিয়া, উৎপল ঘোষাল ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য।

মহড়া চলবে প্রতিদিন। মঞ্চে ঝুমা বিশ্বাস ও ডাক্তার প্রিয়ম মালহোত্রা তাঁদের সর্বোচ্চটি দিতে বদ্ধপরিকর। বর্ষা খাদিলকার, লাকি হালদার, ঊর্মিলা ক্রাশটা, রিভা আম্বেকর, ভাবনা সুরানি তাঁরা সবাই মা। কী তাঁদের আন্তরিকতা! এখানে স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। রসমঞ্জরির গুরু বলেন, তাঁরা এখন সবচেয়ে ভালো ফলটি বের করার চেষ্টায়।

সত্যিকার অর্থেই ঘুম নেই কুন্দন মুখার্জির। তিনি বারবার নৃত্যে সংযোজন-বিয়োজন আনছেন। অবশ্য প্রতিটি নাচের বেলায়ই মঞ্চে উপস্থাপনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর গবেষণা চলে। এবারও তেমনটিই হচ্ছে। ধা না-না, ধা না-না। কলাবতী তারানার কণ্ঠ প্রতিধ্বনিত হয় প্রস্তুতির প্রতিটি পর্বে।

কথা হলো রসমঞ্জরির গুরুর সঙ্গে। বললেন, সবার জন্য আমন্ত্রণ, আপনিও আসবেন। স্থান: ইন্ডিয়া সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল সেন্টার, আবুধাবি। তারিখ: ২৬ এপ্রিল, সময়: সন্ধ্যা ৭টা।

ধা না-না, ধা না-না...।