সিডনিতে স্ত্রী হত্যার দায়ে এক বাংলাদেশির বিচার

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে স্ত্রীকে হত্যার দায়ে আটক এক বাংলাদেশির বিচার শেষ দিকে। মামলার শুনানিতে অভিযুক্ত শাহাব আহমেদকে স্ত্রী হত্যার অপরাধে আদালত দোষী সাব্যস্ত না করে মানুষ হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করে মামলা বহাল রেখেছে। আদালতে পক্ষ-বিপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক ও প্রমাণের ভিত্তিতে ৩৫ বছর বয়সী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলীয় নাগরিক শাহাব আহামেদ মানসিক রোগী হিসেবে চিহ্নিত হন আদালতে। ২০১৭ সালে ফেব্রুয়ারিতে স্ত্রীকে হত্যার পর নিজেই পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন শাহাব। স্ত্রীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের কথা জানতে পেরে রাগের মাথায় তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটান। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের মামলার সংবাদ অস্ট্রেলিয়ার সব গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করে আজ।

গতকাল বুধবার নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানি শুরু হয়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শাহাব আহমেদ ও খন্দকার ফারিহা এলাহি স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সিডনির প্যারামাটায় পাঁচ বছর ধরে বাস করছিলেন। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিজ বাসায় শাহাব ও ফারিহার মধ্যে ঝগড়া হয়। ফারিহার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে এমন সন্দেহের জের ধরে ঝগড়ার সূত্রপাত ঘটে। ফারিহার মুঠোফোনের মেসেজ দেখে বিষয়টির সত্যতা পেয়ে শাহাব ক্ষুব্ধ হয়ে ১৪ বার ছুরিকাঘাত করেন ফারিহাকে। এর ১০ মিনিট পর জরুরি সেবায় ফোন করে শাহাব স্ত্রীকে হত্যার কথা জানান। জরুরি সেবা থেকে অ্যাম্বুলেন্স প্রেরণের কথা বললে, শাহাব উত্তর দেন, ‘আমার মনে হয় সে মারা গেছে’। এর আগে শাহাব ফেসবুকে ‘সব শেষ হয়ে গেছে’ এমন পোস্ট করেন। ঘটনাস্থলে দ্রুত পুলিশ পৌঁছালে শাহাবকে নিহত স্ত্রীর লাশের পাশে বসে থাকতে দেখে তারা। পরে তাঁকে আটক করে মামলা দায়ের করে পুলিশ।

আদালতে পেশ করা প্রমাণের ভিত্তিতে বলা হয়, ২০১৫ সালের দিকে স্ত্রী ফারিহার সহকর্মী ওমর খানের সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে এমন সন্দেহে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয় তাঁদের মধ্যে। কলহের মাত্রা দিন দিন বাড়তে থাকায় মানসিকভাবে বিষণ্নতায় ভুগতে শুরু করেন শাহাব। এ জন্য হত্যাকাণ্ডের দুই বছর আগে থেকেই চিকিৎসা গ্রহণ করছিলেন শাহাব। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে জরুরি সেবায় ফোন দিয়ে পুলিশও ডেকেছিলেন ফারিহা। তখন ফারিহা পুলিশকে জানিয়েছিলেন, মানসিক অসুস্থতার কারণে নিজেই নিজের ক্ষতি করতে পারেন শাহাব।

এ ছাড়া আদালতে দেওয়া আরও প্রমাণাদির মধ্যে ছিল শাহাবের ইন্টারনেটের গুগল সার্চের তথ্য। ২০১৬ সালে শাহাব গুগলে ‘প্রতারক স্ত্রীকে কী সাজা দেওয়া যেতে পারে’, ‘স্বামীর সঙ্গে প্রতারণা করা স্ত্রীকে কী শাস্তি দেওয়া যায়’, ‘স্ত্রীর প্রতারণা ধরে ফেলা বিবাহিত স্বামীর জন্য উত্তম শাস্তি কী’ এমন বিষয় খোঁজ করছিলেন। এর থেকে আদালত নিশ্চিত হয়, দীর্ঘদিন ধরে স্ত্রীর আচরণে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন শাহাব।

এদিকে নিহত ফারিহার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িত থাকার দায়ে ওমর খানকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। ওমর জানান, ফারিহার সঙ্গে তাঁর কোনো শারীরিক সম্পর্ক ছিল না। তবে তাঁরা একে অপরকে স্বামী ও স্ত্রী হিসেবে সম্বোধন করতেন। এমনকি তাঁরা যৌনতাযুক্ত বার্তা আদান–প্রদান করতেন বলেও স্বীকার করেন ওমর। এ ছাড়া ফারিহাকে বিভিন্ন উপহারসামগ্রীও কিনে দেওয়ার কথা জানান ওমর।

স্ত্রী হত্যার দায়ে অভিযুক্ত শাহাব আহমেদ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে আদালত ও দুই পক্ষের আইনজীবী একমত প্রকাশ করেন। স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্কের কথা দীর্ঘদিন সহ্য করে মানসিক চাপগ্রস্ত হয়ে পড়েন শাহাব, এমনটিও প্রমাণ পায় আদালত। তাই তাঁর ওপর আনা স্ত্রী হত্যার অভিযোগে শাহাবকে দোষী সাব্যস্ত করেননি আদালত। তবে, ‘বেআইনি কিন্তু অনিচ্ছাকৃত নরহত্যা’ এই অপরাধে অভিযুক্ত করে মামলা বহাল রাখেন আদালত। মামলার আগামী শুনানিতে এ বিষয়ে দুই পক্ষের কথা শুনে শাহাবের সাজার কথা জানাবেন আদালত।