বাংলাদেশকে তুলে ধরছে প্রবাসী শিশুরা

অনুষ্ঠানে দুই দেশের জাতীয় পতাকা বিনিময় করে কর্মসূচির সূচনা করা হয়
অনুষ্ঠানে দুই দেশের জাতীয় পতাকা বিনিময় করে কর্মসূচির সূচনা করা হয়

বাংলাদেশ ও গ্রিসের নতুন প্রজন্ম হতে পারে দুই দেশের সংস্কৃতির সেতু। প্রবাসী বাংলাদেশি নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোরেরা বিদেশের শিশু-কিশোরদের মধ্যে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি ছড়িয়ে দিতে পারে। এই উদ্দেশ্য সামনে রেখে গ্রিসের বাংলাদেশ দূতাবাস দুই দেশের শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে দেশটির রাজধানী এথেন্সে আয়োজন করে বিশেষ বাংলাদেশ ব্র্যান্ডিং কর্মসূচি। এথেন্সের হালান্দ্রি সিটি করপোরেশনের সহায়তায় দূতাবাস গতকাল শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) হালান্দ্রি এলাকায় একটি উচ্চবিদ্যালয়ে এই কর্মসূচি আয়োজন করে।

দেশটির শিশু-কিশোরদের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে প্রবাসী বাংলাদেশি শিশু-কিশোরদের অংশগ্রহণে আয়োজিত এই কর্মসূচির নাম দেওয়া হয় ‘বাংলাদেশ: আ কান্ট্রি অব ভাইব্রেন্ট কালচার অ্যান্ড হেরিটেজ। রিচিং আউট প্রোগ্রাম ফর দ্য ইয়ং ফ্রেন্ডস ইন গ্রিস’।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন ও হালান্দ্রি সিটি করপোরেশনের মেয়র সিমোস রুসোস। আরও ছিলেন হালান্দ্রি সিটি করপোরেশনের শিক্ষাবিষয়ক ভাইস মেয়র কুরাসিস, সংস্কৃতি ও ক্রীড়াবিষয়ক ভাইস মেয়র সার্জিও গাকাস, হালান্দ্রি স্কুলের পরিচালক দিমেত্রিস স্টারিওনস, গ্রিক সরকারের পরিবেশ ও শিক্ষাসংক্রান্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, দূতাবাসের প্রথম সচিব সুজন দেবনাথ, প্রবাসী বাংলাদেশিদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দোয়েল একাডেমির পরিচালক, শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রীরা।

বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গ্রিক ছাত্রছাত্রী ও প্রবাসী বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীরা দুই দেশের জাতীয় পতাকা বিনিময় করে কর্মসূচির সূচনা করে। এরপর দুই দেশের শিশু-কিশোরদের নিয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে সম্প্রীতি বৃক্ষ রোপণ করা হয়।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত জসীম উদ্দিন বলেন, নতুন প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের নিয়ে এই আয়োজনের মাধ্যমে দুই দেশের নতুন প্রজন্ম একে অপরের দেশকে জানতে পারছে এবং সংস্কৃতির আদান–প্রদানও হচ্ছে। তিনি এই আয়োজনের জন্য হালান্দ্রি সিটি করপোরেশন, হালান্দ্রি স্কুল ও দোয়েল একাডেমির কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে তিনি শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর বিশেষ স্নেহের কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটও তিনি উপস্থিত শ্রোতাদের কাছে তুলে ধরেন।

মেয়র ও স্কুলের পরিচালক তাঁদের বক্তব্যে এই আয়োজনের জন্য দূতাবাসকে ধন্যবাদ এবং দুই দেশের সংস্কৃতি বিনিময়ের জন্য এ ধরনের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে ভাইস মেয়র, এথেন্সের স্কুলের পরিচালক এবং গ্রিক সরকারের পরিবেশ ও শিক্ষাসংক্রান্ত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিশেষ সম্প্রীতি উপহার দেন রাষ্ট্রদূত।

সম্প্রীতি বৃক্ষরোপণ
সম্প্রীতি বৃক্ষরোপণ

এরপর বাংলাদেশকে তুলে ধরে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করে প্রবাসী বাংলাদেশি শিশু-কিশোরেরা। প্রেজেন্টেশনের সার্বিক সমন্বয় ও পরিচালনা করেন সুজন দেবনাথ। প্রবাসী বাংলাদেশিদের পরিচালিত স্কুল বাংলাদেশ দোয়েল একাডেমির পাঁচজন ছাত্রছাত্রী উপস্থিত গ্রিক ছাত্রছাত্রীদের সামনে গ্রিক ভাষায় বাংলাদেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, পর্যটনসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে। প্রবাসী বাংলাদেশি শিশুরা সহজবোধ্য ভাষায় গ্রিক শিশু-কিশোরদের কাছে বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, উন্নয়নের কথা উপস্থাপন করে। উপস্থাপনায় বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন এবং সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের কথা উঠে আসে।

আয়োজনে উপস্থিত গ্রিক শিক্ষক ও অভিভাবকেরা বাংলাদেশের ওপর শিশু–কিশোরদের প্রেজেন্টেশনের প্রশংসা করেন।

অনুষ্ঠানে শিশু-কিশোরদের মনে সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বকে দৃঢ় করতে দুই দেশের জাতীয় পতাকা উপহার দেওয়া হয়। দুই দেশের শিশুরা নিজ নিজ দেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাকে তাদের দেশকে তুলে ধরে বিশেষ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করে। বাংলাদেশি ও গ্রিক শিশুরা নিজ নিজ নৃত্য পরিবেশন করে। অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশ ও গ্রিসের শিশু-কিশোরেরা দুই দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার বিনিময় করে।

মুজিবনগর দিবসের আলোচনা
মুজিবনগর দিবসের আলোচনা

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালন 

এথেন্সের বাংলাদেশ দূতাবাসে যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে দূতাবাস প্রাঙ্গণে ১৭ এপ্রিল বুধবার বিশেষ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এই আয়োজনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাসহ সর্বস্তরের প্রবাসী বাংলাদেশিরা উপস্থিত ছিলেন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী প্রেরিত বাণীসমূহ পাঠ করেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা। দিবসটির প্রেক্ষাপটের ওপর বিশেষ তথ্যচিত্র উপস্থাপনা করেন সুজন দেবনাথ। এরপর দিবসটির তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনাকালে রাষ্ট্রদূত মো. জসীম উদ্দিন বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ও অবিস্মরণীয় নেতৃত্বের কথা স্মরণ করেন। তিনি বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল ও মুজিবনগর দিবসের তাৎপর্যের কথা তুলে ধরেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, মুজিবনগর সরকার মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদান এবং বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রক্ষা করে সময়োপযোগী, সাহসী ও প্রজ্ঞাবান নেতৃত্ব প্রদান করে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উত্তরোত্তর অগ্রগতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের একযোগে কাজ করার ওপর জোর দেন।

আলোচনায় আরও অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন গ্রিসের নেতাসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। বিজ্ঞপ্তি