নুসরাত হত্যাকাণ্ডের খবর ফলাও করে প্রচার

অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের খবর
অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমে নুসরাত হত্যাকাণ্ডের খবর

অস্ট্রেলিয়ার অধিকাংশ গণমাধ্যমে আজ বাংলাদেশের মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকাণ্ডের খবর ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে। দেশটির সবচেয়ে বেশি প্রচারিত ও গ্রহণযোগ্য পত্রিকা সিডনি মর্নিং হেরাল্ড ও সরকারি অনুদানের গণমাধ্যম অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনে (এবিসি) নুসরাত হত্যাকাণ্ড এবং এর বিচারের কথা ফলাও করে প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া দ্য অস্ট্রেলিয়ান, নিউজ ডটকমডটএইউ, নাইন নিউজসহ আরও বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে বেশ গুরুত্বসহ প্রকাশ পায় এই খবর। প্রায় প্রতিটি সংবাদের শিরোনামেই উল্লেখ করা হয়, যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে অভিযোগ করায় বাংলাদেশি কিশোরীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা। সংবাদগুলোতে হত্যাকাণ্ড–পরবর্তী বিচারব্যবস্থা নিয়ে প্রশাসনের তৎপরতা ও সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থার দাবিতে জনগণের বিক্ষোভ সমাবেশের কথাও উঠে আসে।

সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক নিকোলা স্মিথ ‘যৌন নির্যাতনের অভিযোগ করায় বাংলাদেশে জীবিত পুড়েছে কিশোরী’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে ঘটনা বিস্তারিত তুলে ধরেন। সেখানে বলা হয়, ‘যৌন নির্যাতনের অভিযোগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে অভিযুক্ত করার পর কিশোরীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার জঘন্য ঘটনায় বাংলাদেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। … নুসরাত জাহান রাফি তাঁর অভিযোগ উঠিয়ে না নেওয়ার কারণে তাঁর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর শরীরের ৮০ ভাগ পুড়ে গেলে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাফি। সাহসী এই কিশোরী মৃত্যুর আগে তাঁর ভাইকে দেওয়া এক ফোন বার্তায় বলেন, সেই শিক্ষক আমাকে স্পর্শ করেছে, এই অপরাধের বিরুদ্ধে আমি শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত লড়ে যাব।’ নুসরাত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা সরকারের সুষ্ঠু বিচারব্যবস্থার ব্যর্থতার দিকেও ইঙ্গিত করা হয় প্রতিবেদনটিতে। বলা হয়, ‘দক্ষিণ এশিয়ার হিউম্যান রাইট ওয়াচ সংস্থার পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি জানিয়েছেন, ন্যায়বিচার চাওয়া একটি সাহসী কিশোরীর ভয়ংকর হত্যা প্রমাণ করে, সরকার যৌন নির্যাতনের বিচার করতে কীভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

নুসরাত হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বাংলাদেশের বিক্ষোভ পরিবেশের কথা উঠে আসে অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের প্রতিবেদনে। বলা হয়, ‘মাদ্রাসার প্রধানের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রত্যাহার না করার কারণে ১৯ বছর বয়সী এক কিশোরীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার বিচারের দাবিতে প্রতিবাদকারীরা দেশটির রাজধানীর রাস্তায় নেমেছে। … এই নৃশংসতার ঘটনায় আইনিভাবে নারীদের নিরাপত্তায় সোচ্চার হতে রক্ষণশীল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির ১৬ কোটি মানুষ প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে।’

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, নিহত কিশোরীর পরিবারকে ন্যায়বিচার দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের উদ্ধৃতিতে বলা হয়, তিনি বলেছেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য শিক্ষার্থী, অভিযুক্তসহ অন্তত ১৭ জনকে আটক করা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, ৬ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে কৌশলে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষের অনুগত কয়েকজন। গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা করেন নুসরাতের মা। মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ওই দিনই গুরুতর আহত অবস্থায় নুসরাতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। শরীরে ৮০ শতাংশ পোড়া নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত।