রুয়ান্ডায় বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন

রুয়ান্ডায় বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা
রুয়ান্ডায় বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা

আশা ও ব্র্যাকে কর্মরতরা ছাড়া রুয়ান্ডাতে আমরা আর কয়জনইবা বাঙালি আছি। আশার আটজন ও ব্র্যাকের আটজন মিলিয়ে মোট ১৬ জন। আর বাংলাদেশের আরও দুই পরিবারের সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তিন বাঙালি পরিবার যোগ হয়েছে। সব মিলিয়ে বড়জোর পঁয়ত্রিশ কী চল্লিশজন। মোটামুটি এই আমাদের শক্তি আর প্রেরণা। এর সঙ্গে অবশ্য বাংলাদেশ থেকে আরও এক পরিবার (রফিকুল ইসলাম দম্পতি) যোগ দিয়েছিল। রফিকুল ইসলাম একসময় বাংলাদেশে তাঞ্জানিয়ার অনারারি কনসাল জেনারেল হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন।

তাই বলে রুয়ান্ডাতে বাংলা নববর্ষ উদ্‌যাপন হবে না, তা তো হতে পারে না। বাংলা নববর্ষের মাত্র এক সপ্তাহ আগে তিন পরিবার একত্রে বসে সিদ্ধান্ত নেয়, নববর্ষ উদ্‌যাপন করতে হবে। কীভাবে? সোজা উত্তর, আশা বা ব্র্যাক অফিসে বা কারও বাসায় হবে এই আয়োজন। প্রশ্ন হলো, সবার বাসস্থানের মাঝামাঝি বা নিকটতম দূরত্বে কার বাসা হবে? ব্র্যাকের তপনদার স্বতঃস্ফূর্ত প্রস্তাব, তাঁর বাসাতেই যেন এই আয়োজন করা হয়। উল্লেখ্য, ব্র্যাকের রুয়ান্ডাপ্রধান তপনদা তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে বসবাসের জন্য অফিসের পাশেই এক বিরাট বাসা ভাড়া নিয়েছেন। এটি অন্যদের বাসার মোটামুটি কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। সুতরাং বিনা বাক্যব্যয়ে সবাই রাজি।

অংশগ্রহণকারীদের একাংশ
অংশগ্রহণকারীদের একাংশ

তারপর একে একে সকালে পান্তাভাত, দুপুরের খাবারের আয়োজন, গান গাওয়া ইত্যাদি বিষয়ে নিমেষেই সিদ্ধান্ত হয়ে গেল? পান্তা ভাতসহ আলুভর্তার দায়িত্ব নিলেন তপনদা। ইলিশের বিকল্প শার্ডিন মাছ আরিফ ভাইয়ের ব্যবস্থাপনায় আর শুঁটকি ভর্তার আয়োজন সিমিন জামিল ইত্যাদিসহ দুপুরের খাবার নিয়েও ফাটাফাটি সিদ্ধান্ত হয়ে গেল। পরিবারসহ বাসকারী সবাই একটা করে আইটেম যথা খাসি-মুরগি-ডিম-ভর্তা নিয়ে আসব এই সিদ্ধান্ত নিয়ে যার যার বাড়ি এলাম।

যথারীতি পয়লা বৈশাখের সকালে সিদ্ধান্ত মোতাবেক সবাই যার যার খাদ্যসামগ্রী নিয়ে হাজির। প্রথমেই সবার অংশগ্রহণে পান্তাভাত-আলু-শুঁটকি ভর্তা-শার্ডিন মাছের বিলাসী ভোজন সেরে অগোছালো গানের আয়োজনে অংশগ্রহণ করে প্রায় দুপুর পর্যন্ত কাটিয়ে দেওয়া।

অংশগ্রহণকারীদের একাংশ
অংশগ্রহণকারীদের একাংশ

তারপর দুপুরের খাবারের পর ব্র্যাকের রাজিব দের সুমিষ্ট কণ্ঠে ‘এসো হে বৈশাখ’ গানটির পরিবেশনা হয়। যদিও গান শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে অংশগ্রহণকারী সবাই কণ্ঠ মেলাতে একেবারে ভুল করিনি। যার গলা বা কণ্ঠ যেমনই হোক না কেন। পরে পশ্চিমবঙ্গের দাদা বিশ্বদীপের চমৎকার পরিচালনায় কুইজ অনুষ্ঠান চলে প্রায় এক ঘণ্টারও বেশি। যেখানে বঙ্গীয় বিভিন্ন বিষয়সহ আন্তর্জাতিক বিষয়াদি অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা সবার জন্যও ছিল উন্মুক্ত।

স্ত্রী ও মেয়েসহ লেখক
স্ত্রী ও মেয়েসহ লেখক

সবশেষে পাঁচমিশালী গানের আয়োজনে একে একে সবার অংশগ্রহণ ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয়। যেখানে বিভিন্ন শিল্পীর কণ্ঠে শাহ আবদুল করিম থেকে ভূপেন হাজারিকার হৃদয়কাড়া গানগুলো পরিবেশিত হয়। সঙ্গে সঙ্গে নতুন বছরটি যেন সবার জন্য সুন্দর ও সাফল্যমণ্ডিত হয়, সে কামনা করে সবার দলীয় ছবি তোলার মাধ্যমে নববর্ষের আয়োজনের সফল সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।