তাঞ্জানিয়ায় বৈশাখের রং

অংশগ্রহণকারীরা
অংশগ্রহণকারীরা

বছর ঘুরে পয়লা বৈশাখ যখন কড়া নাড়ছিল দোরগোড়ায়, সবার মনে জিজ্ঞাসা, পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান হবে তো তাঞ্জানিয়ায়?

জিজ্ঞাসাটা অমূলক ছিল না। তাঞ্জানিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশিদের সংখ্যা খুবই কম। আবার অধিকাংশই থাকেন ভারত মহাসাগরের পাড়ের শহর দারুস সালামে। যার আরেক নাম শান্তির বাড়ি। সত্যিই তাই! সাগরপাড়ের অনিন্দ্যসুন্দর শহরটিতে অল্প কজন বাংলাদেশি ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে গড়ে তুলেছেন শান্তির বাড়ি।

এবারের পয়লা বৈশাখ আমাদের জন্য এক অন্য রকম আকর্ষণ নিয়ে এসেছিল। এবার পয়লা বৈশাখ ছিল রোববার, সাপ্তাহিক ছুটি। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে একই দিনে পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন করার আবেদনই ছিল আলাদা।

সপ্তাহজুড়ে মেঘের লুকোচুরি আর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে চলছিল আমাদের প্রস্তুতি। মনের আকাশে যে আশঙ্কার কালো মেঘ উঁকি দিচ্ছিল, তা এক ঝটকায় সরিয়ে দিলাম কিলিমানজারোর ওপাশে। ও হ্যাঁ, আফ্রিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হচ্ছে কিলিমানজারো, যেটি তাঞ্জানিয়ায় অবস্থিত।

অবশেষে সেই প্রতীক্ষিত দিন। পয়লা বৈশাখে সূর্যোদয়টা মনে হয় অন্য রকম ছিল। পুরোনো বছরের সব গ্লানি আর দুঃখ ভুলে গিয়ে সূর্যি মামা হেসে উঠল স্বমহিমায়। রঙে রঙে বৈশাখ স্লোগানের সঙ্গে মিল রেখে সবাই সেজে উঠেছিল বর্ণিল রঙে। সেই রঙে মিশে ছিল বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা উষ্ণ হয়ে উঠল যখন সবাই মিলে গেয়ে উঠলাম ‘আমার সোনার বাংলা’। ভালোবাসার অনুরণন হিয়ার মাঝে বেজে উঠে ছড়িয়ে পড়ছিল প্রতিটি রক্তকণিকায়। যে শিশুরা বেড়ে উঠছে বাংলাদেশ থেকে অনেক দূরের দেশে ‘আরেক বাংলাদেশ’ হয়ে, তাদের প্রত্যেকের কণ্ঠে জাতীয় সংগীত অন্য রকম তাৎপর্য রাখে। সেই সঙ্গে ছিল তাদের হাতে আঁকা জাতীয় পতাকার প্রদর্শনী। এবারের আয়োজনের আরেকটি নতুন সংযোজন ছিল ছোটদের ছড়া বলা। সব মিলিয়ে প্রয়াস ছিল নতুন প্রজন্মকে দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার।

শুধু কি ছোটদের? বড়দের জন্যও ছিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ধাঁধার প্রতিযোগিতা। রণাঙ্গনে মুখোমুখি অবস্থানে ছেলে ও মেয়েরা। পাল্টাপাল্টি ধাঁধার মারপ্যাঁচে সবচেয়ে চোখধাঁধানো অংশ ছিল এটি।

শিশুদের হাতে আঁকা জাতীয় পতাকার প্রদর্শনী
শিশুদের হাতে আঁকা জাতীয় পতাকার প্রদর্শনী

র‍্যাফেল ড্রয়ের মাধ্যমে শেষ হওয়া অনুষ্ঠানের রেশ রয়ে যাবে আরও অনেক দিন। অপেক্ষায় থাকব আরও একটি নববর্ষের। অনুষ্ঠানে তাঞ্জানিয়ার ইউনিসেফ, ইউএনএফপিএ, ইউএনএইচসিআরসহ বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ব্র্যাক, আশা ও স্কয়ারের বাংলাদেশি কর্মকর্তারাসহ তাঞ্জানিয়ায় প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশি ব্যবসায়ী ও অন্য ক্ষেত্রে কর্মরত বাংলাদেশি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। নববর্ষের নববার্তা আসুক বারবার, এই কামনা সবার।


ইনতেখাব আদনান শাকিব: কান্ট্রি ম্যানেজার, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, তাঞ্জানিয়া।