লন্ডনে পেন্সিল ইউকের বৈশাখী আড্ডা

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

অফলাইনে পথচলার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার প্রচেষ্টায় পেন্সিল ইউকের সদস্যরা পূর্ব লন্ডনে একত্র হয়েছিলেন এক বৈশাখী আড্ডায়। এই আড্ডা আয়োজন করা হয়েছিল পূর্ব লন্ডনের শেলবি স্ট্রিট কমিউনিটি সেন্টারে গত রোববার (১৪ এপ্রিল)। যুক্তরাজ্যের ‘সব গুণীজন পেন্সিলে, মেধা ও মননে’ এই স্লোগানের সঙ্গে নাচ–গান ও কবিতায় বাংলাদেশের রমনা বটমূলের বৈশাখ উদ্‌যাপনই যেন হলো সেদিন লন্ডনের মাটিতে। সদস্যদের নিজ হাতে তৈরি দেশীয় প্রতীক যেমন ঢোল, ফুল, মুখোশ, প্যাঁচা ইত্যাদি রংবেরঙের সজ্জায় সাজানো হয় কমিউনিটি সেন্টারের ভেতরটা।

বৈশাখী আড্ডার মূল আকর্ষণ ছিল আমাদের খুদে সদস্যরা। বৈশাখী সাজে সেজে আসা খুদে পেন্সিলরদের অংশগ্রহণ ছিল প্রশংসনীয়। সব বয়সী খুদে সদস্যদের জন্য বাড়তি আকর্ষণ ছিল ছোট একটি বৈশাখী উপহার ব্যাগ।

সমবেতদের একাংশ
সমবেতদের একাংশ

পেন্সিলর জলকন্যা বৃষ্টি ও অ্যানি সুস্মিতার সঞ্চালনায় সাংস্কৃতিক পর্বের শুরুতেই সমবেত কণ্ঠে ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ গানটির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী পেন্সিলররা নতুন বছরকে স্বাগত জানান। এ ছাড়া সাদিয়া গাজী অন্তরার সম্পাদনায় ভিন্নধর্মী সংবাদ পাঠ করেন সাদিয়া টুম্পা ও হিমু। বৈশাখের আমেজে শেলবি হলের এক কোনায় সাজানো হয় দেশীয় খাবারের পসরা। পেন্সিলররা সেখানে পরিবেশন করেন নিজেদের হাতের তৈরি মোয়া, মুরালি, পিঠা, মিষ্টি, দই ইত্যাদি। এ ছাড়া ছিল পেন্সিল পাবলিকেশনসের প্রকাশিত বই, কে ক্র্যাফটের করা পেন্সিলের লোগোযুক্ত শাড়ি ও টি শার্ট।

পেন্সিলের পরবর্তী পরিকল্পনা ঘোষণা ও পেন্সিলসহ পেন্সিলের সব অ্যাডমিন, মডারেটর ও সব নিবেদিত পেন্সিলরদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন যুক্তরাজ্য অ্যাডমিন প্যানেল।

সমবেতদের একাংশ
সমবেতদের একাংশ

উল্লেখ্য, পেন্সিল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জন্ম নেওয়া সৃজনশীল একটি প্রতিষ্ঠান। মাত্র দুই বছরের কিছু বেশি সময় এর পথ চলা। এ সংগঠনে যখন কেউ যোগদান করেন, সবাই তাঁকে স্বাগত জানান ও আপন করে নেন। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় তৈরি হচ্ছে দারুণ শিল্পপ্রবণ পেন্সিল পরিবার।

পেন্সিলের যাত্রায় বাংলাদেশে এখন পেন্সিল ফাউন্ডেশন সগৌরবে কাজ করে চলছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশের সীমানা পেরিয়ে এই গ্রুপটির জনপ্রিয়তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে এই প্রথম কোনো অনলাইনভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম অফলাইনেও তাদের কাজ শুরু করেছে।

অনেক প্রতিভার জন্ম দিয়েছে এই সংগঠন। যিনি আগে কখনো লেখেননি, পেন্সিলের সান্নিধ্যে এসে তিনিই লেখক হয়ে উঠেছেন। যিনি কোনো দিন রং নিয়ে খেলা করেননি, তিনিই রংতুলিতে নতুন করে নিজেকে আবিষ্কার করতে শিখেছেন। ক্যামেরা আর মুঠোফোনে নানা অপশন ঘেঁটে কেউ হয়ে উঠেছেন দুর্দান্ত ফটোগ্রাফার। সংগঠনের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে গুণী পেন্সিলররা শিল্পের বিভিন্ন শাখায় বিপুল সম্ভাবনার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। গল্প, কবিতা, গান ও আলোকচিত্র সব মাধ্যমেই দারুণ অবদান রাখছেন। আলোকচিত্রের সবচেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী ফুড ফটোগ্রাফিতে তাঁরা বিরল দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন।

গত বছর জাগৃতী প্রকাশনী থেকে সংগঠনের সেরা ১৩ জন লেখকের বই প্রকাশ করে প্রথমবারের মতো সাহিত্য অঙ্গনে মহাসমারোহে পদার্পণ করেছে পেন্সিল। আর এ বছর অমর একুশে বইমেলায় পেন্সিল ফাউন্ডেশনের পেন্সিল পাবলিকেশনসের সূচনালগ্নেই নবীন ও প্রতিষ্ঠিত লেখকদের ৫২টি বই প্রকাশ করেছে।

খুদে সদস্যরা
খুদে সদস্যরা

এ বছর অমর একুশের বইমেলায় বিক্রির তালিকায় পেন্সিলের লেখকদের অনেকগুলো বই ছিল শীর্ষস্থানীয়। এ বছর এবং গত বছর ঢাকা ও চট্টগ্রামে বইমেলায় পেন্সিল স্টল দিয়েছিল। পরপর দুবার একুশের বইমেলায় পেন্সিলের চট্রগ্রামের স্টলটি সেরা স্টলের খেতাব অর্জন করে। এ আনন্দ বিশ্বজয়ের মতো। বই ও বই পড়ার জন্য পেন্সিলের এ উদ্যোগ সবার মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছে।

বাংলাদেশি পেন্সিলরদের এই জয়ের রেশ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দুনিয়াতে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখন পেন্সিল পরিবার দৃঢ় তাদের প্রতিভা বিকাশে ও সুস্থ শিল্পসাহিত্য প্রসারে।

খুদে সদস্যরা
খুদে সদস্যরা

এরই ধারাবাহিকতায় শিল্পসাহিত্যে আগ্রহী লন্ডন পেন্সিলররাও একত্র হন। শুরুটা অনলাইনে একটি চ্যাট রুম দিয়ে। পরবর্তী সময়ে একটি সফল আড্ডার আয়োজন ২০১৭ সালের ৯ ডিসেম্বর। ধীরে ধীরে এর প্রচার ও প্রসারের ধারাবাহিকতায় এবং এক দল স্বপ্নবাজ পেন্সিলরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আজ পেন্সিল যুক্তরাজ্যেও একটি নিবন্ধিত অলাভজনক সংগঠন। এ বছরের মার্চে এই রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে যুক্তরাজ্যে পেন্সিল এখন থেকে শুধুই ফেসবুক গ্রুপ নয় বরং একটি পরিপূর্ণ সংগঠনের মর্যাদা পেল। যেকোনো ধরনের সাংগঠনিক কাজ পরিচালনা এখন সহজ ও সুন্দর হবে। এই নিবন্ধনের মাধ্যমে পেন্সিল গ্লোবালের ধারণাটিও বাস্তব আকার পেতে শুরু করেছে। ফেসবুক থেকে জন্ম নেওয়া একটা গ্রুপের এভাবে একাধিক দেশে সরকারি নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়া সম্ভবত এক অনন্য এবং সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী ব্যাপার। পেন্সিল যুক্তরাজ্যের পরিচালনা পরিষদে আছেন মুন্নি লাল, মুনতাসীর রুবেল, নিজাম উদ্দিন, কানিজ ফাতেমা টুশি ও এশরার লতিফ!

যুক্তরাজ্য পেন্সিলের মূল উদ্দেশ্য হলো নতুন প্রজন্মের সামনে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি, কৃষ্টি, ঐতিহ্য, সর্বোপরি শিল্প–সাহিত্যের প্রতিটি অর্জন তুলে ধরা। এর সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের হৃদয়ে দেশপ্রেম জাগ্রত করা। যুক্তরাজ্যের পেন্সিলরদের মধ্যে একটা মানসিক সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে। যার ফলে পেন্সিল লন্ডন থেকে আয়োজিত বেশ কটি সফল আড্ডার মাধ্যমে মাত্র ২০ জন থেকে শুরু করে এখন এর সদস্যসংখ্যা প্রায় ৫০০!

খুদে সদস্যরা
খুদে সদস্যরা

পেন্সিল যুক্তরাজ্যের সদস্যরা মাত্র দেড় বছরেই লন্ডনে বড় বড় দুটো অনুষ্ঠান দারুণ দক্ষতা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে আয়োজন করতে সক্ষম হয়েছেন। এতে অংশগ্রহণ করেছিলেন ইংল্যান্ডের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পেন্সিলরস। প্রথমটি ছিল লন্ডনে টাওয়ার হ্যামলেটের পরিচালনায় পেন্সিল বৈশাখী স্টল ও অন্যটি ব্রাডি আর্ট সেন্টারে বিজয় দিবস উদ্‌যাপন।