স্বাগতম রেইওয়া

সংগৃহীত
সংগৃহীত

সম্রাট, সিংহাসন, রাজা, রানি, যুবরাজ—এই শব্দগুলো একবিংশ শতাব্দীর এই পুঁজিবাদের যুগে কালের স্রোতে প্রায় হারিয়ে গিয়েছে। এশিয়ায় ব্রুনেই দারুস সালামসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে এখনো ‘রাজতন্ত্র’ বিদ্যমান। এর বাইরে আরও কয়েকটি দেশে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্র বিদ্যমান আছে। এ রকমই একটি দেশ হলো জাপান। জাপানের সম্রাটের রাজনৈতিক কোনো ক্ষমতা নেই। কিন্তু তিনি দেশের সর্বোচ্চ প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হন, অনেকটা ইংল্যান্ডের মতো। বিশ্বে কোনো কোনো দেশে রাষ্ট্রপ্রধানকে রাজা-রানি নামে ডাকা হয়। যেমন ইংল্যান্ডের রানি এলিজাবেথ ইত্যাদি। আবার মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবে বাদশাহ, কাতার ও কুয়েতে আমির এবং ওমানে সুলতান। বর্তমান বিশ্বে কেবল জাপানেই ‘সম্রাট’ পদবি রয়েছে।

যা হোক, এ বছর জাপানের বর্তমান সম্রাট আকিহিতোর ছেলে যুবরাজ নারুহিতো সিংহাসনে আরোহণ করতে যাচ্ছেন কাল ১ মে থেকে। এর মধ্য দিয়েই জাপান প্রবেশ করতে যাচ্ছে আরেকটি নতুন যুগ ‘রেইওয়া’-তে। জাপানি রেইওয়া অর্থ ‘শৃঙ্খলা ও শান্তি’। আসলে জাপানে একেকটি সম্রাটের শাসনকাল মানে হলো একেকটি যুগের শুরু। অনেকটা আমাদের দেশে যেমন আগেকার দিনে বিভিন্ন রাজাদের শাসন আমলকে বিভিন্ন নামে ডাকা হতো। মোগল যুগ বা পাল যুগ, ব্যাপারটা কিছুটা সেই রকম। জাপানে প্রত্যেক সম্রাটের সময় তাঁর যুগের একটি নাম থাকে আর সেই নাম ওই সময়ের মুদ্রা, সংবাদপত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও দাপ্তরিক সব কাগজপত্রে মুদ্রিত হয়।

জাপানের মুদ্রা। সংগৃহীত
জাপানের মুদ্রা। সংগৃহীত

প্রায় প্রত্যেক সম্রাটের শাসন আমলে কোনো না কোনো ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন করা হয়। যেমন নতুন যুগ উপলক্ষে জাপানে বদল হতে যাচ্ছে জাতীয় কাগুজে মুদ্রায় মুদ্রিত প্রতিচ্ছবি, যা ২০২৪ সালে বাজারে আসবে। অনেক দেশের মুদ্রায় দেখা যায় জাতির জনক বা রাষ্ট্রপ্রধানদের ছবি। কিন্তু জাপান এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। এ দেশের নোটে কোথাও সম্রাটের ছবি নেই। বর্তমানে এ দেশের সর্বোচ্চ মূল্যমান নোট ১০ হাজার ইয়েনের নোটে ছবি আছে ইউকিচি ফুকুজাওয়ার (১৮৩৫-১৯০১)। তিনি একজন বড় মাপের শিক্ষাবিদ ও দার্শনিক ছিলেন। এবার একই নোটে ছবি দেওয়া হবে শিবুসাওয়া এইইচির (১৮৪০-১৯৩১)। তিনিও ছিলেন একজন বড়মাপের শিল্পপতি, শিল্প উদ্যোক্তা ও সমাজসংস্কারক। কবি, লেখক, বিজ্ঞানীদের ও এই দেশ সম্মান জানিয়েছে তাদের মুদ্রা ও বিভিন্ন মাধ্যমে। যেমন ৫০০০ ইয়েনের নোটে বর্তমানে ছবি আছে বিখ্যাত কবি ও লেখক ইচিয়ু হিগুচির (১৮৭২-১৮৯৬)। আর ১০০০ ইয়েনের নোটে ছবি আছে হিদিও নোগুচির (১৮৭৬-১৯২৮) যিনি একজন বিখ্যাত ব্যাকটেরিয়া বিশেষজ্ঞ ছিলেন।

আগামীর ১০০০ ইয়েনের নোটেও একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানীর ছবি থাকবে। আসলে জাপানে ক্ষমতায় যিনিই থাকুন না কেন, তারা তাদের সেরা সন্তানদের ঠিকই মূল্যায়ন করেছে, আর এ কারণেই হয়তো এখানে সেরা বিজ্ঞানী, গবেষক, শিল্প উদ্যোক্তারা জন্ম নেয়।

সে যা হোক, সম্রাট আকিহিতোর যুগের নাম ছিল ‘হেইসেই’। যার অর্থ ‘শান্তি অর্জন’। বিগত সম্রাটের শাসন আমলে জাপান বিশ্বে শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে। আশা করা হচ্ছে, বর্তমান সম্রাটের যুগেও জাপান তার কাঙ্ক্ষিত শৃঙ্খলা ও শান্তি অর্জন করবে। জাপানের নতুন যুগকে জানাই স্বাগতম। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্কও হোক আরও বন্ধুত্বময়।

খায়রুল বাশার: পিএইচডি গবেষক, সাগা ইউনিভার্সিটি, জাপান।