সাস্টিয়ান পুনর্মিলনীতে এক দিন

সাস্টিয়ান পুনর্মিলনী
সাস্টিয়ান পুনর্মিলনী

আমাদের তারুণ্যের প্রতীক সেই চিরসবুজ স্যার ও ম্যাডামের সঙ্গে কয়েক দিন আগে সারা দিন কাটালাম। সময় বদলে যায়, কিন্তু স্যার আর ম্যাডাম সেই আগের মতোই আছেন। চির চেনা ম্যাডামের সেই ভুবন ভোলানো হাসি আর আন্তরিক কথাবার্তায় কিছুক্ষণের জন্য চলে গিয়েছিলাম আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে।

গত ২৭ এপ্রিল (শনিবার) সিডনির লিবার্টি হিল ক্রিশ্চিয়ান সেন্টারে সাস্ট অ্যালামনাই ইন অস্ট্রেলিয়া ইঙ্কের আয়োজনে সাস্টিয়ান রিইউনিয়ন ২০১৯ অনুষ্ঠিত হলো। এবারের আয়োজন ছিল পঞ্চমবারের মতো আয়োজন। অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বেশির ভাগ সাস্টিয়ান (শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী) এসেছিলেন সপরিবার। আমাদের এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হয়ে এসেছিলেন জাফর ইকবাল স্যার ও ইয়াসমিন ম্যাডাম।

অনেক দিন পর স্যার আর ম্যাডামের কথা শুনলাম। আরও ভালো লাগছিল নিজেদের ডিপার্টমেন্ট ও অন্য ডিপার্টমেন্টের ভাইয়া-আপুদের সঙ্গে দেখা হলো এবং সবাই অনেক আন্তরিক ছিলেন। সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে সাস্টের এই আয়োজন সত্যিই প্রশংসনীয় ও অতুলনীয়। আমাদের সাস্টিয়ানরা যেখানেই যান, সেখানেই ইতিহাস সৃষ্টি করে।

সাস্টিয়ান পুনর্মিলনীতে জাফর ইকবালের সঙ্গে প্রাক্তন ছাত্রীরা
সাস্টিয়ান পুনর্মিলনীতে জাফর ইকবালের সঙ্গে প্রাক্তন ছাত্রীরা

জাফর ইকবাল স্যার ও ইয়াসমিন ম্যাডাম আমাদের সামনে যখন কথা বলছিলেন, মনে হচ্ছিল আমি ফিরে গিয়েছি সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। সেই এক কিলো, ডি বিল্ডিং, শহীদ মিনার। আমি যদিও নৃবিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলাম, আমরা সেভাবে স্যারের ক্লাস করিনি, কিন্তু আমি সোপাতে ছিলাম আর সেই সময় স্যার ছিলেন সোপার উপদেষ্টা। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো তাঁর কথা শুনতাম। আমরা মাইনর সাবজেক্টে যখন কম্পিউটার সায়েন্স পড়ছিলাম, স্যার একদিন ক্লাস করিয়েছিলেন যত দূর মনে পড়ে। যদিও সব সময় অন্য স্যার ক্লাস নিতেন।

সকালে ক্লাস থাকলে প্রায়ই দেখতাম আমরা যখন বাস থেকে নামছি, এই রোমান্টিক জুটি হেঁটে আসছেন ক্লাস নেওয়ার জন্য। ম্যাডাম তাঁর বইয়ের কথা বলছিলেন, সাস্টের ২২ বছর। ম্যাডাম ও স্যারের কথা আমাদের চলার পথে অনেক উৎসাহ জোগায়। ম্যাডাম বলছিলেন, কীভাবে তাঁরা শূন্য থেকে সংসার শুরু করেছিলেন। আমেরিকা ছেড়ে বাচ্চাদের নিয়ে সিলেট এসে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করলেন এবং ছাত্রছাত্রীদের টানে এত বছর সাস্টে শিক্ষকতা করলেন। ছাত্রীহল নিয়েও অনেক স্মৃতিচারণা করলেন।

নৃবিজ্ঞানের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা
নৃবিজ্ঞানের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা

শ্রদ্ধেয় জাফর স্যার যখন কথা বললেন, আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে এবং সাস্ট ও দেশকে যেন ভুলে না যাই। দেশের রাজনীতি না করে এখানকার মূলধারার রাজনীতির সঙ্গে চলার জন্য। এখানেই কেউ একজন সিনেটর হবে একদিন, কেউ হবে বিলিয়নিয়ার। স্যার বলছিলেন, ‘আমরা শুধু তোমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথ বলে দেব, সব তোমরাই করবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা পায়ে চলা রোবট বানিয়েছে। সামনে অনেক কিছুই করবে।’

সেদিন শুনলাম স্যার-ম্যাডাম রিটায়ার করেছেন। সময় তো তার নিয়মে বয়ে যাবে। সেটা থামানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। আমাদের চিরতরুণ রোমান্টিক জুটি সব সময় এমনই থাকুন, সেই কামনা করি। আর আমাদের সাস্টিয়ানদের এই আয়োজন যেন প্রতিবছর হয়, যাতে আমরা সবাই বছরে একটি দিন এ রকম আনন্দে কাটাতে পারি।

জয়তু সাস্ট, জয়তু সাস্টিয়ান।